বাংলাদেশের জন্য ১২০ মিলিয়ন ডলার চেয়েছেন ট্রাম্প

বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যু হিসেবে চিহ্নিত করে দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা ও উন্নয়নমূলক সহযোগিতা হিসেবে ২১৯.৩ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। ২৫ জুলাই কংগ্রেসে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক এক শুনানিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

এর মধ্যে ১২০.৯ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ অর্ধেকের বেশিই চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। ২০১৯ সালের জন্য এ বরাদ্দে ভারতের ভাগে পড়েছে ৪ কোটি ২১ লাখ ডলার। নেপালের ৪০.৫ মিলিয়ন ডলার এবং শ্রীলঙ্কার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের বরাদ্দের পরিমাণ ১১.৫ মিলিয়ন ডলার। আর মালদ্বীপের জন্য মাত্র ৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া আঞ্চলিক তহবিল হিসেবে আরও ৩৯ লাখ ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ব্যুরো কর্মকর্তা এলিস জি ওয়েলস দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি অর্থনীতির উন্নয়ন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ইত্যাদির জন্য আইনপ্রণেতাদের কাছে এ বরাদ্দের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাব কমিটির চেয়ারম্যান টেড ইয়োহো, র‌্যাংকিং মেম্বার ব্র্যাড শারম্যানসহ অন্য সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আমাদের বাজেটে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের বরাদ্দ প্রসঙ্গে এলিস জি ওয়েলস বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দেশটি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভেন্যু এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশটির একটি সফলতার গল্প রয়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের যোগ্যতা অর্জন করেছে। ২০২৪ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের তিনটি যোগ্যতা অর্জন করেছে দেশটি। এই সফলতা অব্যাহত রাখতে অনেক কিছুরই প্রয়োজন। দেশটি যাতে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল থাকে, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র্র সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বাজেটে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে উলে­খ করে শুনানিতে এলিস জি ওয়েলস বলেন, জাতিগত সহিংসতার মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এই শরণার্থীরা এখন নতুন ঝুঁকির মুখে, বর্ষায় বন্যা ও মানবিক সহযোগিতার ঘাটতি রয়েছে। ইউএসএআইডির সহযোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে এবং শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় সম্ভাব্য সবকিছু করছে যুক্তরাষ্ট্র্র।

এক্ষেত্রে বার্ষিক বাজেটের জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। ২০১৭ অর্থবছর থেকে এই মানবিক সহযোগিতার জন্য পররাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশকে ১৯ কোটি ডলার সহযোগিতা দিয়েছে।

ওয়েলস বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের মাঝেই বাংলাদেশ একটি জাতীয় নির্বাচনের সামনে দাঁড়িয়ে। খুব সম্ভব ডিসেম্বরেই সে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা চাই বাংলাদেশ যেন সব দলের অংশগ্রহণে নির্বিঘ্নভাবে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। শুনানিতে অংশ নিয়ে ওয়েলস আরও বলেন, নিরাপত্তা সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা মিশনে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি নিজের দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটনে কাজ করছে। আমরা চাই এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা যেন আরও বৃদ্ধি পায়।

বাংলাদেশে ভোক্তার বাজার তৈরি হচ্ছে এবং টানা ১০ বছর ধরে ছয় শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে-উলে­খ করে ওয়েলস জানান, বাংলাদেশের সরকার দ্রুত বিদ্যুৎ খাতের সামর্থ্য বাড়াতে চায় প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায়। এ জন্য মার্কিন কোম্পানিগুলোর সহযোগিতা চাইছে বাংলাদেশ।

ওয়েলস জানান, বিশ্বের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারী দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ও দেশটির ক্রেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। শীর্ষ মার্কিন ক্রেতা ওয়ালমার্ট ও দ্য গ্যাপ ২০১৭ সালে বাংলাদেশের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক কিনেছে। ওয়েলস তার বক্তব্যে কারখানার নিরাপত্তা মান বাড়ানো, শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত এবং শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানাব।

শেয়ার করুন