স্পিক আউট: করোনাকালে বিপদাপন্ন মধ্যবিত্তের ভরসার নাম

স্পিক আউটের ফেসবুক পেজ। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

বিশেষ প্রতিনিধি: করোনাকালে হঠাৎ অসহায় হয়ে পড়া নিম্ন মধ্যবিত্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কাজ করছে স্পিক আউট নামে একটি সংগঠন। সংগঠনটি এ পর্যন্ত শতাধিক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের খাদ্য সমস্যা, ঘর ভাড়া, বাড়িওয়ালা কর্তৃক নারী নির্যাতনসহ নানা ধরনের সমস্যা সমাধান করে ইতিমধ্যে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সুনাম অর্জন করেছে।

স্পিক আউটের প্রতিষ্ঠাতা স্বনামধন্য জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সুপন রায়। তিনি সংগঠনটির তথা এ কার্যক্রমের প্রিন্সিপ্যাল কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন। স্পিক আউটের ফেসবুক পেইজে ঢুকলে করোনাকালে অসহায় হয়ে পড়া মানুষগুলোর বর্তমান অবস্থার চিত্র দেখা যায়।

ফেসবুকে একটি লেখা সুপন রায় লিখেছেন এভাবে, ‘লজ্জায় কারো কাছে খাবার চাইতেও পারেননি লিটন! কাল ঈদের দিন কেউ একজন সেমাই দিয়ে গিয়েছিল! সেটি মুড়ি দিয়ে মেখে তারা ভাগ করে ৭ জনে খেলেন! ওইটুকু দিয়ে ঈদ উদযাপন করলেন! চিন্তা করা যায়? এই শহরে এতগুলো মুখ কাল ঈদ পার করলো এক রকম না খেয়ে! এমন কথা শোনার পর থেকে কিছু খেতে পারছি না আমি! তাকে সাহায্য না করা পর্যন্ত খেতে পারবো না!’ লিটন ঢাকার রামপুরার মহানগর প্রজেক্টের বাসিন্দা। তিনি একজন লন্ড্রি ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু গত তিন মাস তার লন্ড্রি বন্ধ থাকায় তিনি অসহায় হয়ে পড়েন।

স্পিক আউট সংগঠনটিতে সিনিয়র সাপোর্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, সুমাইয়া সামসুদ্দোহা। স্পিক আউটের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি জানালেন, তাদের কাছ থেকে সহায়তা প্রাপ্ত হওয়ার পর সহায়তাপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি যেভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, সেটাই স্পিক আউটের প্রাপ্তি। যেমন জামালপুরের কাঁকনের ঘরে খাবার পৌছানোর পর কাঁকন মোবাইলে কল করে সুমাইয়াকে বলেছিলেন, ‘আল্লাহকে দেখিনি বা ফেরেশতাকে দেখিনি। কিন্তু মনে হচ্ছে ফেরেশতা আপনারা!’

সুমাইয়া আরও জানালেন, স্পিক আউটে সাহায্যের জন্য আসা বেশিরভাগ কল তিনি রিসিভ করেন। প্রতিটি মানুষ তাদের দুর্দশার কথা বলেন তাকে। খুব ধৈর্য্য সহকারে, সহানুভূতির সঙ্গে প্রত্যেকের কথা শোনেন তিনি।

দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে কল আসে স্পিক আউটে। চট্টগ্রামে আইসোলেশনে থাকা পরিবার অনুরোধ করেছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। কারণ, তাদের ঘরে খাবার নেই। কেউ তাদের জন্য খাবারের জোগাড়ও করে দিচ্ছে না! তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে স্পিক আউট!

ঢাকা থেকে এক নারী কল করে জানালেন, স্বামী বেতন পেয়েছেন ৫০ শতাংশ। সেই টাকায় ঘরভাড়া দিতে পারছে না তারা। বাড়িওয়ালা, এমনকি বাড়িওয়ালার দারোয়ান কু প্রস্তাব দিচ্ছে তাকে! তার জন্য আর্থিক সহযোগিতাসহ, আইনী সহযোগিতার ব্যবস্থা করে দিয়েছে স্পিক আউট!

জামালপুর থেকে এক কিশোরী কল দিয়েছে। তার পরিবারের ৯ জন সদস্য ৫-৬ দিন ধরে না খাওয়া! তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে স্পিক আউট! এরকম শত ঘটনায় ভরে গেছে স্পিক আউটের ওয়াল!

সুপন রায় জানালেন, প্রতিটি ঘটনা প্রথমে শোনেন স্পিক আউটের সিনিয়র সাপোর্ট ম্যানেজার সুমাইয়া সামসুদ্দোহা। তারপর তিনি জানান সুপন রায়কে। এরপর স্পিক আউটের টিম কাজে লেগে যায়। তারা যাচাই করে দেখে ঘটনাটি। তারপর ভুক্তভোগী অসহায়, সাহায্যপ্রার্থীর দ্বারে পৌছে যায় তার চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা! স্পিক আউটের তহবিল জোগাড় সম্পর্কে এর প্রিন্সিপ্যাল কো-অর্ডিনেটর সুপন রায় বলেন, ‘আমাদের তহবিল জোগাড় হয় আমাদের মতো কিছু মানুষের কাছ থেকে। তাদের কেউ হয়তো মাটির ব্যাংক ভেঙে টাকা পাঠান। কেউ তার সামর্থ মতো টাকা পাঠান ৫শ কিংবা ১ হাজার। মানুষ বিশ্বাস করে আমাদের টাকা দেন। বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করতে আমরা সাহায্যপ্রার্থীর অবস্থা যাচাই করি !  আমাদের সীমিত লোক! সীমিত অর্থ! যাচাই করতে একটু সময় লাগে! ২/৩ দিনও লেগে যায় ! কিন্তু যাচাই করতে গিয়ে একটি পরিবার ৩ দিন ধরে না খেয়ে থাকছে! এটি জেনে নিজেকে অপরাধী লাগছে! কারণ, স্পিক আউট কাজ করছে এমন উদ্দেশ্য নিয়ে যাতে কেউ একটি বেলাও ক্ষুধার্ত না থাকে। চারপাশে এখনও কত মানুষের দম্ভ দেখি! এখনও কত রকম অপচয় দেখি সম্পদের! আর কিছু মানুষ না খেয়ে থাকবে! এটি কেমন কথা!’

স্পিক আউটের ফেসবুক পেইজের লিংক

স্পিক আউটকে সরাসরি কল করার জন্য মোবাইল নম্বর: 01766-523124.

শেয়ার করুন