অনলাইনে শিল্পীদের আঁকা ছবির মার্কেটপ্লেস ‘পেইন্টেড থটস’

পেইন্টেড থটস-টিমের সদস্যরা।

দু’জন কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আরেকজন স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক। সামিহা তাহসিন, মাইশা নূর  এবং আদিবা জামাল এষার বয়স, পেশা ও ক্যারিয়ারে পার্থক্য থাকলেও একটা জায়গায় এই তিনজনেরই প্রচণ্ড মিল। সেই মিল থেকেই তিনজনের একসাথে এক নতুন পথে চলা শুরু।  রঙের দুনিয়ায় মেতে থাকা এই তিন কন্যার উদ্যোগ ‘পেইন্টেড  থটস’ নিয়েই আজকের গল্প।

রং তুলি নিয়ে খেলা করতে করতেই সামিহা আর মাইশার ছবি আঁকা শুরু। ছবি আঁকার  জন্য তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও আঁকার প্রতি ভালবাসা থেকেই এই দুই বোনের ছবি আঁকার চর্চা চলছিল। এদিকে আদিবা ছোটবেলা থেকেই আজিমপুরের লেডিস ক্লাবে ছবি আঁকা শিখেছিলেন। পেয়েছেন একাধিক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরষ্কারও। কিন্তু পেইন্টেড  থটস এর শুরুটা হয় ২০১৭ সালে মূলত সামিহা আর মাইশার হাত ধরে। সামিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রজেক্টের কাজের খাতিরে খুলতে হয়েছিল একটা ফেইসবুক পেইজ। সেটা ছিল সামিহার আঁকা কিছু চিত্রকর্ম দিয়ে।

“ঐ পেইজ দেখে আমার বেশ কিছু বন্ধু ওখান থেকে ছবি কিনে নিলো। এমনকি আরও কিছু  অর্ডারও পেলাম। তখন আমি আর মাইশা আমাদের শখটাকে  ব্যবসায় রূপ দেয়ার কথা প্রথমবারের মত চিন্তা করলাম। কিন্তু তখন অনলাইন ব্যবসার ব্যাপারে কিছুই জানতামনা। পেইজ ব্যবস্থাপনা, ডেলিভারি, মার্কেটিং, পোস্টিং কোনও কিছুতেই আমাদের দক্ষতা ছিলনা। ধীরে ধীরে সবই শিখলাম। আর বাজার যাচাই করে দেখলাম যে বিভিন্ন উক্তির চিত্রায়নের চাহিদা অনেক। এছাড়াও ফ্লোরাল মোটিফে মসজিদ, ধর্মীয় গ্রন্থের উক্তির  চাহিদাও অনেক। এগুলো আমরা ফ্রেমে বাঁধিয়ে সরবরাহ করতে থাকি। পরবর্তীতে তেলরঙ, ক্যানভাসে এক্রিলিক রঙ যোগ করলাম আমাদের কাজে। এছাড়াও আমাদের আরও একটা সেবা আছে যেখানে আমরা গ্রাহকের ঘরের দেওয়ালের রং, ডেকোরেশনের সাথে মিল রেখে গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী কাস্টমাইজড ছবি এঁকে দেই।

নিজেদের এবং গ্রাহকের ভাবনার জগতকেই মূলত আমরা আমাদের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তলার চেষ্টা করি। আর এই ভাবনার চিত্রায়নের ধারনা থেকেই আমাদের উদ্যোগের নাম ‘পেইন্টেড  থটস’।”- বলছিলেন সামিহা।

“আমাদের মত রং তুলির এই খেলা খেলতে অনেকেই ভালবাসে। অনেকে হয়ত এই প্রতিভাকে উপার্জনের ক্ষেত্রেও কাজে লাগাতে চায়। কিন্তু একটা উপযুক্ত প্ল্যাটফর্মের অভাবে তা হয়ত অনেকেরই করা হয়ে ওঠেনা। আমাদের পেইন্টেড থটস হতে পারে সেই প্ল্যাটফর্ম। এখানে এমন অনেক শিল্পী তাদের আঁকা ছবি বিক্রি করতে পারে। সেক্ষেত্রে মূল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পেইন্টেড থটস পায় ছবিপ্রতি ৫ ভাগ কমিশন। আগ্রহী যেকোন শিল্পী পেইজে মেসেজ দিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন” – জানান সামিহা।

এখন পর্যন্ত পেইন্টেড থটস তাদের কাজ নিয়ে বেশ কিছু ইভেন্টে অংশ নিয়েছে এবং প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছে। সর্বশেষ নারী দিবসে সরাসরি অংশ নেন এর উদ্যোক্তারা। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে পেইন্টেড থটস তাদের কাজ নিয়ে অনলাইনেও ছিল সরব। “শুধু আর্থিক নয়, দমবন্ধ সময়ে নিজেদের আত্মার খোরাক যোগায় আমাদের এই কাজ।”- বলছিলেন পেইন্টেড থটসের আরেক সদস্য আদিবা।

নিজেদের মূল পেশার বাইরে একেবারেই ভালবাসার কাজ করতে পারাটা নিজেদের সৌভাগ্য বলেই মনে করেন এর সদস্যরা। বহু শিল্পীর সমন্বয়ে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে একটা সংঘ। এই সংঘ উন্মুক্ত ভাবনার, মনের মুক্তির আর অনেক অনেক রঙের।

পেইন্টেড থটস-এর ফেইসবুক পেইজ: পেইন্টেড থটস

শেয়ার করুন