চার বছর বয়সী ছোট্ট অরিত্রীর ফোন এলো এমি চৌধুরীর কাছে। ওর ছোটবোন অদ্রির পৃথিবীতে আসার একশতম দিনে অরিত্রী কিছু দিতে চায়। সে এমিকে বললো যে একটা বেলুন কেক চাই। রং বেরঙের বেলুন থাকতে হবে সেই কেকে। কেন? কারণ অরিত্রী অনেক রং দিতে চায় ওর ছোট্ট বোনটিকে। “গল্পটা সুন্দর না!”-হেসে বললেন এমি। এমন হরেক রকম গল্প নিয়েই এমির ‘কেকের গল্প’র পথচলা।
আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে আইনজীবী হিসেবেই ক্যারিয়ার এমি চৌধুরীর। কিন্তু কাজের ফাঁকেই বাড়িতে বানাতেন কেক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই কেক বানাতেন। বাসার মানুষের বাইরে আত্মীয়-বন্ধুদেরকেও নিজ হাতে কেক বানিয়ে খাওয়াতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বানিয়ে নিয়েও যেতেন। এমির কেকের স্বাদের প্রশংসা করতে করতেই সবাই কেক নিয়ে আরেকটু ভাবার জন্যে উৎসাহ দিতে লাগলো।
“সাহস হচ্ছিলনা প্রথম দিকে। শখ করে বানানো আর প্রফেশনালি সেটা সরবরাহ করার মাঝে তফাত আছে তো! তাই কাস্টমাইজড কেক নিয়ে কাজ করেন এমন একজন নাইমা তাসনিমের কাছে ছোট্ট একটা কোর্স করে নিলাম। তারপর থেকেই কেকের গল্পের যাত্রা শুরু” – বলছিলেন এমি।
উদ্যোগের নাম কেকের গল্প কেন? জানতে চাইলে একগাল হেসে এমির জবাব- “আমার বানানো প্রতিটা কেকের পেছনে কতশত গল্প যে খুঁজে পাই! মানুষ যখন কাস্টমাইজড কেকের খোঁজ করে তখন তার পেছনে অনেক কাহিনী থাকে। যেমন কেউ তার মাকে জন্মদিনে উপহার দিতে চায় একটা শিউলি ফুলের ঝুড়ি। কারণ মা তার কিশোরীবেলার শিউলি কুড়ানোর গল্প করতে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন। মায়ের মিষ্টি স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করার যে এই প্রয়াস সেটা কি ভীষণ মিষ্টি না!
এক গ্রাহক তার বন্ধুর জন্য তার প্রিয় বই আর কফিশপের কফি মগটা উপহার দিতে চায়।সেই নির্দিষ্ট কফিশপের মগটা কিংবা বইয়ের মলাটটা কেকে যখন ফুটিয়ে তুলি তখন মাঝে মাঝে চোখে পানি চলে আসে এটা ভেবে যে কতশত আনন্দের কারণ হচ্ছে আমার বানানো কেক। আবার সব গল্প যে শুধু গ্রাহকদেরই তা নয়। আমার নিজেরও অনেক গল্প জড়িয়ে যায় কেক বানাতে বানাতে। যেহেতু আমি চাকরির পাশাপাশি এই উদ্যোগ সামলাই, তাই অফিসের পর এগুলো করতে হয়। কত রাত জাগা কাজ অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। আবার শুরু থেকে শুরু করতে হয়। বাড়ির লোকেরা পর্যন্ত বিশেষ করে আমার মা নির্ঘুম রাত কাটায় আমার সাথে।”
আমি মূলত বাটারক্রিমের সাথে সেমিফনডেন্ট, মডেলিং চকলেট দিয়ে কাজ করি। আমার ডার্ক চকলেট, রেড ভেলভেট, চিজ কেক, লেমন ফ্লেভারড কেকগুলোর বেশি চাহিদা।
অনলাইনভিত্তিক কেকের এখন অনেকগুলো উদ্যোগ রয়েছে। এদের মাঝে কিছু উদ্যোগ যথেষ্ট পসার পেয়েছে। গ্রাহকের আস্থা অর্জন করে এদের সাথে বাজারে টিকে থাকা আমার মত ছোট উদ্যোক্তার জন্য যথেষ্ট কষ্টকর। কাসটমাইজড কেক বানানোর ক্ষেত্রে খরচ বেশি পড়ে। অথবা কোন নির্দিষ্ট ডিজাইন চাইলে সেটার আকার ঠিক রেখে কাজ করতে হয়। তার চেয়ে ছোট করা যায়না। অনেক সময় এগুলো বোঝানো যায়না গ্রাহককে। অনলাইনভিত্তিক কেকের ব্যবসার আরেকটা চ্যালেঞ্জ হল ডেলিভারি। কেক ডেলিভারি করে যেসব গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান, সেগুলো যথেষ্ট ব্যয়বহুল। সেক্ষেত্রে গ্রাহক নিজে সেই খরচ বহন না করতে চাইলে হোম ডেলিভারির সুবিধা সবসময় দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা। আবার পিকআপ ব্যবস্থা অনেকের জন্য সম্ভবপর হয়না।”- এভাবেই তার ছোট্ট উদ্যোগের চ্যালেঞ্জের কথা বলছিলেন এমি।
এখন পর্যন্ত এমি এই উদ্যোগের পুরোটুকুই সামলাচ্ছেন একা হাতে। ভবিষ্যতে নিজের একটা কেক স্টুডিও হবে যেখানে আরও মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারবেন এমন পরিকল্পনা আছে এমির। “এমির নামে না, কেকের গল্পের নামে মানুষ এমিকে চিনবে”- উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে এমির এই কথাগুলোর সাথে তার স্বপ্নালু চোখজোড়াও যেন ঝলমল করে ওঠে।
এমির কেকের গল্প-এর ফেইসবুক পেইজের লিংক: কেকের গল্প