বগুড়ার সান্তাহারের মেয়ে, তার ওপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে আম পাকার মৌসুমে পরিচিত অনেকেই আমের খোঁজ করতো। কিনে পাঠানোও হতো। একদিন মনে হলো আমের ব্যবসাই শুরু করা যাকনা! মিঠেকড়ার গল্প কিন্তু এখান থেকে শুরু না! শুরুটা আরেকটু আগে থেকেই হয়েছিল।
ফ্যাশন এবং রুপচর্চায় আগ্রহ থাকার কারণে ছাত্রাবস্থাতেই তৈরি পোশাক এবং প্রসাধন সামগ্রী নিয়ে অনলাইনে ব্যবসা ছিল সাদিয়া ইসলামের। ২০১৭ সালে ট্রেন্ড স্টকার এবং ২০১৮ সালে প্রিয়দর্শিনী নামের পেইজে আমদানিকৃত পোশাক আর প্রসাধন সামগ্রী দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও পরবর্তীতে দেশি পণ্যের দিকে ঝোঁকেন সাদিয়া। জামালপুরের নকশি কাজ আর রাজশাহী সিল্কের নানা পণ্য নিয়ে ট্রেন্ড স্টকারে ব্যবসা সাজান। প্রিয়দর্শিনী তখন অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
পরে ২০১৯ সালে আমের মৌসুমে মেয়ে নেটওয়ার্কের ব্যবসায়িক গ্রুপ হুটহাটে আম নিয়ে একটা পোস্ট করেন। অভাবনীয় সাড়া পেলেন সেই পোস্টে। তখন ঝিমিয়ে পড়া প্রিয়দর্শিনী পেইজটার মাধ্যমেই আম বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেন। নাম দিলেন প্রিয়দর্শিনী-ফ্রেশ ফ্রুটস। বর্তমানে মিঠেকড়া নামে তার কার্যক্রম চলছে। আম বিক্রিতে ভালো সাড়া পেয়ে পরবর্তীতে লিচু এবং ষ্ট্রবেরি বিক্রির পোস্ট দিলেন এবং আবারও দারুন সাড়া পেলেন। সেই থেকে অনালাইনে ফলের ব্যবসার ভিন্নধর্মী জগতে এক অন্যতম সফল নারী উদ্যোক্তার উদাহরণ হলেন সাদিয়া ইসলাম।
“আমার দুই উদ্যোগে বর্তমানে ২১ জনের মত মানুষ কাজ করছে। কিন্তু এ পর্যন্ত আসার পথটা একেবারে মসৃণও ছিলনা। আমাদের দেশে সব সেক্টর এখনো নারীবান্ধব হয়ে ওঠেনি। আর ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সেটি আরও প্রতিকূল। বানেশ্বর হল আমের সবচেয়ে বড় হাট। সেখানে প্রায় শতভাগ পুরুষ ব্যবসায়ীদের পরিবেশে প্রথমদিকে যখন যেতাম তখন শুধুমাত্র নারী বলেই ভিন্ন আচরণের মুখে পড়তে হতো। তাদের কাছে একজন নারীর হাট ঘুরে দরদাম করে আমের অর্ডার করার ঘটনাও খুবই নতুন। তাই সেখানে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতারও শিকার হতে হয়েছে। এছাড়া বাড়ি থেকেও এরকম কাজের জন্য তেমন একটা উৎসাহ পাওয়া যায়নি প্রথমদিকে” -বলছিলেন সাদিয়া ইসলাম।
আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে কেন এই কাজ বেছে নিয়েছেন জানতে চাইলে সাদিয়ার উত্তর, “ছোটবেলায় যখন সফল নারী উদ্যোক্তাদের ওপর প্রতিবেদন পড়তাম তখন থেকেই নিজেকে ঐ জায়গায় ভাবতে আমার ভাল লাগতো। চাকরি করলে নিজের মেধার স্বাতন্ত্র্য প্রকাশের সুযোগ অনেকাংশেই কমে যায়। সেদিক থেকে ব্যবসার ক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ থাকে শতভাগ। দেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে নিজের কাজের মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগিয়ে সেগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন সাদিয়া। এক ছাদের নিচে তার কর্মীবাহিনীকে নিয়ে এসে নিজের কারখানা খোলার কাজও শীঘ্রই শুরু করবেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।
সাদিয়ার ভাষায়, “এখনো অনেক দূর যাওয়া বাকি। আমার আগ্রহের জায়গায় আরও পাকাপোক্তভাবে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে ঝালিয়ে নিতে চাই। সেই সাথে আমার সহকর্মীদেরও সরকারি-বেসরকারি প্রশিক্ষণের আওতায় এনে নিজেদের ব্যবসার মান উন্নয়নের ইচ্ছা রয়েছে।’’
প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থেকে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য অর্থের পাশাপাশি জ্ঞান, সততা এবং সাহস অনেক বেশি দরকার বলে মনে করেন সাদিয়া।
ফেইসবুক পেইজের লিংক: ট্রেন্ড স্টকার
ফেইসবুক পেইজের লিংক: https://www.facebook.com/mithekoraa