মায়ের বানানো আচার ছাড়া ভাতই খাওয়া হয়না তরীর। সেই ছোটবেলা থেকে বাড়ি ভর্তি আচারের টক মিষ্টি ঝাল ঝাল মনমাতানো গন্ধের একরকম নেশা হয়ে গেছে তার। মায়ের থেকে দূরে গিয়ে ঢাকায় পড়তে আসার পর সেই নেশায় পড়লো ছেদ। নেশা আছে, কিন্তু আচারতো নেই! এর বেশ ক’বছর বাদে বিয়ের পর নিজের সংসারে মায়ের আচারের অভাব পূরণ করতে নিজেই একদিন সাহস করে বানিয়ে ফেললেন এক কেজি আমের আচার। সেই আচার খেয়ে তরীর জীবনসঙ্গী বলেই ফেললেন, “মানুষ এই আচার পেলে, টাকা দিয়ে কিনে খাবে!” এই একটি কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে সেই বানানো আচারের ছবি তুলেই তরী মেয়ে নেটওয়ার্কের ব্যবসায়িক গ্রুপ হুটহাটে সেল পোস্ট দেয়। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ‘আচারিয়ানা’র উদ্যোক্তা আফসানা ইসলাম তরীকে।
শুধু আচার নিয়ে গড়ে ওঠা ‘আচারিয়ানা’ একদম নির্মলভাবে বেড়ে উঠছে। পেইজ বুস্ট না করেই ‘আচারিয়ানা’র আচারের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এরকম প্রসারের কারণ হিসেবে আফসানা তরী তার নিয়মিত গ্রাহকদেরকেই কৃতিত্ব দিতে চান। এই নিয়মিত গ্রাহকরাই ‘আচারিয়ানা’র বড় শক্তি, কাঁচামাল, মূলধন সব বলে মনে করেন তরী।
আচারপ্রেমী তরী মনে করেন, আচারের একটি শিল্পমান রয়েছে। তরীর মতে, “ভাত, ডাল, মাছ ছাড়া বাঙালীর চলেইনা। কিন্তু আচারতো আর এগুলোর মত অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যের তালিকায় পড়েনা। কিন্তু তবু লোকে আচার খায়। কারণ একেক পদের আচার রোজকার খাদ্যাভ্যাসে যোগ করে বাড়তি স্বাদ। যেই স্বাদ আচার ছাড়া দুষ্প্রাপ্য। আর তাইতো আমার মত যারা খাবারকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়ে দুইবেলা খাবার খান, তাদের কথা ভেবেই নাহয় আচারিয়ানা চলুক!”
‘আচারিয়ানা’র প্যাকেজিং, মার্কেটিং সবকিছুতেই নতুনত্ব পাওয়া যায়। তরীর মতে, “আমার মত আচার পাগল মানুষের কাছে আচার এক অমূল্য উপহার। আর তাইতো নিয়মিত বোতলের বাইরেও পুরনো সিন্দুকের আদলে আমরা এনেছি আচারি সিন্দুক। আর আমাদের যেহেতু স্যুটকেস ভর্তি করে আচার নিয়ে যাওয়া প্রবাসী ক্রেতা প্রচুর, তাই আচারের প্যাকেজিং-এ আমরা বাড়তি সতর্কতা পালন করি।”
সংগীতে উচ্চশিক্ষা নেওয়া আফসানা তরীর শিল্পীস্বত্ত্বার প্রভাব পড়ে তার কাজেও। গান তার এক প্যাশন, আচার তার আরেক ভালোবাসা। এ দুইয়ের মাঝে ক্যারিয়ার হিসেবে আচারকে বেছে নিতে এতটুকু দ্বিধা কাজ করেনি তরীর। কিন্তু এই ক্যারিয়ারকে পরিচিত সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতেই অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে এই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। তরী জানান, “আচারিয়ানা আমাকে কত কী যে শেখাচ্ছে প্রতিদিন। ক্রেতাবান্ধব ব্যবসা করা শিখেছি আমি। নিজেকে সবসময় ক্রেতার জায়গায় বসিয়ে আমার ব্যবসার স্ট্র্যাটেজি ঠিক করি। মাথা ঠান্ডা রেখে ক্লায়েন্ট ডিল করতে পারা অনলাইন ব্যবসায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটাও শিখছি। পরিকল্পনা করা শিখেছি।”
“আচারের শৈল্পিক দিকটা প্রতিষ্ঠিত করা কিন্তু অনেক কঠিন! আচার নিয়ে মানুষের মাঝে কত যে ভুল ধারণা যে আচার শুধু মেয়েরা খায়, আচার খেলে পেটে ব্যাথা হয়। এসব ধারণা থেকে বের করে এনে আমার ক্লায়েন্ট বেইস তৈরী হচ্ছে যেখানে বর্তমানে আমার পুরুষ ক্রেতাও প্রায় ৪২ শতাংশ। এই ছোট ছোট বিষয়গুলোকেও আমি খুব ইতিবাচকভাবে দেখি।”- বলছিলেন তরী।
যার অনুপ্রেরণায় উদ্যোগের শুরু, ‘আচারিয়ানা’র নামটিও তারই দেয়া। প্রিয় খাবার, প্রিয় মানুষ, প্রিয় কাজ এসবকিছুর সমন্বয়ে ‘আচারিয়ানা’ আজ ১০ জন কর্মীর এক পরিবার। এই পরিবারের আছে নিজস্ব অফিস। সেই পরিবারে নিত্য শামিল হচ্ছে আচারিয়ানার গ্রাহকেরা। আর আচারের সব মসলা তো আসছে সেই মায়ের কাছ থেকেই। আচার নিয়ে তরীর পরিকল্পনা অনেক। খুব বাণিজ্যিকভাবে কিছু করার কথা এখনই না ভাবলেও নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আচারের বাজার তৈরির পথে হাঁটছেন আফসানা ইসলাম তরী। তরীর ইচ্ছা জিভে জল আনা এই পণ্যটি মানুষের রুচিবোধের সাথে সমন্বয় করে রুচি বাড়াক। সবার পছন্দের উপহার হোক ‘আচারিয়ানা’র আচার।
ফেইসবুক পেইজ লিংক: আচারিয়ানা