২১৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ

  • জয়ের জন্য ৩৩৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১২৩ রানেই অলআউট বাংলাদেশ।
  • ফিফটি পাননি কোনো ব্যাটসম্যানই। সর্বোচ্চ ৩৩ রান মুমিনুল হকের।

মিরপুর টেস্টে জয়ের জন্য চতুর্থ ইনিংসে তিন শতাধিক রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ২৯.৩ ওভার টিকতে পেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রায় আড়াই দিনেই টেস্ট হারল মাহমুদউল্লাহর দল। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১২৩ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ২১৫ রানের বিশাল জয়ে টেস্ট সিরিজ ১–০ ব্যবধানে জিতল শ্রীলঙ্কা।

শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চতুর্থ ইনিংসে এত রান (৩৩৯) তাড়া করে কোনো দলই জিততে পারেনি। এমন কঠিন লক্ষ্যের পিছু ছুটে বাংলাদেশ হাস্যকর ব্যাটিং করেছে। দলটির প্রথম ইনিংসে শেষ ৫ উইকেট পড়েছিল মাত্র ৩ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য তারা এর চেয়ে ভালো করেছে। ২৩ রানে পড়েছে শেষ ৬ উইকেট!

নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই তামিম ইকবালকে হারায় বাংলাদেশ। দিলরুয়ান পেরেরার প্রথম বলেই এলবিডব্লিউর শিকার হন তামিম (২)। রিভিউ নিলেও তা কাজে লাগেনি। অন্য প্রান্তে বেশ দ্রুতলয়ে খেললেও ইমরুল কায়েস বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। বলা ভালো, ইমরুল আরেকটু ধৈর্য ধরলেও পারতেন। ১১তম ওভারে রঙ্গনা হেরাথকে লং অফ দিয়ে ছক্কা মারার পরের বলেই ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। এরপরই শুরু হয় আসা–যাওয়ার মিছিল। মধ্যাহৃ বিরতিতে যাওয়ার আগে ১৪ ওভারে শুধু তামিম–ইমরুলকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে ১৫.৩ ওভারেই পড়েছে বাকি ৮ উইকেট!

দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই ফিরে যান মুমিনুল হক। এ সেশনে তৃতীয় ওভারে প্রথম বলেই হেরাথের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুমিনুল (৩৩)। এরপর মুশফিকের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন লিটন দাস। ২১তম ওভারে আকিলা ধনঞ্জয়ার লাফিয়ে ওঠা বল তাঁর ব্যাটের হাতলে লেগে জমা পড়ে ফিল্ডারের হাতে। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর কাঁধে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তাঁর ইনিংস টিকেছে মাত্র ৮ বল। ধনঞ্জয়ার বলে কিছুটা এগিয়ে এসে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে বলের ফ্লাইট মিস করে স্লিপে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ (৬)।

মাহমুদউল্লাহ ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই হেরাথকে উইকেট দেন মুশফিকুর রহিম। তাঁর ঘূর্ণিতে বোকা বনে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন মুশফিক (২৫)। তিনি ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই জোড়া উইকেট তুলে নেন ধনঞ্জয়া। প্রথম বলে সাব্বিরকে তুলে নেওয়ার পর চতুর্থ বলে ফিরিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাককে। বাংলাদেশের ইনিংসে লেজ মুড়িয়ে কাজটুকু সেরেছেন হেরাথ। শেষ উইকেট তাইজুলকে তুলে নিয়ে দারুণ এক কীর্তি গড়েছেন শ্রীলঙ্কার এ বাঁহাতি স্পিনার। টেস্টে বাঁহাতি বোলারদের মধ্যে ওয়াসিম আকরামকে টপকে হেরাথই এখন সর্বোচ্চ (৪১৫) উইকেটশিকারি। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে কীর্তি গড়েছেন লঙ্কানদের আরেক স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়াও। শ্রীলঙ্কার হয়ে অভিষেক টেস্টে আকিলার বোলিং ফিগারই (৩৯ রানে ৮ উইকেট) সেরা।

আসলে দুই লঙ্কান স্পিনারকে দুহাত ভরে সাফল্য উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরাই। তার একটা তুলনামুলক পরিসংখ্যান দেওয়া যায়। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৭.৭ শতাংশ ‘ফলস শট’ খেলেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে যেহেতু লড়াইটা আরও কঠিন তাই ধৈর্য নিয়ে খেলার কথা ছিল ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো, এই দ্বিতীয় ইনিংসেই ‘ফলস শট’–এর হার ২১.৪ শতাংশ! যে কারণে মুড়ি–মুড়কির মতো পড়েছে উইকেট আর তাতে ভুলে যাওয়ার মতো এক কীর্তিও গড়েছে বাংলাদেশ—শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চতুর্থ ইনিংসে এই ১২৩ রানই সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর!

শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংম ২২২, দ্বিতীয় ইনিংস ২২৬। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ১১০।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস
  রান বল
তামিম এলবি পেরেরা
ইমরুল ক ডিকভেলা ব হেরাথ ১৭ ২২
মুমিনুল ক ডিকভেলা ব হেরাখ ৩৩ ৪৭
মুশফিক স্টাম্পড ডিকভেলা ব হেরাথ ২৫ ৫১
লিটন ক মেন্ডিস ব ধনঞ্জয়া ১২ ২০
মাহমুদউল্লাহ ক করুনারত্নে ব ধনঞ্জয়া
সাব্বির ক মেন্ডিস ব ধনঞ্জয়া
মিরাজ ক ডিকভেলা ব ধনঞ্জয়া
রাজ্জাক স্টাম্পড ডিকভেলা ব ধনঞ্জয়া
তাইজুল ক গুনাতিলকা ব হেরাথ
মোস্তাফিজ অপরাজিত
অতিরিক্ত (বাই ৬, লে বাই ১)
মোট (২৯.৩ ওভার, অলআ্উট) ১২৩
উইকেট পতন: ১-৩ (তামিম, ১.১), ২-৪৯ (ইমরুল, ১০.৩), ৩-৬৪ (মুমিনুল, ১৬.১), ৪-৭৮ (লিটন, ২০.৫), ৫–১০০ (মাহমুদউল্লাহ, ২৪.১), ৬–১০২ (মুশফিক, ২৫.৬), ৭–১০২ (সাব্বির,২৬.১), ৮–১০৪ (রাজ্জাক, ২৬.৪), ৯–১১৩ (মিরাজ, ২৮.৪), ১০–১২৩ (তাইজুল, ২৯.৩)।
বোলিং: লাকমল ৩-০-১১-০, পেরেরা ১০-০-৩২-১, হেরাথ ১১.৩-১-৪৯-৪, ধনঞ্জয়া ৫-১-২৪-৫।
ফল: শ্রীলঙ্কা ২১৫ রানে জয়ী।
ম্যাচ ও সিরিজ সেরা: রোশেন সিলভা।
সিরিজ: দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজ ১–০ ব্যবধানে জিতল শ্রীলঙ্কা।
শেয়ার করুন