অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা এবার আসছে

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের এখন শারীরিক নির্যাতন না করলেও সামাজিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করছে। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকটে পড়ে রাখাইনে অবস্থানরত অবশিষ্ট মুসলিম রোহিঙ্গারা এবার আসতে শুরু করেছে।
শুক্রবার ভোরে প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তের ওপারে জড়ো হয়েছে। এসব রোহিঙ্গারা রাতের যে কোন সময়ে এপারে চলে আসতে পারে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে মাছ ধরার নৌকায় করে ১২৫ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু উখিয়ার উপকূলীয় রূপপতি এলাকায় জড়ো হয়েছে বলে স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী নিশ্চিত করে বলেন, ইনানী পুলিশ রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটি জব্দ করে মাঝি মাল্লাকে আটক করেছে।
গত কয়েকদিনে বিচ্ছিন্নভাবে প্রবেশ করে বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নাগরিক  অলি উল্লাহ (৫৫) ও আলি জুহার (৪৭) জানান, তারা মিয়ানমার সামরিক জান্তা ও সেখানকার উগ্রপন্থি সশস্ত্র যুবকদের অত্যাচার নিপীড়ন মুখ বুঝে সহ্য করে খেয়ে না খেয়ে নিজ বসতবাড়িতে কোনরকমে দিন যাপন করে আসছিলেন। তারা মনে করছিলেন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার তাদের উপর আর কোন চাপ প্রয়োগ করবে না। অথচ তাদের কথায় আর কাজে কোন মিল নেই। মিয়ানমার সেনা তাদের পাকা ধান কেটে নিয়ে গেছে। হাটবাজারে যেতে দিচ্ছে না।
দোকান-পাট পুড়িয়ে ফেলার কারণে টাকা দিয়েও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে রোহিঙ্গাদের খেয়ে না খেয়ে দিন-যাপন করতে হচ্ছে। তারপরেও সশস্ত্র রাখাইন যুবকেরা দিনে কয়েকবার গ্রামে ঢুকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোহিঙ্গাদের হুমকি দিচ্ছে। সুযোগ-বুঝে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে এতদিন সেখানে ধৈর্য ধরে যেসব রোহিঙ্গারা অবস্থান করছিল তারাও চলে আসতে বাধ্য হচ্ছে।
আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে বসবাসরত প্রত্যক্ষদর্শী নুরুল বশর জানান, শুক্রবার ভোর রাতে ৫ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া সংলগ্ন এলাকায় খোলা আকাশের নিচে জড়ো হয়ে রয়েছে। এসব অভুক্ত রোহিঙ্গারা রাতের যে কোন সময়ে বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে এপারে চলে আসতে পারে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সুলতান আহমদ জানান, আঞ্জুমানপাড়ায় অবস্থানরত এনজিও সংস্থা এমএসএফ হল্যান্ড এসব রোহিঙ্গাদের এপারে নিয়ে আসার জন্য সীমান্তের জিরো পয়েন্টে তত্পরতা শুরু করেছে।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী সীমান্তের ওপারে আরো ৫ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশের অপেক্ষায় জড়ো হওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ বলেন, আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে অপেক্ষমাণ রোহিঙ্গারা প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি জানান, সীমান্তে বিজিবিকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের জানান, সাগরপথে ঝুঁকি নিয়ে রোহিঙ্গা নিয়ে আসার অপরাধে আব্দুল মাজেদ ও বাট্টু মাঝি নামক ২ জনকে আটক করা হয়েছে এবং রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটি জব্দ করে ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
অপরিকল্পিত স্যানিটেশন
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কতিপয় এনজিও সংস্থা কোন রকম বিজ্ঞপ্তি বা টেন্ডার আহ্বান না করে তড়িঘড়ি করে এক চাকা বিশিষ্ট লেট্রিন স্থাপন করে। সপ্তাহ পার না হতে সেসব লেট্রিন পূর্ণ হয়ে মলমূত্রে একাকার হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্গন্ধে অস্বাস্থ্যকর বিপন্ন পরিবেশে রোগ-বালাই বাড়ছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে স্থানীয়রা।
এইচআইভি পজেটিভ ৬১
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইচআইভি পজেটিভ পাওয়া গেছে ৬১ জন। যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ৪২ এবং পুরুষের সংখ্যা ১৯। কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন আবদুস সালাম এ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গত ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে বুধবার পর্যন্ত ৬১ জন এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের সবার চিকিত্সা চলছে। ইতোমধ্যে এইচআইভি রোগে আক্রান্ত এক রোহিঙ্গা মহিলার মৃত্যু হয়েছে।

কৃতজ্ঞতা-দৈনিক ইত্তেফাক

শেয়ার করুন