বান্দরবান শহরে একের পর এক নির্মিত হচ্ছে ফুটপাথবিহীন রাস্তা: ভোগান্তি বাড়ছে পৌরবাসীর

বান্দরবান শহরের রাজার মাঠ ও কেএসআই থেকে পূরবী হোটেল পর্যন্ত অভ্যন্তরীন সড়কটিতে প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পায়ে হেঁটে চলাচল করেন।

‘আমি প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাই। এখানে মেইন রোডের মত গাড়ি চললে আমরা তো বাচ্চা নিয়ে হাঁটতে পারব না’। বলছিলেন, বান্দরবান শহরের মধ্যম পাড়ার বাসিন্দা লক্ষী রাণী দে। তাঁর ছেলে কালেক্টরেট স্কুলের ছাত্র।

রাজার মাঠ থেকে পূরবী হোটেলের দিকে যাওয়ার অভ্যন্তরীন সড়কটিতে ১৮ অক্টোবর বুধবার সকালে লক্ষী রাণীর মতই লাকী বড়ুয়া, পাই ইউ ক্রইসহ আরো বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা প্রত্যেকেই বলেছেন, এই রাস্তায় দ্রুতবেগে গাড়ি চলাচল করলে শিশুসহ পথচারীরা ঝুঁকিতে পড়বে। রাস্তাটির এক পাশে পথচারীদের হাঁটার জন্য ফুটপাথ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করে তাঁরা।

ট্রাফিক মোড় থেকে হেঁটে মধ্যমপাড়া ও উজানী পাড়ায় বাড়িতে ফিরছিলো ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থী হ্লা হ্লা প্রু, খিংখিংশৈসহ কয়েকজন। মতামত জানতে চাইলে তারাও বলেছে, রাস্তাটির পাশে পায়ে হাঁটার জন্য ফুটপাথ থাকা দরকার।

এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর হাজারো শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং মুসল্লীরা এই রাস্তাগুলোতে পায়ে হেঁটে চলাচল করেন। ছবিটি ১৮ অক্টোবর দুপুরে তোলা হয়েছে।

রাজার মাঠ ও কেএসআই এলাকা থেকে পূরবী হোটেলের সামনে এবং বনফুল বেকারীর সামনে প্রধান সড়কে যাবার এই রাস্তাগুলো মূলতঃ চেয়ারম্যান পাড়া ও ধোপা পুকুর পাড়ের আবাসিক এলাকার অভ্যন্তরীন সড়ক। বান্দরবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষার্থীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন এই রাস্তায় পায়ে হেঁটে চলাচল করেন। কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের বেশিরভাগ মুসল্লীরও যাতায়াতের পথ এটি।

প্রথমে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এই রাস্তার মাঝ বরাবর একটি পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণ করে। সম্প্রতি বান্দরবান পৌরসভা আরসিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে এটিকে চলাচলের উপযোগী করার কাজ হাতে নিয়েছে।

রাস্তাটিতে পায়ে হাঁটার জন্য ফুটপাথ থাকবে কীনা জানতে চাইলে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক জানান, এখানে ফুটপাথ রাখার কোনো পরিকল্পনা নেই।

পৌরসভার মেয়র মোঃ সামসুল ইসলাম জানান, রাস্তাটির প্রস্থ কম হওয়ায় ফুটপাথ রাখলে গাড়ি চলাচলের জায়গা সংকুলান হবে না। ১৮ অক্টোবর দুপুরে নির্মাণাধীন রাস্তাটি পরিদর্শণ করে কয়েকটি স্পিড ব্রেকার নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশ দেন তিনি। শহরবাসীর সুবিধার জন্য ভবিষ্যতে আরো যা যা করা দরকার, তা-ই করা হবে বলে জানান মেয়র।

এ সময় এক নারীসহ এলাকার আরো কয়েকজন বাসিন্দা মেয়রকে জানান, রাস্তাটিতে দ্রুত গতিতে গাড়ি চললে শিশু ও পথচারীরা ঝুঁকিতে পড়বেন।

প্রসঙ্গত, বান্দরবান শহরে নানা কারণে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে অবৈধ যানবাহন এবং অনিয়ন্ত্রিত চলাচল। পৌর শহরের বেশিরভাগ রাস্তার পাশেই হাঁটার উপযোগী ফুটপাথ নেই। ফলে ট্রাক, বাস, জীপ, মটরসাইকেল, অটোরিক্সাসহ দ্রুতগামী সব ধরনের যানবাহনের সাথে ঝুঁকি নিয়ে হাঁটাচলা করে মানুষ। শহরের ব্যস্ততম ট্রাফিক মোড় থেকে হিলবার্ড হোটেল পর্যন্ত প্রধান সড়কের দু’পাশের ফুটপাথগুলোও সম্প্রতি সড়কবাতির খুঁটি বসানোর কারণে প্রায় ১ ফুট করে ছোট হয়ে গেছে। খোদ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের ফুটপাথটি দখলে নিয়েছে হকাররা।

নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্প (ইউজিআইআইপি)-এর আওতায় নির্মিত ফুটপাথ ধীরে ধীরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, শহরে পায়ে হাঁটার সুযোগ সীমিত হলে সামান্য দূরত্বেও রিকশা এবং অটোরিক্সার ওপর নির্ভরতা বাড়বে। তাতে অচিরেই যানজট আরো ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে। তাছাড়া শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার (টমটম) আঘাতে গত বছরের ২৮ এপ্রিল এবং ১৯ আগষ্ট দুই শিশু মারা যাওয়ার ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক লেগেই থাকে।

২০০১ সালে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হওয়া বান্দরবান পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বর্তমানে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ বসবাস করেন।

শেয়ার করুন