পৃথিবীজুড়ে কমবেশি সব সংস্কৃতিতেই নেচে গেয়ে বিয়ে উদযাপন করা হয়ে থাকে। এই উপমহাদেশে সেই নাচগানের মাত্রা আবার একটু বেশিই। বিয়েতে, বিশেষ করে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে পাড়ার সবাই মিলে গান গেয়ে, নেচে হইচই করার রীতিটা এদেশে বেশ পুরনো। যুগে যুগে সেই রীতির অনেক পরিবর্তন হতে হতে আজকাল আরেক ধারায় এসেছে। সে ধারায় দেশীয় নাচের বাইরেও ভারতীয় বা পাশ্চাত্যের প্রভাব অনেক বেশি। শহুরে বিয়েগুলোতে এই ধারার প্রভাব বেশি দেখা যায়। আগে ঘরোয়াভাবে নাচগান হলেও আজকাল বেশ শিখে পড়ে ধুমধাম করেই সেগুলো হয়। কিন্তু যদি এমন হয় যে পরিবারে নাচ জানে এমন কেউ নেই। কিংবা নাচ জানলেও সবাই মিলে কিছু পরিবেশন করবে এমন নাচ করিয়ে দেওয়ার মত মানুষ নেই। কিংবা কেউ হয়ত একদম প্রফেশনাল পরিবেশন চান তার অনুষ্ঠানে। কিন্তু কে নেবে এই দায়িত্ব? দায়িত্ব নেবে রুজ (Rouge) ওয়েডিং কোরিওগ্রাফি।
একদম অন্যধারার এক উদ্যোগ রুজ। বিয়ে বা অন্য কোন অনুষ্ঠানে নাচের সম্পূর্ণ কোরিওগ্রাফির দায়িত্ব নেয় এই উদ্যোগের দুই উদ্যোক্তা মুবাশ্বেরা বিনতে শফিক শর্মী এবং তাসনিম ইসলাম অর্ণা। শর্মী-অর্ণার বন্ধুত্ব সেই হাইস্কুল থেকে। আগা খান স্কুল থেকে ও এবং এ লেভেল শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউট- আইবিএতেই দুই বন্ধু পড়াশোনা করেন। স্কুল থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দুই বন্ধু মিলে নাচ করতেন। আইবিএ-তেও কোন অনুষ্ঠান হলেই ডাক পড়তো এই জুটির। এভাবেই কাজ করতে করতে কথাচ্ছলে জন্ম নেয় রুজ।
“আমাদের দুজনের বাসাই উত্তরা। একসাথে ক্লাসে যাওয়ার সময় ট্রাফিক জ্যামে বসে থাকতে থাকতে দুইজন কথা বলছিলাম। প্রসঙ্গক্রমে এলো যে কত মানুষের বিয়েতে আমাদের নাচ তুলে দেওয়ার ডাক পড়ে।নাচতে আমাদের কত ভাল লাগে, বিয়েবাড়িও দারুণ লাগে। তাহলে কেন আমরা এটা নিয়ে কিছু একটা করিনা?।”- বলছিলেন রুজের একজন প্রতিষ্ঠাতা শর্মী।
ফেইসবুকে পেইজ খুলে এক বন্ধুর সহযোগিতায় পুরো ডিজাইনও করে ফেললেন শর্মী-অর্ণা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই দারুণ উৎসাহ দিতে লাগলো।
“আমরা দুইজনই ছবি আঁকি। তাই চাচ্ছিলাম আমাদের উদ্যোগের নাম রং এর সাথে সম্পর্কিত কিছু হোক। বিয়ে মানেই যেহেতু লাল, তাই লাল হল আমাদের নাম। তবে তা ফরাসি ভাষায়। ফরাসি ভাষায় রুজ অর্থ লাল।”- নিজেদের উদ্যোগের নামকরণ নিয়ে বলছিলেন রুজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অর্ণা।
“তখন ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস। আমাদের প্রথম ডাক এলো এক হলুদ অনুষ্ঠানের কোরিওগ্রাফির জন্য। প্রথম ইভেন্ট হিসেবে সেটা দারুণ ছিল। আমরা আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা বুঝে নিয়মেও পরিবর্তন আনলাম। এরপর আরও অনেকগুলো অনুষ্ঠানে একে একে অংশ নিলাম। আমরা যদিও নিজেরা মূল অনুষ্ঠানে নাচিনা, শুধু শিখিয়ে দেই। তবু কিছু অনুষ্ঠান এমনও থাকে যেখানে টানা কয়েক মাস নিয়মিত কাজ করতে করতে ওইসব পরিবারের অংশ হয়ে যাই আমরা। মনে হয় বিয়েটা বুঝি আমাদেরই কোন আত্মীয় কিংবা বন্ধুর। বিয়ে ছাড়াও আমরা একটা ইউটিউব শো-তে অংশ নিয়েছি, লকডাউনের সময়ও অনলাইনে কিছু কাজ করেছি। এগুলোতে ভাল সাড়াও পেয়েছি।”- জানান শর্মী।
দুই বন্ধুর ছোট্ট একটা উদ্যোগ রুজ। কিন্তু এর ব্যাপ্তি এবং এর থেকে প্রাপ্তি দুটোই অনেক বেশি বলে মনে করেন তরুণ এই দুই উদ্যোক্তা।
“রুজ নিয়ে কাজ করতে যেয়ে বুঝেছি যে এটা শুধুমাত্র নাচ বা কোরিওগ্রাফি না, এর থেকেও বেশি কিছু। একেকটা অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুরো পরিবার সেখানে অংশ নেয়। একটা আনন্দের মুহূর্ত আরও আনন্দময় হয়ে ওঠে আমাদের কাজের মাধ্যমে। ক্লায়েন্টের সন্তুষ্টি আমাদের নাচের প্রতি ভালোলাগাকেও কিছু ক্ষেত্রে ছাপিয়ে যায়।” – আবেগ স্পষ্ট ফুটে ওঠে শর্মীর কণ্ঠে। শর্মীর সাথে তাল মিলিয়ে অর্ণাও বলে ওঠেন,” এতোগুলো পরিবারের অংশ হয়ে ওঠা, নতুন বন্ধুত্ব হওয়া, আনন্দে শামিল হওয়া আর কোন পেশায় আছে বলেন! আমরা আসলে নাচ শিখাই না, আমরা খুশি ভাগাভাগি করি।’’
ছোট-বড় কয়েক রকম প্যাকেজের মাধ্যমে রুজ কাজ করে। রুজের ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে যে কেউই রুজের সার্ভিস নিতে পারবেন।
ফেইসবুক পেইজের লিংক: রুজ