বান্দরবানের লামায় খেলার মাঠে স্কুল ভবন নির্মাণ: কাজ বন্ধ করে দিলো এলাকাবাসী

বান্দরবানের লামা উপজেলায় গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা। ছবিটি শনিবার সকালে তোলা।

বান্দরবানের লামায় খেলার মাঠে স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী। ২৭ এপ্রিল শনিবার সকালে স্থানীয় দুই শতাধিক মানুষ নির্মাণ কাজে বাধা দেয় এবং ভবনের ভিত্তির জন্যে করা ২০-২৫টি গর্ত মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়। লামা উপজেলার গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকায় এখন উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জানা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ফ্যাসিলিটিস ডিপার্টমেন্ট) লামা উপজেলার গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণে সিদ্ধান্ত নেয়। সিভিও ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কাজটি বাস্তবায়ন করছে। ইতোপূর্বে ভবনটি নির্মাণের জন্য স্কুলের সীমানার মধ্যে মূল ভবনের পশ্চিম পাশে পূর্বমুখী করে স্থান নির্বাচন করা হয় এবং সে জায়গায় সয়েল টেস্ট (মাটি পরীক্ষা) সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত স্থানে ভবনটি নির্মাণ না করে গত তিনদিন আগে বিদ্যালয় তথা গজালিয়া ইউনিয়নের একমাত্র খেলার মাঠে ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু করে। এতে স্থানীয় জনসাধারণ ও ক্রীড়ামোদী শিশু-কিশোররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

ইউনিয়নের গাইন্দা পাড়ার সিংহাইমং মার্মা, অলক পাড়ার প্রোয়াই ম্রো, গজালিয়া হেডম্যান পাড়ার মংছাইচিং মার্মা, মোহাম্মদ পাড়ার আবু তালেব, মো. জাহেদ, বড় বমু হেডম্যান পাড়ার উসাই সুই মার্মা সহ অনেকে জানান, এই মাঠটি ইউনিয়নের একমাত্র মাঠ। এখানে সকল প্রকার খেলাধুলা, ধর্মীয়-সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠানগুলো করা হয়। বিদ্যালয়ের ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী ছাড়াও এলাকার সব ছেলে-মেয়েরা এই মাঠে ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। আমরা আমাদের এই মাঠটিতে কোন প্রকার স্থাপনা হতে দেবনা। স্কুলের পশ্চিম পাশে জায়গা থাকা সত্ত্বেও কমিটির লোকজন ঠিকাদারদের সাথে আঁতাত করে খেলার মাঠে ভবনটি নির্মাণ করছে।

গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্ব নাথ দে বলেন, স্কুলের মূল ভবনের পশ্চিম পাশের জায়গায় নতুন ভবনটি নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্ট করা হয়েছিল। কমিটির সবার সিদ্ধান্ত মতে কাজের সুবিধার্থে ভবনটি মাঠে করতে বলা হয়েছে। শনিবার সকালে এলাকার দুই শতাধিক মানুষ এসে কাজে বাধা দেয় এবং গর্ত গুলো ভরাট করে ফেলে। বিষয়টি আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। স্কুলের মোট ১.৫০ একর জায়গা আছে। একাডেমিক ভবনের ৭০ শতক ও মাঠে ৮০ শতক। মাঠটি স্কুলের সম্পত্তি।

স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা বলেন, স্কুলের আরো দুইটি নতুন ভবন হওয়ার কথা রয়েছে। ফ্যাসিলিটিস ডিপার্টমেন্টের ডিজাইন মতে পশ্চিম পাশের জায়গায় ভবনটি সংকুলান না হওয়ায় আমার পরিচালনা কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠের একপাশে নির্মাণ করতে বলেছি। স্কুলের জন্য মাঠ বেশী প্রয়োজন নাকি ভবন?

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিভিও ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে মো. রিপন বলেন, স্কুলের কমিটি যেখানে স্থান নির্বাচন করে দিয়েছে আমরা সেখানে কাজ করছি। ১৫ জন লোক নিয়ে গত তিন দিনে করা গর্ত গুলো তারা ভরাট করে ফেলেছে।

এই বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ফ্যাসিলিটিস ডিপার্টমেন্ট) বান্দরবানের সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, সয়েল টেস্টের অনেক পরে ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া সারা বাংলাদেশে একই ডিজাইনে ভবন নির্মাণ হচ্ছে। পূর্বের জায়গাটি উঁচু-নিচু হওয়ায় সবার সাথে আলোচনা করে খেলার মাঠে ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।

গজালিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) বিল্লাল হোসেন সিকদার বলেন, সকালে অনেক লোকজন এসে কাজে বাধা দেয়। নির্মাণকাজের শ্রমিকরা সরে যাওয়ায় কোন ঘটনা ঘটেনি। যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সচেষ্ট আছি।

শেয়ার করুন