৪৫ বছরে বান্দরবান প্রেসক্লাব: কিছু কথা কিছু স্মৃতি

বান্দরবান প্রেস ক্লাব ভবন

আগামী ১ জানুয়ারি ২০২২, ৪৫ বছরে পা রাখবে এলাকার সাংবাদিকদের গর্ব বান্দরবান প্রেসক্লাব। প্রতিষ্ঠাবির্ষিকী উদযাপনের জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ উপলক্ষে প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটির গৃহীত কর্মসূচীর মধ্যে “বান্দরবান প্রেসক্লাব গুণীজন সম্মাননা-২০২২” প্রদান, আলোচনা সভা ইত্যাদি থাকছে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারমান ক্যশৈহ্লা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে প্রেস ক্লাব সূত্রে জানা গেছে।

১৯৭৭ সালের ১ জানুয়ারি গঠিত হয় অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম প্রেসক্লাব ‘বান্দরবান প্রেসক্লাব’। অস্থায়ী অফিস ছিল বান্দরবান বাজারের নিয়াজ মোহাম্মদ পাবলিক লাইব্রেরির একটি কক্ষ। এখানেই চলতো প্রেসক্লাবের দাপ্তরিক কাজকর্ম। শলা-পরামর্শ করে সর্বসম্মতিক্রমে বান্দরবান প্রেসক্লাবের ১১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছিল। এই কমিটির কর্মকর্তারা ছিলেন- মহকুমা প্রশাসক আবদুর রউফ, সহ-সভাপতি বোমাং সার্কেল চীফ মশৈপ্রু চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক তরুণ কান্তি চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাদশা মিঞা মাস্টার, কোষাধ্যক্ষ সুধাংশু বিমল চক্রবর্ত্তী, দপ্তর সম্পাদক মোঃ বজলুর রশীদ, প্রচার সম্পাদক লোকমান হাকিম। সদস্যরা হলেন সুনীতি বিকাশ চাকমা, কে.এস.প্রু, স্বপন কুমার চৌধুরী, অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর চৌধুরী, অধ্যাপক জাকির হোসেন ও হাবিবুর রহমান। মহকুমা প্রশাসক আবদুর ছাত্তার ও জিল্লুর রশীদ চৌধুরীও প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে প্রশংসিত হয়েছিলেন।

এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুর রশীদ মাস্টার, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, নাপ্পীঘাটার বাসিন্দা মংরী সওদাগর, সাইর আহমেদ সওদাগর, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেঅং মাস্টার, মংচ মিয়ান জনি বাবু, কামাল উদ্দিন চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান, মুকুন্দ মহাজন, অংচাহ্লা চেয়ারম্যান, আহমেদ সওদাগর, মহুকুমা পর্যায়ের পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাগণসহ অনেক মান্যগন্য ব্যক্তিবর্গ প্রেসক্লাবে আসতেন। তারা মহকুমার বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনার বিষয়ে আলাপ করতেন এবং গঠনমূলক উপদেশ দিতেন। আলোচনার উল্লেখযোগ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল সাঙ্গু নদীর উপর বান্দরবান-বালাঘাটা সংযোগ সড়ক সংস্কার, বান্দরবান-কেরানীহাট সড়ক সংস্কার, বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়ক সংস্কার, বান্দরবান-রুমা সড়ক সংস্কার, বান্দরবান কলেজ সরকারি করণ, বান্দরবান একটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন ও বান্দরবান মহকুমাকে জেলা ঘোষণা ইত্যাদি।

বান্দরবানবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮১ সালের ১৮ এপ্রিল বান্দরবান ও লামা মহকুমা সমন্বয়ে দেশের ২১তম জেলা ঘোষিত হয় বান্দরবান পার্বত্য জেলা। এই জেলার বয়স এখন ৪০ বছর। ফারুক আহামদ জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক।

বান্দরবান প্রেসক্লাব বর্তমানে শহরের প্রাণকেন্দ্রে পাঁচতলাবিশিষ্ট সুরম্য অট্টালিকা। সুসজ্জিত হল রুম, দামি আসবাবপত্র, দেখলেই সবার চোখ জুড়িয়ে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এম.পি., বান্দরবান সেনা রিজিয়ন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, বান্দরবান জেলা প্রশাসন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রেসক্লাবের উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা করেন। প্রেসক্লাবের সদস্যরা তাদের অবদানের কথা স্মরণ রেখেছেন।

সাত সদস্যবিশিষ্ট বান্দরবান প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটিতে বর্তমানে সফলভাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মনিরুল ইসলাম মনু ও সাধারণ সম্পাদক মিনারুল হক। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের কাজকর্ম মনিটরিং করছেন সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু।

বান্দরবানের রোয়াংছাড়ি, রুমা, থানছি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়ও প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রেসক্লাব সমূহের উন্নয়নের জন্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর এম.পি বিশেষ অবদান রেখে প্রশংসতি হয়েছেন।

পাবর্ত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা ও প্রাক্তন জেলা প্রশাসক নাজমুল আলম ছিদ্দিকীকে তাদের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অজীবন সদস্যপদ প্রদানে সম্মানিত করেছে প্রেসক্লাব।

লেখক: মোঃ বাদশা মিঞা, উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি, বান্দরবান প্রেসক্লাব।

শেয়ার করুন