স্বামী ছুটি না পাওয়ায় স্ত্রীর অকালমৃত্যুর অভিযোগ

নবরতন চাকমা ও বিপাশী চাকমা।

স্বামী ছুটি না পাওয়ায় সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর অকাল মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ‘পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’-এর রামগড় শাখার মাঠকর্মী নবরতন চাকমা।

তিনি এজন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির মানিকছড়ি এরিয়া ম্যানেজার ইকবাল বিন তৈয়বকে দায়ী করেছেন।

মাঠকর্মী নবরতন চাকমা জানান, ‘রামগড়ে পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন সংস্থার মাঠকর্মী হিসেবে আট মাসে যোগ দিই। স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতাম। সোমবার আমাকে প্রশাসনিক কারণে রামগড় থেকে মানিকছড়িতে বদলি করা হয়। আড়াই মাসের অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রীকে রামগড় ভাড়া বাসায় রেখে মানিকছড়িতে যোগ দিই। যোগদানের পর অসুস্থ স্ত্রী আমাকে ফোন করে তার অসুস্থতার কথা জানায়। স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য আমি একাধিকবার ম্যানেজারের কাছে ছুটি চাই। স্ত্রী অসুস্থ জেনেও তিনি আমাকে ছুটি দেননি। ছুটি না পাওয়ায় বাড়ি যেতে পারিনি। শারীরিককভাবে অসুস্থ স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য ২ দিন ছুটি চাইলেও মন গলেনি ম্যানেজারের।

তিনি আরো জানান, ‘বুধবার আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়। এ সময় সহকর্মীরা আমাকে দ্রুত রামগড় হাসপাতালে আসতে বলে। তখনও জানতাম না আমরা স্ত্রী মারা গেছে। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম আমার স্ত্রী মারা গেছে। তার সাথে শেষ দেখাও হয়নি, কোন কথা বলার সুযোগও পাইনি।’

বিষয়টি নিয়ে মাঠকর্মী নবরতন চাকমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়ার পর সমালোচনার ঝড় উঠে। এমন অমানবিক কর্মকান্ডের জন্য এরিয়া ম্যানেজারকে দুষছেন সবাই। করোনার মতো মহামারীর সময়েও এমন অমানবিক কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান অনেকে।

নবরতন চাকমার স্ত্রী বিপাশী চাকমার মৃত্যুর জন্য এরিয়া ম্যানেজারকে দায়ী করে বিচার দাবি করেছেন স¦জনরা।
তাঁরা বলেন, এরিয়া ম্যানেজারের গাফিলতির কারণে বিপাশী চাকমার মৃত্যু হয়। তার গর্ভের সন্তানও মারা যায়। এরকম যাতে আর কারো ক্ষেত্রে না ঘটে। আমরা এর বিচার চাই।

এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র-এর মানিকছড়ি এরিয়া ম্যানেজার ইকবাল বিন তৈয়ব। এই নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ঐ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘পদক্ষেপের একজন কর্মী হয়ে নব রতন এভাবে ফেসবুকে লিখতে পারেন না। তার অভিযোগ মিথ্যা। তিনি আমার কাছে সেভাবে ছুটি চাননি। তার স্ত্রী স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তিনি (নব রতন চাকমা) সেখানে (রামগড়) থাকলেও মারা যেত।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন-খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি এড. মহিউদ্দিন কবির বাবু বলেন, ঘটনাটি সংবেদনশীল এবং তদন্তযোগ্য। মৃত নারীর মরদেহ পোস্টমর্টেম সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া আইনসম্মত। যেহেতু স্বজনরা দাবি করছেন, স্বামীর অনুপস্থিতির কারণে তাঁর (বিপাশী চাকমা)-এর যথাযথ চিকিৎসার অভাব ঘটেছে। তাই মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের প্রশ্নেই এই ঘটনার সুষ্ঠু সুরাহা কাম্য।

শেয়ার করুন