চার বছরে ৪৩ জন অপহরণ ও দেড় শতাধিক ডাকাতি
আতঙ্কের নাম বাইশারী-গর্জনিয়া সড়ক

ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে বান্দরবানের রাবার শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত বাইশারী ইউনিয়নসহ নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু ও কঙবাজার সদর উপজেলার আশপাশের কমপক্ষে বিশটি গ্রামের মানুষ। অভ্যন্তরীণ সড়কে গাড়ির গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে ডাকাতি এবং অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা এ অঞ্চলের মানুষদের কাছে এখন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে নিহত ডাকাত সর্দার মোহাম্মদ হাকিমকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দূর্ধর্ষ ডাকাত আনোয়ার হোসেন প্রকাশ আনেয়ার ডাকাতের স্ত্রী হামিদা বেগমকে গ্রেফতার করায় বাইশারী পুলিশ ফাঁড়ির সাব ইন্সপেক্টর আবু মূছা এবং বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন আনেয়া ডাকাত।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের সঙ্গে কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগাহ পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ সড়কপথ রয়েছে। এছাড়াও বাইশারী ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী কক্সবাজারের কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, গজালিয়া, বড়বিল, মাঝিরকাটা, ঈদগড়, চাইল্যাতলী, হাতিভাঙা, বেংডেফা, অলিরঝিরি, বৈদ্যপাড়া, ধুমচাকাটা, অর্জুন বাগান, চনখোলা এবং নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা রয়েছে।

অভ্যন্তরীণ সড়কসহ অধিকাংশ এলাকা নির্জন হওয়ায় এখানে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। তাদের মধ্যে ডাকাত আনোয়ার হোসেন প্রকাশ আনেয়ার বাহিনী অন্যতম । তার একসময়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন ডাকাত সর্দার আব্দুল হাকিম। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর সম্প্রতি জামিনে বেড়িয়ে এসে গড়ে তোলে হাকিম বাহিনী। আধিপাত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন আনেয়া বাহিনী এবং হাকিম বাহিনী ।

নিখোঁজ হওয়ার নয়দিন পর চলতি মাসের ২রা জুলাই বাইশারী ইউনিয়নের ক্যাজাইহ্লা ঘোনা পাহাড়ের ঝিড়ির পার্শ্ববর্তী মাটির গর্ত থেকে ডাকাত আব্দুল হাকিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩ জুলাই নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় নিহত ডাকাতের মা আমেনা খাতুন বাদি হয়ে আনেয়ার বাহিনীর প্রধান আনোয়ার হোসেনসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় পুলিশ আনেয়ার ডাকাতের স্ত্রী হামিদা বেগম, ডাকাত গিয়াস উদ্দিন এবং মোহাম্মদ তারেক ৩ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ডাকাত সর্দার আনোয়ার হোসেন বাইশারী পুলিশ ফাঁড়ির সাব ইন্সপেক্টর আবু মূছা এবং বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত সাড়ে চার বছরে ৪৩ জনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করেছে সশস্ত্র ডাকাতরা। তারমধ্যে ২০১৪ সালে ১৫ জন, ২০১৫ সালে ১৩ জন, ২০১৬ সালে ৩ জন, ২০১৭ সালে ৬ জন এবং ২০১৮ সালে ৬ জন। আর সড়কে গাড়ি থামিয়ে এবং বসতবাড়ি ও রাবার বাগানে ডাকাতির ঘটনা ছাড়িয়েছে দেড় শতাধিক। ডাকাতের হামলায় আহত হয়েছে পুলিশ সদস্যও।

বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান, বিকল্প রাস্তা না থাকায় রাবার শিল্পাঞ্চল বাইশারী ইউনিয়নের প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ বাইশারী-ঈদগড়-ঈদগাহ সড়ক পথেই চলাচল করে। এ সড়কে দিনে-রাতে ঘটছে ডাকাতি এবং অপহরণের ঘটনা। এ সড়কের নিরাপত্তায় নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু এবং কঙবাজার সদর তিনটি উপজেলার প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলে এ সমস্যা থেকে উত্তোরণ সম্ভব হবে।

বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাব-ইন্সপেক্টর আবু মূছা জানান, সম্প্রতি বাইশারী ইউনিয়ন আবারো অশান্ত হয়ে উঠেছে। কক্সবাজারের আওতাধীন অঞ্চলগুলোতে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। ঐ গ্রুপগুলোর সঙ্গে ডাকাত সর্দার আনোয়ার হোসেনের যোগসূত্র রয়েছে। তারা যৌথভাবে অপহরণ করে অপহৃতদের বাইশারীর পাহাড়ি অঞ্চলে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পর ছেড়ে দেয়। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার জানান, ডাকাতি, অপহরণ, খুনসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বাইশারী-ঈদগড়-ঈদগাহ সড়কটি বান্দরবান এবং কক্সবাজারের দুটি উপজেলার সংযোগ সড়ক। দুটি জেলার মধ্যবর্তী অঞ্চল বাইশারী ইউনিয়নকে ঘিরে মূলত সন্ত্রাসী কয়েকটি গ্রুপ অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘঠিত করছে। এগুলো বন্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সৌজন্যে ঃ দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ অনলাইন

শেয়ার করুন