ময়নাতদন্তে কীভাবে বোঝা যায় ব্যক্তিটি কখন, কীভাবে মারা গেলেন?

ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত প্রতীকি ছবি।

কোথাও কোনো মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গেলে খবর পেয়ে পুলিশ আসে। তারপর সেটি উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের ময়নাতদন্ত কেন্দ্রে। এরপর বিশেষজ্ঞরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলে দিতে পারেন লোকটি কখন, কীভাবে মারা গেছেন।

এই ময়নাতদন্তের ধাপগুলো কী কী? কী কী লক্ষণ দেখে বা পরীক্ষা করে ডাক্তাররা বুঝে যান মৃত্যুর কারণ এবং সময়? আসুন জেনে নেয়া যাক।

মৃত্যুর সময় নির্ধারণ (ল্যাবের বাইরে):

  • শরীরের তাপমাত্রা: একজন জীবিত মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা সাধারণত ৯৮.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর মতো এবং মৃত্যুর পর তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে (সাধারণত প্রতি ঘণ্টায় ১-২ ডিগ্রী) যতক্ষণ পর্যন্ত কক্ষের তাপমাত্রার সমান না হয়ে যায়। এছাড়াও একজন ব্যক্তির রক্তে অ্যালকোহলের মতো কোনো উপাদান থাকলেও তা ফলাফল অনেকখানি পরিবর্তন করে দিতে পারে। তাই কক্ষের তাপমাত্রায় দেহটা পৌঁছানোর পূর্বে যদি একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি দেহটা পর্যবেক্ষণ করেন তবে উক্ত স্থানেই বলে দিতে পারেন কত সময় পূর্বে সে মারা গেছে।
  • পেশীর অবস্থা: একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে তার সম্পূর্ণ দেহের সকল পেশি শক্ত এবং সঙ্কুচিত হতে থাকে এবং সাধারণত ১৫ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ সঙ্কুচিত এবং শক্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে একজন ডক্টর বা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দেখেই মৃত্যুর সময় বলে দিতে পারেন।
  • দেহের পঁচনশীলতার অবস্থা: যদিও সদ্য মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে সঠিকভাবে কিছু বলা সম্ভব না, তবে কিছু সময় যাবত যদি মৃত্যু হয়ে থাকে এবং লাশ পঁচতে শুরু করে দেয় তবে পঁচার অবস্থা দেখে মৃত্যুর সময় বলা সম্ভব। অবশ্য আশেপাশের অবস্থার উপর এই পদ্ধতিটা নির্ভরশীল। যেমন: স্বাভাবিক তাপমাত্রায় একটি লাশ যত সময়ে পঁচা শুরু করবে, স্বাভাবিকের চেয়ে গরম কিংবা ঠান্ডা তাপমাত্রায় একই গতিতে পঁচবে না।
  • পাকস্থলীর খাবার এবং অন্যান্য অবস্থা (ল্যাবের ভিতর): পাকস্থলীতে অবস্থিত খাবার এবং উক্ত খাবারের হজম অবস্থা দেখে মৃত্যুর সময় নির্ধারণ করা সম্ভব।
  • চোখের অবস্থা: মৃত্যুর পর সাধারণত চোখের আশেপাশে যেটুকু পানি থাকে তা ধীরে ধীরে একটা নির্দিষ্ট সময়ে শুকিয়ে যায় এবং চোখের আইরিস এর আকারেও কিছুটা পরিবর্তন আসে যা দেখে বোঝা সম্ভব ব্যক্তি কখন মারা গেছেন।
  • ত্বকের অবস্থা: রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার কারণে চামড়া শুকিয়ে যায় এবং আর আগের মতো নমনীয় থাকে না যা দেখে বলা সম্ভব ব্যক্তি কখন মারা গেছেন। (পানিতে ডুবানো লাশের ক্ষেত্রে পঁচন একটা আলাদা নির্দিষ্ট সময়ে এবং পরিমাণে হতে থাকে)
  • মুখের ভেতরের অবস্থা: মুখের ভিতর অবস্থিত আণুবীক্ষণিক জীবাণুর অবস্থা থেকেও মৃত্যুর সময় নির্ধারণ করা সম্ভব।
  • রক্তের অবস্থা ও অবস্থান: যেহেতু রক্ত চলাচল মৃত্যুর সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায় তাই শরীরের বাকি রক্তগুলো একসাথে মধ্যকর্ষণ বলের কারণে দেহের যেকোনো একস্থানে জমা হতে থাকে। যদি রক্ত জমাট না বাঁধে তবে বলা যায় কিছুক্ষন আগেই মৃত্যু ঘটেছে।
  • পোকামাকড়ের উপস্থিতি: সাধারণত পুরনো মৃত্যুর ক্ষেত্রে দেহে পঁচন ধরা শুরুর পর যেসকল পোকামাকড় সাধারণত শরীরের মাংস খেতে শুরু করে তাদের অবস্থা দেখেও মৃত্যুর সময় বলে দেওয়ার মতো জ্ঞান এবং ক্ষমতা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের থাকে।

মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ:
চিকিৎসা পেশাজীবি হিসেবে যিনি ময়না তদন্ত করে থাকেন তাকে Pathologist বলা হয়। pathology হলো চিকিৎসা বিজ্ঞানের এমন একটা বিভাগ যেইা সাধারণত ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ এবং মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পড়াশুনা এবং কাজ করে।

একজন ব্যক্তির সঠিক মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে উক্ত ব্যক্তির দেহের উপর এবং দেহের বিভিন্ন অংশের উপর একজন Pathologist বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই কেবল নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন যে উক্ত ব্যক্তি কিভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ, যখন একজন ব্যক্তি মারা যান এবং তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তখন নিশ্চয়ই একজন ব্যক্তি এসে মৃত ব্যক্তির মেডিক্যাল হিস্টোরি জানতে চান এবং সকল কিছু নোট করে নিয়ে যান।

এরপর ধরুন যদি তার পূর্বে Cardiovascular অথবা হৃদপিণ্ডের কোনো সমস্যা থাকে তবে প্রথমেই হৃদপিন্ডে পরীক্ষা করে দেখা হবে অ্যাটাক বা ফেইলিয়ারে মারা গেছেন কি না। এরপর ব্রেইন এবং শরীরের অন্যান্য কোষের অবস্থা, কোনো ভাইরাস কিংবা ক্যান্সার কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, শরীরে বিষ জাতীয় কোনো কিছুর উপস্থিতি ইত্যাদি একের পর এক পরীক্ষা করে শেষে মৃত্যুর সঠিক একটা কারণ নিশ্চিত করা হয়।

এতোসব পরীক্ষা নিরীক্ষার পরও যদি নিশ্চিত হওয়া না যায়, ব্যক্তিটি কীভাবে মারা গেলেন, তখন ‘মৃত্যুর কারণ অনিশ্চিত’ – এই ধরনের কিছু লিখে রিপোর্ট দেওয়া হয়।

শেয়ার করুন