ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পিতামাতার পরিচয় কীভাবে পাওয়া যায়?

ডিএনএ

যে কোনো ধরনের তদন্ত কাজে ডিএনএ টেস্ট এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং বহুলব্যবহৃত একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এর মাধ্যমে মানুষের পুরো জেনেটিক বৈশিষ্ট্য বের করা সম্ভব।

ডিএনএ’র পূর্ণরূপ Deoxyribonucleic acid.

এক কথায় বলতে গেলে এটিকে মানব শরীরের ব্লু প্রিন্টও বলা যেতে পারে। এক ফোঁটা রক্ত বা চুলের একটি অংশ থেকেও ডিএনএ টেস্ট করা সম্ভব।

ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিশ্রণের সময় পিতার শুক্রাণুর মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ বাদ যায়। শুধু মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ স্থান পায়। তবে নিউক্লিয়ার ডিএনএ অপরিবর্তিত থাকে। আর এভাবে পরীক্ষা করেই পূর্ব পুরুষের সাথে আপনার পরিচয় মেলাতে পারেন।

ডিএনএ টেস্টকে নানা নামে অবহিত করা হয় যেমন- ডিএনএ প্রোফাইলিং, ডিএনএ টাইপিং, জেনেটিক ফিংগারপ্রিন্ট ইত্যাদি । একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের ডিএনএ ৯৯.৯% মিল। ডিএনএ টেস্ট আবিস্কারের ২৫ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে বিশ্বখ্যাত Newscientist ম্যাগাজিন Sir Alec Jeffrey কে ‘Father of DNA Evidence’ বলে অভিহিত করে।

ডিএনএ টেস্ট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের নমুনা ব্যবহার করা হয় যেমন: চুল, রক্ত, লালা ইত্যাদি । বিভিন্ন ধরণের ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস যেমন: ট্রুথব্রাশ, রেজার ইত্যাদি এমনকি চিবানো চুইংগাম থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে সেই টিস্যুও নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

ডিএনএ টেস্টের পুরো প্রক্রিয়াটি যথেষ্টই জটিল। বাংলাদেশে ডিএনএ টেস্ট এখনও এত সহজলভ্য নয়। ডিএনএ টেস্ট বা ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান National forensic DNA profiling Laboratory প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০০৬ সালে।

ডেনমার্ক সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই ল্যাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আপনি কোন সমস্যায় পড়ে যদি ডিএনএ টেস্ট করাতে চান তাহলে এই ল্যাবে করাতে পারবেন না কারন এ ল্যাবে শুধু পুলিশ কতৃক রেজিস্ট্রিকৃত অথবা আদালত কতৃক নির্দেশিত মামলার ডিএনএ টেস্ট করানো হয়।

ডিএনএ সম্পর্কে কয়েকটি অবাক করা তথ্য:

১. একসাথে জোড়া লাগানো গেলে মানব শরীরের প্রতিটি কোষের ডিএনএ’র দৈর্ঘ্য হতো প্রায় ৬ ফুট। শরীরে এমন প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ থাকে। তার মানে, আপনার শরীরের প্রতিটি ডিএনএ যদি একত্রে জোড়া লাগানো হতো, তাহলে তার দৈর্ঘ্য হতো ১১০ বিলিয়ন মাইল। যা পৃথিবী থেকে সূযর্ে ৬০০ বার আসা-যাওয়ার সমান।

২. ৯৯.৯ শতাংশ মানুষের ডিএনএ বৈশিষ্ট্য একই। বাকি ০.১% দিয়েই একজন থেকে আরেকজনকে আলাদা করা সম্ভব হয়।

৩. ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে একজন মানুষের বংশধারা নির্ণয় করা সম্ভব। তার মানে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার পূর্বপুরুষ ব্রিটিশ, পর্তুগীজ, আরব, আফ্রিকান নাকি অন্য কোথা থেকে এসেছে? যা আপনি কখনো কল্পনাই করতে পারেন না!

শেয়ার করুন