দেশীয় ঐতিহ্যের সবই মিলবে উহিনি বাজারে

উহিনি বাজার-এর উদ্যোক্তারা।

শেরপুরের তুলসীমালা চাল ছিল একসময় দেশবিখ্যাত। অত্যন্ত সুগন্ধী এবং অল্প সময়ে রান্না হয়ে যাওয়া এ চাল সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, জমিদার কিংবা ইংরেজদের উপঢৌকন হিসেবে পাঠানো হতো। উহিনি বাজারের উদ্যোক্তা, শেরপুরের মেয়ে নাজিফা আনজুমের বিয়েতে এমনকি তার বংশের অনেকের বিয়ে বা বড় কোন অনুষ্ঠানেও তুলসীমালা চাল দিয়েই পোলাও রান্না হয়ে আসছে। আর তাইতো নাজিফা যখন নিজের ব্যবসার কথা চিন্তা করলেন, তখন তার জেলার এই বিখ্যাত কিন্তু প্রায় হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এই চাল দিয়েই তার নতুন যাত্রা শুরু করেন। 

উহিনি অর্থ সমষ্টি। নাজিফা আনজুম, তামান্না আহমেদ এবং প্রিন্স রাফায়েল গোমেজ এই তিনজনের উদ্যোগে এবং আরো দুই সহকর্মী তাজরিন হক ও শারমিন সুলতানার সহযোগিতায় গড়ে উঠছে তাদের উদ্যোগ।শিক্ষকতা পেশার বাইরেও এই তিন উদ্যোক্তা দেশের বিভিন্ন অন্চলের বিখ্যাত সব পণ্যের সমষ্টিতে গড়ে তুলতে চান এক অনিন্দ্য বাজার। তাই তাদের এ উদ্যোগের নাম ‘উহিনি বাজার’।

উহিনি বাজার সারা দেশে শেরপুরের তুলসীমালা চাল সরবরাহ করে।

‘আমরা চেষ্টা করেছি শেরপুরের একমাত্র ব্র্যান্ডিং পণ্য তুলসীমালা চালকে দেশের সবখানে পৌঁছে দেয়ার, পাবনায় বংশ পরম্পরায় উৎপাদিত একেবারে ঘরে তৈরী দুধের সর থেকে উৎপাদিত ঘি সরবরাহ করার, মায়ের হাতে বানানো রসুনের, আমড়ার, তেঁতুল, আমের আচারের স্বাদ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার। এছাড়াও পাবনার বিখ্যাত প্যারা সন্দেশ, ঘরে তৈরি নানা পদের নাড়ু যেন সবাই ঘরে বসেই পান সেই চেষ্টা থাকে আমাদের।’- বলছিলেন উহিনি বাজারের একজন কর্ণধার নাজিফা আনজুম। 

অনলাইনে শত শত উদ্যোগের ভীড়ে নিতান্তই শখ থেকে করা একটা উদ্যোগ কতখানি কাজ করতে পারবে, তা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও এখন পর্যন্ত উহিনি বাজারের যাত্রা যথেষ্ট সফল বলে মনে করেন এর উদ্যাক্তারা। আর তাইতো উহিনি বাজারকে বিস্তৃত করার পথে হাঁটছেন তারা। 

নাজিফার ভাষায়,- ‘লোকবল কম এবং করোনার কারণে একেবারে উৎসস্থলে গিয়ে মানসম্পন্ন পণ্য না আনতে পারার কারণে আমরা এখনও আমাদের পরিকল্পনামত অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করতে পারছিনা। কিন্তু এর জন্য শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কম মানসম্পন্ন পণ্য আমরা গ্রাহকদের দিতেও চাইনা। এইজন্য যদি আমাদের যাত্রা শিথিল করতেও হয়, প্রয়োজনে তাই করবো। কেননা, এখন পর্যন্ত ডেলিভারির আগে প্রত্যেকটা পণ্যের লট আমরা নিজেরা পরীক্ষা করে দেখে তারপরই তা গ্রাহকের হাত পর্যন্ত পৌঁছাই। খাঁটি পণ্যের বাজার তৈরিতে আমরা বদ্ধপরিকর’’।

জেলাভিত্তিক এজেন্ট নিয়োগ করে ভবিষ্যতে পণ্য সংগ্রহ ও সরবরাহের কাজে হাত দেবে উহিনি বাজার। তখন আরো নানা পণ্যের সমাহার ঘটানো সম্ভব হবে বলে আশা রাখেন নাজিফারা।

বরিশালের মৃৎশিল্প থেকে শুরু করে ঘানিভাঙা সরিষার তেল, জামালপুরের নকশীকাঁথা, সিলেটের চা ও জুম শাড়ি কিংবা চট্টগ্রামের শুটকি-এরকম নানা সামগ্রীর হাট বসবে উহিনী বাজারে।

নাজিফা বলেন, ‘মায়ের হাতে তৈরি পিঠার স্বাদ, পাতের কোণে ঝাঁঝালো সরিষার তেলের আচার কিংবা সুগন্ধে মৌ মৌ করা তুলসীমালা চালের পোলাও খেতে খেতে যখন উহিনি বাজারকে কেউ মনে করবে সেদিনই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের সফল মনে করবো। কেন্দ্রীভূত পণ্যের বাজার ঘুচিয়ে সঠিক মূল্যে মানসম্পন্ন খাঁটি পণ্যের বাজার প্রতিষ্ঠিত হোক আমাদের এ উদ্যোগের মাধ্যমে, এ প্রত্যাশা নিয়েই আমাদের পথচলা”।

ফেইসবুক পেইজের লিংক: উহিনি বাজার

শেয়ার করুন