অর্কিডে সাফল্য
বান্দরবানের পাহাড়ে নয়নের অর্কিড বাড়ি ; শোভা পাচ্ছে বাহারি অর্কিড

বান্দরবান শহরের কালাঘাটায় ছয় শতক জমি জুড়ে পেশায় স্কুল শিক্ষক আমির হোসেন নয়ন গড়ে তুলেছেন অনিন্দ্য সুন্দর অর্কিড বাগান। ছবি- খোলা চোখ ডটকম।

রফিকুল আলম মামুন।। পৃথিবীর ফুলের রাজ্যে অনিন্দ্য সুন্দর ফুল অর্কিড। সৌখিনতার পাশাপাশি অর্কিড এখন বাণিজ্যিকভাবেও চাষাবাদ হচ্ছে পৃথিবীর বহু দেশে। ধীরে ধীরে অর্কিড এখন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল পেরিয়ে পরিচিত হচ্ছে বাংলাদেশেও।  বিভিন্ন জেলার সৌখিন অর্কিডপ্রেমীরা গড়ে তুলেছেন অর্কিডের ছোট বড় বাগান। অনেকেই আবার বাণিজ্যিকভাবে অর্কিড চাষ করে সখের পাশাপাশি বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বীও হচ্ছেন।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল অর্কিড গবেষকও পরিদর্শন করেছেন নয়নের অর্কিড বাগান। ছবি -খোলো চোখ ডটকম।

র্পাবত্য জেলা বান্দরবানেও সৌখিনভাবে অর্কিডের চাষ শুরু করেছেন অনেক উদ্যমী তরুন। শহরের কালাঘাটা এলাকায় পেশায় শিক্ষকতা করছেন আমির হোসেন নয়ন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি নিজের বসতবাড়ীর আঙিনায় গড়ে তুলেছেন সখের অর্কিড বাগান।

মূলসড়ক থেকে অর্কিডপ্রেমী নয়নের বাড়ী পর্যন্ত হাঁটাপথের দুধারেই বিভিন্নভাবে স্থাপন করা হয়েছে অর্কিডগুলো। থরে থরে সাজানো নানা প্রজাতির অর্কিড শোভা বাড়িয়েছে নয়নের বসতবাড়ির আঙিনা। কৃত্রিমভাবে শেড তৈরি করেছেন অর্কিডের পরিচর্যার জন্য। আবার বিভিন্ন ফলজ বনজ গাছের ডালে কোথাও প্লাষ্টিকের ঝুড়ি, নারিকেলের ছোবড়ায়, কাঠের গুঁড়িতে, ঝাপড়িতে, চাকার টায়ারে ঝুলছে হরেক প্রজাতির বাহারি অর্কিড।

থরে থরে সাজানো বিভিন্ন প্রাজাতির অর্কিড। ছবি- খোলা চোখ ডটকম।

বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে এই প্রতিবেদককে নয়ন বলেন, “২০১৫ সালের দিকে সোস্যাল মিডিয়ার সুবাদে মূলত অর্কিডের প্রেমে পড়ে যাই। সে থেকে শুরু পথ চলা। মাত্র আটটি প্রজাতি সংগ্রহ করে তা দিয়ে শুরু করি। পরে সোস্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অর্কিডপ্রেমীদের গ্রæপের সাথে যুক্ত হয়ে শিখে নিই অর্কিডের পরিচর্যা ”।

অর্কিডের পরিচর্যায় নয়নকে সহযোগিতা করেন স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। ছবি- খোলা চোখ ডটকম।

দীর্ঘ প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত নয়নের অর্কিড বাগানে- হয়া, এরিডিস, ফক্সটেইল, কাইট্রোকাম, বাল্বোপাইলাম, এগ্রোগেটাম, বাস্কেট বাইন, পিয়ারাড্ডি, সিম্বোডিয়াম, ডেন্ডোরিয়াম, ডেন্সিং ডল, ফ্লোডাটা, ড্যানফার্মেরী, সিলোজিনি,পারিসি, পেন্সিল, এগ্রোগেটাম, কামরাঙা,পেলানোপসিস, এরিয়া টমেন্টাসা, ফরমোশান, ড্যান মাস্কাটাম, পেলাথান থেরিয়া ইনসেক্টপ্যারা, ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির গ্রাউন্ডঅর্কিডসহ দেশি বিদেশী মিলিয়ে ৫০ প্রজাতির ছোটবড় প্রায় পাচঁচশতাধিক অর্কিড রয়েছে।

সৌখিন অর্কিড প্রেমীদের নামমাত্র মুল্যে অর্কিড সরবরাহ করে থাকেন নয়ন। ছবি- খোলা চোখ ডটকম।

এসব অর্কিডের পরিচর্যা করেন নিয়মিত। তিনি জানান, ছুটির দিনে রুটিন করে অর্কিডের যতœ আত্বি করেন। পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানেরাও তাকে সহযোগিতা করেন। স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন নিজের সন্তানের মতো করেই অর্কিডের চারাগুলোকে যতœ করতে হয়। সকাল বিকেল দুবেলা পরম যতেœ এসব অর্কিড বড় করে তোলা হচ্ছে শুধুই সখের বশে।

নয়নের বাগানো ফোটা অর্কিড এগ্রোগেটাম।

অর্কিড প্রেমী নয়নের বড় ছেলে বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের ছাত্র রুবাইয়াত হোসেন আরেফীন। আরেফীনও বাবার মতোই অর্কিডের প্রেমে পড়ে গেছেন আরো আগেই। এখন দেখেই বলে দিতে পারে অর্কিডের বাহারী সব নাম। তাছাড়াও কোন অর্কিড কখন ফুল দেবে কোনটির কি কীটনাশক কিভাবে প্রয়োগ করতে হয় সবই শেখা হয়ে গেছে তার। বলছিলেন রুবাইয়াত।

এদিকে সখের অর্কিড কখন যে লাভের ঘরে পা রেখেছে সে খবরও নেই নয়নের। দেখতে দেখতে এখন বিভিন্ন এলাকার অনেকেই অর্কিড কিনতে আসেন নয়নের কাছে। এখন পর্যন্ত ৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা দামের অর্কিডও রয়েছে সংগ্রহে। বিক্রিও হচ্ছে এসব অর্কিড। এসব অর্কিড বিক্রির আয় থেকেই নয়ন নিজের বাগানকে দিনের পর সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যায়ও নির্বাহ করছেন।

অর্কিড।

কথা হয় নয়নের অর্কিডের বাগান পরিদর্শনে আসা অপর অর্কিড প্রেমী বান্দরবান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুর রহমান প্রামাণিক। তিনি বলেন, নয়নের কাছ থেকে অর্কিডের চাষ সম্পর্কে ধারনা নিয়ে বসতবাড়ির বারান্দায় অর্কিডের চাষ শুরু করেছি। অর্কিডের পরিচর্যা ওএর ফুল ফল দেখে মন জুড়িয়ে যায়। তিনিও সখের বশে অর্কিড চাষ করে থাকেন। তিনি জানান, অর্কিড অনিন্দ্য সুন্দর ফুল। এই ফুল অন্য যে কোন ফুলের চেয়ে বেশিদিন স্থায়ী হয়। শহরের অনেকে এখন অর্কিডে ঝুঁকছে। এসব কারণে সখের বশে অর্কিড চাষ করছেন তিনি। তাঁর সংগ্রহেও রয়েছে বেশ কয়েক প্রজাতির অর্কিড।

এদিকে অর্কিড প্রেমী নয়ন বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এই অর্কিড চাষ করেও স্বাবলম্বী হতে পারে। ঘুচাতে পারেন বেকারত্ব। বিশ্বব্যাপী এই অর্কিড এখন পরিচিত। সাধারণ ফুলের চেয়ে এই ফুলের চাহিদাও ব্যাপক।

তিনি আরো বলেন, যে কেউ চাইলে আমার বাগানে এসে সহযোগিতা নিতে পারে। নাম মাত্র মুল্যে আমি অর্কিড সরবরাহ করবো। এতে যদি অর্কিডের সাথে তরুন যুবকরা পরিচিত হয়ে চাষাবাদ শুরু করে তাতেই আমি খুশি।

অর্কিডের পরিচিতি : অর্কিড সাধারণ দু ধরনের হয়ে থাকে। পার্থিব বা মাটিতে উৎপাদিত এবং অপরটি হলো পরাশ্রয়ী। প্রজাতিভেদে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু অর্কিড চাষের উপযোগী। অর্কিডের টবের চারপাশে বাতাস চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত যায়গা রাখতে হয়। প্রয়োজনমতো সেচ ও সার দিতে হয়। প্রজাতিভেদে সারা বছরই অর্কিডের ফুল পাওয়া যায়। ফুল ফোটে মার্চ এপ্রিলে। সাধারণত একটি গুচ্ছে ২-৪ টি ফুলের থোকা আসে। ফুলের স্থায়ীত্ব ১৫ দিন থেকে ৩ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এর বাজার মূল্য সাধারণ ফুলের চেয়ে অনেক বেশি।

 

শেয়ার করুন