নিজেকে তিনি অলস বলেন। তার পড়ার টেবিলেও মন বসেনা। উচ্চাভিলাসীও মনে করেন না নিজেকে। চাকরির বাজারে পা রেখেও পিছিয়ে এসেছেন অসুস্থ প্রতিযোগিতার দৌরাত্ম দেখে। কিন্তু যার ভেতরে আছে সৃষ্টি করার স্পৃহা, তিনি নিজেকে যা-ই বলুননা কেন দমিয়ে তো আর রাখতে পারবেন না! এরকমটাই হয়েছে ‘ফিনারী’-র উদ্যোক্তা ড চিং চিং-এর।
“‘ফিনারী’ যখন যাত্রা শুরু করে তখন আমি উদ্যোক্তা শব্দটার সাথেও পরিচিত ছিলামনা। চাকরি করবোনা বলে যখন মনস্থির করলাম, তখন নিজের ছবি আঁকতে পারার প্রতিভাকেই মূলধন বানিয়ে কাজে নেমে পড়লাম। প্রথমে খবরের কাগজ দিয়ে ঘর সাজানোর জিনিস বানাতাম। তখনো পেইজ খুলিনি। ফেইসবুকে নিজের টাইমলাইনে সেগুলোর ছবি দিতে দিতেই পণ্যগুলোর পসার ছড়ালো। এরপর একদিন এক অফিসে গিয়ে দেখলাম সেখানে প্রতিটি টেবিলেই কাঁচের পানির বোতল রাখা। কিন্তু সেগুলো বড্ড ম্লান ঠেকলো আমার চোখে। এরপর কাঁচের বোতল কিনে এনে তাতে রিক্সাপেইন্ট করা শুরু করলাম।”-এভাবেই ফিনারীর যাত্রা শুরুর কথা বলছিলেন ড চিং চিং।
২০১৬ সালে পুরোদমে ব্যবসা শুরুর প্রয়াস থেকে ফেইসবুকে পেইজ খোলার মাধ্যমে ‘ফিনারী’ আত্মপ্রকাশ করলো।
ফিনারী কিভাবে ‘ফিনারী’ রূপ পেলো সে ব্যাপারে ড চিং চিং বলেন,- “আমার কাজ যেহেতু গতানুগতিক নয়, তাই এর নামও হওয়া উচিত অন্যরকম। এই ভাবনা থেকেই বেছে নিলাম ল্যাটিন শব্দ ‘ফিনারী’, যার অর্থ হলো সূক্ষ্ম কারুকার্য। ‘ফিনারী’র পণ্যগুলো খুব দ্রুত প্রশংসা পেল। এমনকি বিখ্যাত সব শিল্পীদের পছন্দের তালিকাতেও যোগ হলো। বিপ্লব সাহা, বিজরী বরকতউল্লাহর মত শিল্পীরাও খুব প্রশংসা করলেন। তখন থেকে আমি বুঝতে শুরু করলাম যে আমি একজন উদ্যোক্তা যে কিনা স্বতন্ত্রভাবে কিছু করতে সক্ষম।”
নিজের কাজের স্বীকৃতি কে না চায়! ড চিং চিং এর উদ্যোগ নিয়ে পথচলার মাঝে তিনি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পেয়েছেন অনেকগুলো সম্মাননা। এসব সম্মাননা বা স্বীকৃতিকে ড চিং চিং নিজের কাজের অনুপ্রেরণা বলে মনে করেন।
“একেকটি স্বীকৃতি আমার পথচলার একেকটি মাইলফলক”।-বলেন ড চিং চিং। তিনি আরো যোগ করেন, “আরেকটি মাইলফলক ছিল ঢাকার বনানীতে ‘ফিনারী’র শোরুম স্থাপন করা। ২০১৯ সালে যখন শোরুমটা চালু হয় তখন আমার সাথে কাজ করেন আরো ১৭ জন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই করোনা মহামারীর প্রকোপের কারণে শোরুম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। সহকর্মীর সংখ্যাও কমে আসে। কিন্তু আমার মূল যে গ্রাহক তারা আমার উদ্যোগের লক্ষ্মী। এই সঙ্কটকালেও আমার গ্রাহকেরাই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। শৌখিন পণ্যের উদ্যোক্তা হয়েও ক্রান্তিকালে ব্যবসা চালিয়ে নিতে পেরেছি শুধুমাত্র তাদের আস্থার ভরসাতেই।”
করোনা মহামারীর প্রকোপে ছোট উদ্যাক্তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমনিতেও অপেক্ষাকৃত বড় উদ্যোগগুলো ছোট উদ্যোগকে নানা ভাবে ব্যবহার করে থাকে বলে ড চিং চিং নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ‘দেশীয়’ নামের একটি সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে আপদকালীন সময়ে উদ্যোক্তাদের সহায়তা বা ঝণ প্রদান থেকে শুরু করে, উদ্যোক্তাদের জন্য তহবিল গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা। করোনাকালীন দুরবস্থায় এ সংগঠনের আওতাধীন উদ্যোগগুলোকে নিয়ে আয়োজন করেছেন ‘মঙ্গলহাট’ নামে অনলাইন মেলা।
উদ্যোক্তাদের অনেক অনেক চ্যালেন্জের মধ্যে শুধু টিকে থাকবার লড়াই করেই নয়, বরং সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মাথা উঁচু করে উদ্যোক্তাজগতে বিচরণের পথ নিজের এবং অন্যদের জন্য সুগম করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন ড চিং চিং তার সুনিপুণ কারুকার্যময় ‘ফিনারী’র সঙ্গে।
ফিনারীর ফেইসবুক পেইজ: ফিনারী