তুমি গলার মালা

'তুমি গলার মালা'র দুই উদ্যোক্তা আনিকা বিনতে কাসেম এবং আফসানা জেরিন নাবিলা

ছেলেবেলার খেলার বন্ধু না, করা হয়নি একসাথে পড়ালেখাও। কিন্তু ভাগ্য তাদের মিলিয়ে দিয়েছিল সংগঠন করার পথ ধরে। সেই থেকে বন্ধুত্ব। নানা কাজের মাধ্যমে পারস্পরিক বোঝাপড়াটাও বেশ একটা পাকাপোক্ত অবস্থান নিয়ে নিল। একসময় দুজনের পথ আবার আলাদা হলো। দুজন পাড়ি জমালেন দুই দেশে। কিন্তু ঐ যে বন্ধুত্বের সূতোর টান, তাতে আবার নাড়া পরলো যখন দুজন প্রায় একই সাথে কাজ থেকে বিরতি নিলেন। ঠিক সে সময়টায় এসে দুই বন্ধুতে মনস্থির করলেন ব্যবসা করবার। আনিকা বিনতে কাসেম আর আফসানা জেরিন নাবিলার বন্ধুত্বের এই বুননেই গাঁথা হয়ে গেল এক গল্প। যার নাম ‘তুমি গলার মালা’।

নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেয়া যে কেউই তাদের কৈশোর স্মৃতি হাতড়ে আর সি কোলার একটা বিজ্ঞাপনের গানের কথা মনে করতে পারবেন। ‘তোমার জন্য মরতে পারি, ও সুন্দরী তুমি গলার মালা’-এরকম ছিল গানের শুরুটা। দুই বন্ধুর পছন্দের এই জিঙ্গেলের সূত্র ধরেই তাদের প্রিয় উদ্যোগের নাম হয়ে গেল ‘তুমি গলার মালা’। 

এর থেকে সঠিক নাম আর কী-ই বা হতে পারতো! কেননা গলার মালা দিয়েইতো আনিকা-নাবিলার উদ্যোগের পথ চলা শুরু। ব্যবসার জন্য কেন গহনাই বেছে নেওয়া? এর উত্তরে নাবিলা বলেন, “বাজার যাচাই করে আমরা তখন ট্রেন্ড টা ফলো করছিলাম। দেখলাম যে সব সময়ই গহনার কদর থাকে শীর্ষে। মানুষ প্রতিনিয়তই অলংকার কেনে। আনিকার ছিল জুয়েলারির প্রতি আগ্রহ এবং এ ব্যাপারে ওর রুচিও চমৎকার। আর আমার ছিল ব্যবসায়িক জ্ঞান। এই দুই মিলে ২০১৬ সালে প্রথমে আমাদের নিজেদের পরিমন্ডলে এবং পরবর্তিতে এর বাইরেও ‘তুমি গলার মালা’কে আমরা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হই।”

“আমরা স্বল্প আকারে নিজেরা ডিজাইন করলেও আমাদের বেশিরভাগ গয়না আসে থাইল্যান্ড, চায়না, আফ্রিকা, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার কারুশিল্পীদের কাছ থেকে। এসব ডিজাইন আমাদের ভেন্ডাররা সংগ্রহ করে আমাদের কে পাঠান।”- জানান আনিকা। 

‘তুমি গলার মালা’ তে পাওয়া যাবে এমনই নানারকম ডিজাইনের গহনা

অনলাইন উদ্যোগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কথা বলার সময় নাবিলার অন্যরকম উত্তর,-“ আমরা অনলাইনে নারী উদ্যোক্তাদের উপস্খিতিকে খুবই ইতিবাচক জায়গায় দেখতে পাই। নারীর ক্ষেত্রে পেশা হিসেবে ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা বা এ সংক্রান্ত চ্যালেন্জ নানাবিধ হলেও, অফলাইনের চেয়ে অনলাইনেই এ চ্যালেন্জ তুলনামূলক কম। এখানে নারীদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। নারী উদ্যাক্তাদের একটা প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনা গেলে উদ্যোগগুলো আরো ত্বরান্বিত হবে।।” 

“এছাড়াও ট্রেড লাইসেন্স এবং নিবন্ধনের সব ধাপগুলো আরো সহজ এবং গতিশীল করাও জরুরী। এক্ষেত্রে সবকিছু অনলাইনে করা গেলে প্রক্রিয়াগুলো আরো কার্যকর হতে পারে। এতে করে নিবন্ধনের ব্যাপারে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়বে এবং অনলাইনে ক্রেতা-উদ্যোক্তার পারস্পরিক আস্থাও বৃদ্ধি পাবে।”- যোগ করলেন আনিকা।

ক্রেতাদের সাথে আস্থার সম্পর্ক গঠনের ব্যাপারে প্রথম থেকেই যত্নশীল ‘তুমি গলার মালা’। আনিকার ভাষায়,”অনলাইনে ক্রেতা-বিক্রেতার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়না। আর তাই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটতে পারে। তাই ক্রেতার সুবিধা-অসুবিধা বা পরামর্শ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

অনন্য সব ডিজাইনের গহনার জন্য ‘তুমি গলার মালা’ হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়

অনেক অনলাইন উদ্যোক্তাদের বলতে শোনা যায় যে উদ্যোগের কাজের জন্য লোক নিয়োগ করা কঠিন। তাই সব কাজ একা হাতেই সামলান। এ ব্যাপারে আনিকা-নাবিলার পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা জানালেন তারা,- “ব্যবসার সাফল্য, দুর্বলতা, চ্যালেন্জ, সুযোগ বিশ্লেষণ করে যখন উদ্যোক্তা একটা মার্জিন সেট করে, তখন সহজেই কর্মচারী বা সহযোগী নিয়োগ করা সম্ভব হয়। লোক দরকার হলে নিতে হবে। তা না করলেই বরং শ্রম, অর্থ, সময়ের অপচয় হয়। নিজের উদ্যোগেকে কোথায় দেখতে চাই তার উপর নির্ভর করে এ সিদ্ধান্তগুলো।” 

দুই উদ্যোক্তার বাইরেও ‘তুমি গলার মালা’তে কাজ করছেন আরেকজন। তিনজনের এই দল দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে উদ্যোগের কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। আপাতত আমদানী নির্ভর হলেও ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কারুশিল্পকে বিভিন্ন মাধ্যমে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেয়ার স্বপ্ন দেখেন এই দুই তরুণ উদ্যোক্তা। আর তাদের স্বপ্নের সারথী হিসেবে ‘তুমি গলার মালা’র গ্রাহকদেরকেই পাশে চান তারা। 

ফেইসবুক পেইজের লিংকঃ https://www.facebook.com/tumigolarmala

শেয়ার করুন