বান্দরবান শহরে সড়কের নতুন নাম ব্যবহার করছেনা কেউ, নেই সচেতনতা

বান্দরবানে সড়কের নতুন নামগুলো তেমন ব্যবহৃত হতে দেখা যায় না। নামফলকগুলোও জরাজীর্ন হয়ে গেছে।


নতুন নামে বান্দরবান শহরের সড়কগুলোকে চিনতে পারছেনা কেউ। প্রায় পাঁচ বছরেও স্থানীয়দের মধ্যে নতুন এসব নামের ব্যপারে সচেতনতা তৈরি হয়নি। সরকারি-বেসরকারি চিঠিপত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সড়কগুলোর পুরনো নামই ব্যবহৃত হয়।

শহর ঘুরে এসব সড়কের নামের ব্যবহার দেখেছেন এই প্রতিবেদক। দোকানপাটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডগুলোতেও এখনো ঠাঁই হয়নি জেলার গুণীজনদের নামে নামকরণ হওয়া এসব সড়কের।

শহরের প্রবেশমুখ ধনেশ চত্বর থেকে ট্রাফিক মোড় পর্যন্ত প্রধান সড়কটিকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সড়ক’ নামকরণ করা হলেও বেশিরভাগ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, আবাসিক হোটেলের সাইনবোর্ডে মেলে পুরোনো নাম। সদর উপজেলা পরিষদের পরিচালনাধীন মার্কেটের কয়েকটি দোকানে দেখা যায় প্রধান সড়ক, (কে, বি রোড) এরকম পুরোনো নাম।

বাজারের চৌধুরী মার্কেট থেকে রাজার মাঠ পর্যন্ত ‘শহীদ রতন সড়ক’ নামকরণ হলেও নামফলক ছাড়া অন্য কোথাও সড়কের নাম দেখা যায়নি। সাইনবোর্ডে কৃষি ব্যাংকের পাশে, স্কুল রোড, রাজার মাঠ সংলগ্ন, হাই স্কুল রোড, প্রধান সড়ক ইত্যাদি নাম দেখা যায়।

শহীদ রতন সড়কের জরাজীর্ন ফলক

রাজার মাঠ থেকে উজানি পাড়া পর্যন্ত ‘রাজা মং শৈ প্রু সড়ক’ নামকরণ করা হয়। ‘বোমাং সার্কেল হেডম্যান এসোসিয়েশন’ এর সাইনবোর্ডে দেখা যায় ‘পুরাতন রাজবাড়ি সড়ক’ নামে। এছাড়াও রাজার মাঠ এলাকা, রাজবাড়ি রোড ও পাড়ার নাম ব্যবহার করতে দেখা যায়।

তিন পার্বত্য জেলার একমাত্র খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ইউ কে চিং বীর বিক্রম এর নামে ‘ইউ কে চিং বীর বিক্রম সড়ক’ নামকরণ করা হয়। যেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সড়ক থেকে লাঙ্গি পাড়া পর্যন্ত অবস্থিত। ‘রিভার ভিউ হোটেল এন্ড রেষ্ট্রুরেন্ট’ এর সাইনবোর্ডে এই সড়কের নাম ব্যবহার করতে দেখা যায়। এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় এলাকার নাম বনানী স’মিল, ইসলামপুর, লাঙ্গি পাড়া ব্যবহার করতে দেখা যায়।

সড়কের নামফলকটিও খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায়। ফলকের ওপর পোস্টার লাগিয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটিকেই বিকৃত করে ফেলা হয়েছে। পাশেই রাখা হয়েছে ময়লার ট্রলি।

প্রয়াত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতির নামে ট্রাফিক মোড় থেকে চৌধুরী মার্কট পর্যন্ত সড়কের নামকরণ করা হয় ‘মাহাবুবুর রহমান সড়ক’। মোবাইল হোম, মেসার্স এম. আর. ফার্মেসী, সোনিয়া জুয়েলার্স, বশির মাইক, ফটোকপি পয়েন্টসহ বেশিরভাগ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে এই নাম ব্যবহার করতে দেখা গেছে। হোটেল পূর্বাণী, হোটেল পাহাড়িকা, মেসার্স বান্দরবান সু স্টোরসহ কিছু প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় পুরোনো প্রধান সড়ক নামে সাইনবোর্ড। কিছু দোকানে নতুন ও পুরোনো উভয় নামের ঠিকানা দেখা যায়।
এছাড়াও নতুন ব্রিজ সংলগ্ন কালাঘাটা সড়কে ‘মেসার্স মরিয়ম ট্রেডার্স’ এর সাইনবোর্ডে ‘বান্দরবান বাজার, ডিসি অফিসের সামনে, বান্দরবান’ এবং আমেরিকান হোমিও ক্লিনিকের সাইনবোর্ডে ‘১নং গলি, দূর্গা মন্দির রোড, বান্দরবান বাজার’ ঠিকানা ব্যবহার করতে দেখা যায়।

চিঠিপত্রে সড়কের নাম ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে বান্দরবান প্রধান ডাকঘরের সহকারি পরিদর্শক ফয়েজ আহমদ বলেন,‘ চিঠিপত্রের ঠিকানায় এখনো নতুন সড়কের নাম ব্যবহার করতে দেখা যায় না।’

বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের সহকারি অধ্যাপক আরফান হাবিব বলেন, ‘একটি শহরের সড়কের নামকরণ করা হয় সেখানকার ইতিহাস, ঐতিহ্য, গুণী মানুষদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণে রাখার জন্য এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরার জন্য। একজন শিশু যখন এ পথ দিয়ে হেঁটে যাবে, হাঁটতে হাঁটতে সেই শিশু তার ইতিহাস ও সংস্কৃতি জেনে বড় হবে যা কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়। বান্দরবানে সারাবছর দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা আসেন। নতুন জায়গা ভ্রমণে ও ঠিকানা খুঁজতে ভ্রমণকারীরা গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। বিভিন্ন নাম ব্যবহারের ফলে এক্ষেত্রে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। যথাযথ নাম ব্যবহার একটি বিশ্ব সচেতনতার অংশ। তাই অবহেলা না করে নাগরিক সচেতনতা থেকে আমাদের সড়কের নাম ব্যবহার করা উচিত।

বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনু বলেন, শহরের সড়কগুলোর নাম দিয়েছে পৌরসভা। এ ব্যাপারে যথাযথ প্রচার চালিয়ে শহরবাসীকে সচেতন করার দায়িত্বও তাদের ওপরই বর্তায়। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব পালন করেনি।

বান্দরবান পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র দীলিপ বড়ুয়া জানান, পৌরসভার পক্ষ থেকে সড়কগুলোর নামকরণ করার পর বাজারে মাহবুবুর রহমান সড়ক নামটি ব্যবহারে কিছু সচেতনতা তৈরি করা হয়েছিলো। তবে অন্য সড়কগুলোর নাম নিয়ে তেমন প্রচার করা হয়নি। পৌরসভা এক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেনি।

২০১৬ সালের ৩১ মার্চ পৌর এলাকার তিনটি প্রধান সড়কের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সড়ক, শহীদ রতন সড়ক এবং রাজা মং শৈ প্রু সড়ক। সড়কগুলোর নামফলক উন্মোচন করেন তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং।

শেয়ার করুন