রংতুলিতে সবার জন্যে শাড়ি সাজান সোনিয়া

হ্যান্ডপেইন্টেড শাড়ি তৈরি হয় সোনিয়া’স রংতুলিতে।

২০১৫সালে মাস্টার্স শেষ করি। এরপর চাকরির জন্য টুকটাক ট্রাইও করেছিলাম। আমার আসলে চাকরি করতে ভালো লাগতো না মন থেকেই। আবার পড়াশুনা শেষ করে বেকার থাকার কোনো ইচ্ছাও ছিল না। কিন্তু কোন চাকরি পেলাম না, মন খারাপ হতে লাগল খুব। অনেক কিছু ভাবতাম, কিছু করা যায় কিনা।

২০১৭ সালে স্কুলের এক বান্ধবী আমাকে অনলাইন বিজনেসের আইডিয়াটা দিল। আমার ছোট বেলা থেকেই আঁকাআঁকির অভ্যাস ছিলো। হ্যান্ডপেইন্টের শাড়ির প্রতি আমার ভীষণ একটা দুর্বলতা ছিল। অনলাইনে মাঝে মাঝেই আমি হ্যান্ডপেইন্টের শাড়ি দেখতাম, খুব কিনতে ইচ্ছা হতো। আমার বান্ধবীর প্রস্তাবটা শোনার পরেই ঠিক করি আমি হ্যান্ডপেইন্টের শাড়ি নিয়ে কাজ করবো।

কিন্তু শুরু করবো বললেই তো শুরু করা যায় না। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া মেয়েরা এমন শাসনে আর আদরে বড় হই যে, অনেক মেয়েই তাদের প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনা। আমার বেলায়ও তাই, প্রথমে বাসা থেকে বের হতে দিতে রাজি হয়নি। তারপর যারা এ ধরণের কাজ করে অনলাইনে তাদের জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু কোন লাভ হলো না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ফেব্রিক কিনতে গিয়ে। দোকানদার আমাকে মসলিন ফেব্রিক বলে, টিস্যু ধরিয়ে দিয়েছিল। রং কিনতে, ফেব্রিক কিনতে আমার বান্ধবী আমাকে খুব সাহায্য করেছিল।

ঐ টিস্যু কাপড়েই আমি পেইন্ট করলাম। শাড়িটা আমি শখ করে করেছিলাম, যদিও নিজের করা প্রথম শাড়ি আমার পরা হয়নি। ছোট বোন শাড়িটা পরলো। তারপর তার ছবি তুলে দিলাম। ছোট বোনের ছবিগুলো আমি আমার ফেইসবুকে পোস্ট করলাম। আমার ফেইসবুকে থাকা অনেক ফ্রেন্ড শাড়িটা দেখে আমাকে ইনবক্সে নক করলো। আর আমার পরিচিত এক আপু, এই শাড়ি করে দেওয়ার জন্য আমাকে ইনবক্সে অর্ডার দিলেন। আমিও সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম। আপুকে আমি শাড়িটা করে দিলাম। শাড়ি পেয়ে আপুতো ভীষণ খুশি আর অনেক পছন্দ করেছিলেন।

এরপর আমি ঠিকঠাক মতো ফেব্রিক আনলাম আর রংও বেশি করে কিনে আনলাম। কিছু শাড়ি পেইন্ট করলাম। শাড়িগুলোর ছবি ফেইবুক পেজে দেওয়া শুরু করলাম। আমার করা শাড়িগুলো দেখে আবারও অনেকে ইনবক্সে নক দিতে শুরু করল। সবার এতো এতো মেসেজ দেখে বুঝলাম, আমার শখের হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার সময় হয়েছে।

তারপর থেকে এই পথচলা, যেতে হবে বহুদূর। অনেকেই এখন নক করেন অর্ডার করেন। দিনের নির্দিষ্ট সময় এখন আমাকে রুটিন করে কাজ করতে হয়। আমি জানি এখন আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। যেমন,এই করোনা পরিস্থিতিতেও ফেব্রিক সংগ্রহ করতে মার্কেটে যেতে হয়, আর সারাদিন ঘুরে ঘুরে নিজেকেই মার্কেট প্রাইস যাচাই করে ভালো কোয়ালিটির ফেব্রিক কিনতে হয়। উদ্যোক্তা হওয়া মানে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে।

আমার খুব ইচ্ছে,আমার হ্যান্ডপেইন্টের যে পন্য আছে, তা একটা ব্র্যান্ড হবে। দেশীয় ফেব্রিকে পেইন্ট করি আমি। দেশি পণ্যের ব্যবহার যেন বাড়ে এইটা আমার স্বপ্ন।

এভাবেই নিজের গল্প বলছিলেন হাতে আঁকা শাড়ির উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান রংতুলি’র প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া আক্তার। তিনি আরো বলেন, ‘কাজটা শুরু করেছি বছরখানেক। তাই লাভ ক্ষতির হিসাবটা সেভাবে করা হয়নি। এই উদ্যোগটাকে আমি এগিয়ে নিতে চাই। তাই আপাতত অর্ডার কালেক্ট করা, কাস্টমারের সাথে সংযোগ তৈরি করাটা এখন প্রধান কাজ।

আর করোনাকালিন সময় বলে আমি কাজে কোন রকম ঢিলেমি করিনি। কাপড় সংগ্রহের কাজটা কিছুটা রিস্কি ছিল। তবে এই সময়ে বেশ কিছু অর্ডার ছিল আমার। সেগুলোই করলাম। আমার পরিকল্পনাটাকে আক্ষরিক অর্থে কোন প্রতিষ্ঠানে এখনো রূপ দিতে পারিনি। তাই কোন কর্মী নিয়োগ বা অন্য কারো কর্মসংস্থানও তৈরি হয়নি।

তবে অনেক সময় কাজের চাপ থাকলে ছোট বোন বা বাড়ির অন্যদের সহযোগিতা নিই। প্রতিবন্ধকতা বলতে এখন তেমন কিছু দেখি না। শুরুতে পরিবারই ছিল প্রতিবন্ধকতা। মা-বাবা বলতো, তুমি পারবা না। তুমি মেয়ে মানুষ, এসব কাজের জন্য বাইরে যেতে হবে। তার চেয়ে চাকরি চেষ্টা করো। এখন তারাই প্রয়োজনে সহযোগিতা করে।

সোনিয়ার ফেইসবুক পেইজের লিংক: সোনিয়া’স রংতুলি

শেয়ার করুন