রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮
বিশ্বকাপ এখন শুধু ইউরোপের!

বিশ্বকাপে ইউরোপ আর লাতিনের দাপট সব সময়ই। ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার টুর্নামেন্টটিতে ইউরোপিয়ান দল ১১ আর লাতিনরা জিতেছে ৯ বার। এবার রাশিয়ায় আরো এগিয়ে গেল ইউরোপ। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই যে ঝরে পড়েছে লাতিনের শেষ দুই প্রতিনিধি ব্রাজিল ও উরুগুয়ে। গত পরশু নেমেছে দুটিই। কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় উরুগুয়ের। বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্ম ২-১ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিলকে। ভেসে যায় নেইমার, কৌতিনিয়োদের হেক্সা স্বপ্ন। আর তাতে দ্বাদশ বিশ্বকাপ জয় নিশ্চিত ইউরোপের, কোনো একটি দেশের ব্যানারে।

সেমিফাইনাল এখন হয়ে পড়েছে ‘অল ইউরোপিয়ান’। এমন হলো এ নিয়ে পঞ্চমবার। প্রথমবার ১৯৩৪ সালে। ১৬ দল নিয়ে সেই বিশ্বকাপ ছিল নক আউট ফরম্যাটের। ব্রাজিল প্রথম ম্যাচে স্পেনের কাছে হেরে বসে ১-৩ গোলে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে সুইডেন ৩-২ গোলে হারায় আর্জেন্টিনাকে। কনকাকাফ অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রকে ৭-১ গোলে ইতালি আর আফ্রিকার মিসরকে হাঙ্গেরি হারায় ৪-২ গোলে। কোয়ার্টার ফাইনালের আট দলই হয়ে যায় ইউরোপিয়ান। সেমিফাইনালে অস্ট্রিয়াকে ১-০ গোলে ইতালি আর পশ্চিম জার্মানিকে চেকোস্লোভাকিয়া হারায় ৩-১ গোলে। ফাইনালে ২-১ ব্যবধানের জয়ে চ্যাম্পিয়ন ইতালি।

বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল দ্বিতীয়বারের মতো অল ইউরোপিয়ান হওয়া ১৯৬৬-র আসরে। বিশ্বকাপ তখনো ১৬ দলের। পর্তুগাল ও হাঙ্গেরির কাছে হেরে গ্রুপ থেকেই বিদায় নেয় ব্রাজিল। লাতিন থেকে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে নাম লেখায় কোয়ার্টার ফাইনালে। তবে তাদের দৌড়ও শেষ সেখানেই। পশ্চিম জার্মানি ৪-০ গোলে উরুগুয়েকে আর ইংল্যান্ড ১-০ গোলে হারায় আর্জেন্টিনাকে। সেমিফাইনালের চার দল ইংল্যান্ড, পশ্চিম জার্মানি, পর্তুগাল ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। ভেঙে যাওয়ার আগে সেবারই শেষ সেমিফাইনাল খেলে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ৪-২ গোলের জয়ে প্রথম শিরোপা ইংল্যান্ডের।

তৃতীয়বার অল ইউরোপিয়ান সেমিফাইনালের নজির ১৯৮২-তে। জিকো, সক্রেটিসদের নিয়ে ব্রাজিল তখন স্বপ্নের দল। গ্রুপ পর্বে দাপুটে তিন জয়ের পর দ্বিতীয় রাউন্ডে একই গ্রুপে পড়ে আর্জেন্টিনা ও ইতালির সঙ্গে। প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে গুঁড়িয়ে দেয় ৩-১ গোলে। কিন্তু পাওলো রসির হ্যাটট্রিকে পরের ম্যাচে ২-৩ ব্যবধানে হার ইতালির কাছে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাকে পেছনে ফেলে এই গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালে ইতালি। শেষ চারের অন্য তিন ইউরোপিয়ান দল পোল্যান্ড, পশ্চিম জার্মানি ও ফ্রান্স। রোমাঞ্চকর সেমিফাইনালে মিশেল প্লাতিনির ফ্রান্সের সঙ্গে ৩-৩ সমতা ছিল পশ্চিম জার্মানির। টাইব্রেকারে ৫-৪ ব্যবধানের জয় জার্মানদেরই। অপর সেমিফাইনালে রসির জোড়া গোলে পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারায় ইতালি। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন তারাই।

সবশেষ ২০০৬ বিশ্বকাপ দেখেছে অল ইউরোপিয়ান সেমিফাইনাল। নিজেদের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়েই নক আউট পর্বে নাম লেখায় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। শেষ ষোলোতে ব্রাজিল ৩-০ গোলে ঘানাকে আর আর্জেন্টিনা ২-১ গোলে হারায় মেক্সিকোকে। তবে লাতিন আমেরিকার দুই দলেরই বিদায় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। রবার্তো আয়ালার গোলে আর্জেন্টিনা ৭৯ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল ১-০ গোলে। নিশ্চিত সেমিফাইনাল ধরে কোচ হোসে পেকারম্যান তুলে নেন মাঝমাঠের প্রাণ হুয়ান রিকেলমেকে! ৮০ মিনিটে মিরোস্লাভ ক্লোসা সমতা ফেরানোর পর টাইব্রেকারে জিতে যায় জার্মানি। আর থিয়েরি অঁরির একমাত্র গোলে ফ্রান্স বিদায় করে দেয় ব্রাজিলকে। সেমিফাইনালের চার দল ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল ও ইতালি। জিয়ানলুইজি বুফন, আন্দ্রেয়া পিয়েরলোদের ইতালি চতুর্থবার শিরাপা জিতে সেবার। -ফিফা

শেয়ার করুন