চট্টগ্রামে বেসরকারি পর্যায়ে করোনা চিকিৎসা এখনও ‘আলোচনার পর্যায়ে’

চট্টগ্রামের ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে দীর্ঘ হচ্ছে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের তালিকা। সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব অনুযায়ী গত ২৮ মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৪শ’ ছাড়িয়েছে। করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন (৩০ মে পর্যন্ত) ৭৪ জন।

এ পরিস্থিতিতে রোগীর চাপ সামলাতে দু’টি বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এগুলো হচ্ছে-নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং পাশ্ববর্তী ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল।

এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চিকিৎসা করার ঘোষণা এলেও সবকিছুই এখনও আলোচনার পর্যায়েই রয়ে গেছে।

সেখানে চিকিৎসকদের সুরক্ষার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়েও চলছে আলোচনা। তবে আগামী ৭ থেকে আটদিনের মধ্যে এই হাসপাতালগুলো চালু করার চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

এর আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে ২০টি আইসিইউ শয্যাসহ ১০০ শয্যার কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। এটি নগরীর খুলশী এলাকার একটি পরিত্যক্ত বেসরকারি হাসপাতাল। তবে সেখানে এখনও রোগী ভর্তি শুরু হয়নি। এটিকে ইতোমধ্যে জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট-২ ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে হাসপাতালগুলো কবে নাগাদ চালু হবে সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। নতুন করে ঘোষিত হাসপাতাল দু’টি চালুর ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে মেয়রকে অন্যতম সমন্বয়ক হিসেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতাল দু’টি চালুর জন্য চিকিৎসকদের একটি দল গঠন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে তারা দুই হাসপাতাল পরিদর্শণ করেছেন। শুক্রবার সকালে সংশ্লিষ্টরা বৈঠকও করেছেন।

বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো লিখিতভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত জানার পর এই দুই হাসপাতাল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা যেসব সুবিধা ভোগ করছেন, সেসব সুযোগ সুবিধা এখানে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া চিকিৎসকদের সুরক্ষার বিষয়টিও এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে সরকারি ঘোষণা এলেও রোগীরা এই দুই হাসপাতালে এখনই চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হলি ক্রিসেন্ট চালুর ব্যাপারেও সঠিক দিনক্ষণ ঠিক করা যায়নি।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ মো. ফজলে রাব্বি বলেন, সবকিছুই এখনও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা যেসব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন বেসরকারি পর্যায়ে সেটা পাওয়ার কথা নয়। সেখানে চিকিৎসকদের সুরক্ষার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা এখনও আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে সবকিছু সমাধান করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই হাসপাতালগুলো চালু করা।

গত ২৬ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে হাসপাতাল দুটিকে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের চিঠিতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং ইম্পেরিয়াল হাসপাতালকে বিশেষায়িত কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারণের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের আদেশের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে হাসপাতাল দু’টিতে রোগী ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরিচালক চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

নগরীর খুলশীর ফয়’স লেক এলাকায় প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালটি (বিএমএইচ) প্রতিষ্ঠা করেন। ইতোমধ্যে সেখানে ৬ টি আইসিইউসহ ১০০টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায়।

হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) আমাদের বলেছিল করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের যেন আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে সহযোগিতা করি। আমরা রাজি হয়েছি। তারাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল। মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেছে। আমাদের ১০০ আইসোলেশন শয্যা প্রায় প্রস্তুুত আছে, এর মধ্যে ৬টি আইসিইউ।

কিন্তু যেসব ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসা সেবা দেবেন, তাদের সুরক্ষা তো আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কোয়ারেনটাইনে রাখার জন্য বাড়ি নির্ধারণ করতে হবে। সুরক্ষা সামগ্রী, যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে।

২০১৯ সালের ১৫ জুন নগরীর খুলশীতে অত্যাধুনিক সুবিধাসম্বলিত ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের উদ্বোধন হয়। এই হাসপাতালে ৬৪টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে যা চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে সর্বোচ্চ।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকার প্রথমে ১০০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং ৫০ শয্যার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতাল নির্ধারণ করে। দুই হাসপাতালে রোগীর চাপ সামাল দিতে না পারায় গত ১ মে জেনারেল হাসপাতালে আরও ৫০ শয্যা বাড়ানোর অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে গত ২১ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু হয়েছে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট।

শেয়ার করুন