রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক সমাধান চায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন

তিনদিনের সফরে বাংলাদেশে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক সহায়তা বিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টোফ স্টাইলিয়ানিদেস বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি রাজনৈতিক সমস্যা এবং রাজনৈতিকভাবে এর সমাধান করতে হবে।

সফরের শেষদিনে বুধবার ঢাকাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বিকেলে তিনি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সেখানেই এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই সংকটের সমাধান কেবল রাজনৈতিকভাবেই হতে পারে। এই সংকটের মূল কারণ মিয়ানমারেই নিহিত আছে, সে ব্যপারে ইউরোপিয় ইউনিয়ন অবগত আছে।”

“রাখাইন রাজ্যের মানবিক পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমার এই সফরের মাধ্যমে এই সমস্যার দিকে বিশ্বের মনোযোগ বেশি করে আকৃষ্ট করতে চাইছি।”

আলোচনা চালিয়ে যাবার জন্য ইইউ সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

সোমবার রাতে ঢাকায় পৌঁছে গতকাল ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন ক্রিস্টোফ স্টাইলিয়ানিদেস।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার জন্য তিনি বাংলাদেশের সরকার এবং স্থানীয় জনগনকে ধন্যবাদ জানান।

রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি অর্থ সহায়তা দেবার জন্য জেনেভায় অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৩৪০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থের যে তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে, তার অর্ধেকের বেশি ইইউ দেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তিনি এদিন বলেন, “এক সপ্তাহ আগে জেনেভায় রোহিঙ্গাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে সম্মেলন হয়েছে, তারপরই আমি এখানে এসেছি। সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য ৩৪০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।”

“এর মধ্যে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ দেবে ইইউ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো। আমাদের এই আর্থিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমি খুশি, কারণ এটি আমাদের নীতিগত কাঠামোর একটি অংশ বলে আমি মনে করি।”

তবে, কবে নাগাদ এই অর্থ বাংলাদেশে পৌঁছবে বা ঠিক কীভাবে এই জরুরি সাহায্য দেয়া হবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু উল্লেখ করেননি তিনি।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবার জন্য বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার দুই দেশকেই আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।

মি স্টাইলিয়ানিদেসের কথায়, “আমি আশা করি, রোহিঙ্গারা নিরাপদে এবং মর্যাদার সাথে নিজের দেশে মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরে যাবে। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের সরকারের এজন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।”

“বিষয়টি নিয়ে আমি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অনেক আলোচনা করেছি। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদার সাথে দেশে ফেরানোর এটাই একমাত্র উপায়।”

এদিকে, এর আগে ইয়াঙ্গন থেকে মিয়ানমার সরকারের এক শীর্ষস্থানীয় মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি জানায়, দেশটির কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, রাখাইন প্রদেশ থেকে যে লক্ষ লক্ষ মুসলিম গত দুমাসে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে গেছেন, তাদের প্রত্যাবাসনের কাজ বাংলাদেশের জন্যই দেরি হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী অবশ্য এদিন কোনও মন্তব্য করেননি।

কৃতজ্ঞতা- বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন