গল্পের শুরুটা হয়েছিল মন খারাপ থেকে। অদ্ভুত শোনালেও সত্যি যে নুসরাত চৌধুরী নিশার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পেছনের পর্বটা ছিল এমনই। আরবান প্ল্যানিং-এ পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করতেন নিশা। ছবি আঁকার শখ ছিল। এরপর বিয়ে। ভালই চলছিল। কিন্তু কিছু কারণে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর হতাশা ভর করে। কিছু একটা করার তাগিদ, সেই সাথে মন খারাপ হয়ে থাকা। এ অবস্থায় যখন আর কিছুই করার মানসিক শক্তি ছিলনা, তখনি তার স্বামী তাকে পরামর্শ দেন নিজের শখটা নিয়ে একটু ভেবে দেখার। হুট করেই একদিন ফেইসবুকে একটা পেইজ খুলে বসেন। নাম দেন কেয়ারশপ বিডি।
অনলাইনের নানা উদ্যোগের ভিড়ে এখন শিশুদের আরামদায়ক পোশাকের এক অন্যতম পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে কেয়ারশপ বিডি।
সন্তান গর্ভে আসার পর নয় মাসের মত কাজ বন্ধ ছিল। সন্তান হওয়ার পর দেখলেন সে গরমে খুব ঘামে। আরামের জামাকাপড় ভাল পাওয়াও যায়না বাজারে সবসময়। সেই চিন্তা থেকে নিজের বাচ্চার কাপড় নিজেই বানানো শুরু করলেন নিশা। একসময় মনে হল তার পেইজও অনেকদিন ধরে বন্ধ। এইরকম বাবুদের জামাগুলো দিয়েই পেইজটাকে আবার সচল করা যাক। নিজের বাচ্চার জন্য তৈরি করা কিছু পোশাকের ছবি দিতেই অভাবনীয় সাড়া পাওয়া গেল। অনেক অর্ডার আসা শুরু হলে তিনি খোঁজ করলেন ডিজাইন আর কাপড় দিলে কারা এরকম পোশাক বানিয়ে দিতে পারবে। খোঁজ করতে করতে পেয়েও গেলেন এমন লোক যারা এরকম কাজ করতে পারবে।
নিজের ওই সময়টার কথা বলতে গিয়ে নিশা বলেন, “২০১৮ সালে আমি অংশ নিলাম মেয়ে নেটওয়ার্কের প্ল্যাটফরম রাঙতা মেলায়। এটা ছিল আমার উদ্যোগের জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট। এরপর থেকে আমি বাচ্চাদের পোশাক এবং পরবর্তীতে একরকম পারিবারিক পোশাক বানানো শুরু করলাম। ২০১৯ সালে এবং ২০২০ এর শুরু পর্যন্ত আমি তিনটি মেলায় অংশ নেই যেখানে আমার মূল আকর্ষণ ছিল শিশুদের পোশাক। ফেব্রিক ও ডিজাইন হিসেবে আমি সুতি, গামছার কাপড়, টাইডাই, ব্লক এগুলো ব্যবহার করেছি। ছোটদের শাড়িও এনেছি। আমার উদ্দেশ্য শিশুদের জন্য আরামদায়ক পোশাক সরবরাহ করা।” এর মাঝেই থেকে থেকে কাজ বন্ধ থাকলেও হারিয়ে ফেলেননি নিজেকে। সকল শক্তি দিয়ে ধরে রেখেছেন নিজের উদ্যোগকে।
এখনো নিজস্ব কারখানা করতে না পারলেও বর্তমানে ১১ জন কর্মচারি নিয়ে নিশার উদ্যোগ এগিয়ে চলছে। “প্রথমে এটা নিয়ে তেমন বড় কোন পরিকল্পনা না থাকলেও, এখন পেছনে তাকালে দেখি যে অনেকগুলো বছর ধরে এতো চড়াই উতরাই পেরিয়েও বহাল তবিয়তে আমি এবং আমার উদ্যোগ দুই-ই টিকে আছে। যখন দেখি মানুষ আমার ডিজাইন করা পোশাকে তাদের সোনামণিদের সাজাচ্ছেন, প্রশংসা করছেন তখন মন ভরে যায়। আরও দূরে এগিয়ে যাবার সাহস পাই।”
পাঁচ বছরের সন্তান মায়ের নিত্য কাজের সঙ্গী। কাপড় কেনা থেকে শুরু করে কারখানায় পণ্য তৈরি হওয়া এবং কুরিয়ারে পাঠানো পর্যন্ত সারাদিন মায়ের সাথেই থাকে সে। পছন্দ করে দেয় কাপড়ও। মায়ের কাজকে ভালবেসে মাকে উৎসাহও দেয় ছোট্ট মানুষটা। তাইতো যখন নিশাকে জিজ্ঞেস করা হয়, উদ্যোগটা চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কী চ্যালেঞ্জ আর কীই বা তাঁর অনুপ্রেরণা। তখন একবাক্যে নিশার চটজলদি জবাব, “সন্তানকে সাথে নিয়ে একহাতে ব্যবসা চালানোটাই সবচে বড় চ্যালেঞ্জ, আবার এই সন্তানই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।” নিজের এগিয়ে চলার পাথেয় হিসেবে নুসরাত চৌধুরী নিশা তাই নিজ সন্তানকেই দিতে চান কৃতিত্বের ভাগটুকু।
ফেইসবুক পেইজের লিংক: কেয়ারশপ বিডি