কবিতায় পাহাড়ের ঘ্রাণ: ফরিদ সুমনের ‘প্রিয় সে নামের বানান’

১৪ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় ‘প্রিয় সে নামের বানান’ এবং আরো বেশ কয়েকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন কবি আসাদ চৌধুরী।

ঝিরি, খাল, নদী ও পাথর; বুনো মৌতাত, ফসল বোনার মৌসুম, পাহাড়ের উৎসব, গানে গানে আগামীর আবাহন। ক্ষুধা-তৃষ্ণা, জরা-বার্ধক্য, জীবন-মৃত্যু, প্রেম-প্রণয়সহ জীবনের যাবতীয় অনুষঙ্গ- এসব নিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এসেছে ফরিদ সুমনের কবিতার বই ‘প্রিয় সে নামের বানান’। বইটি পাওয়া যাচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জার্নিম্যান এর ১১ নম্বর প্যাভিলিয়নে। ২০০ টাকা দামের বইটি মেলায় বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ‘প্রিয় সে নামের বানান’ বই সম্পর্কে আলোচনা করছেন কবি তারিক সুজাত

বইটি প্রকাশ করেছে ’জার্নিম্যান বুকস’ এবং ‘ভাষাসংগ্রামী তোফাজ্জল হোসেন ফাউন্ডেশন’। সহযোগিতা করেছে ফেসবুক গ্রুপ ‘পোস্টবক্স’। বাংলার আড়াই হাজার বছরের পুরনো মুদ্রার নকশার আদলে বইটির প্রচ্ছদ করেছেন কবি তারিক সুজাত। ১৪ ফেব্রুয়ারি মেলায় বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন কবি আসাদ চৌধুরী। সে সময় উপস্থিত ছিলেন জার্নিম্যান বুকস-এর প্রধান নির্বাহী কবি তারিক সুজাত, দেশ টিভি’র হেড অব ম্যানেজমেন্ট সেক্রেটারিয়েট কবি সাদিকুর রহমান পরাগ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ-এর প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট এবং ফেসবুক গ্রুপ ‘পোস্টবক্স’ এর পরিচালক কবি নুসরাত সুলতানাসহ বেশ কয়েকজন নবীন-প্রবীণ লেখক।

বইয়ের কয়েকটি কবিতার অংশবিশেষ:
‘তুমি আসতেই ঘোর বর্ষণ শুরু হলো অরণ্যজুড়ে। বর্ষণে বর্ষণে রাত।
খিল এঁটে ঘুমোতে গেলো পাখ-পাখালির দল। তারপর সে কী অদ্ভুত!
মেঘ উড়ে গেলো। জোছনার প্লাবন ভেঙ্গে হাতির দাঁতের মতো শাদা চাঁদ।
আলোর সন্ত্রাসে বিব্রত আমার চোখ। দোহাই লাগে, চাঁদ নিভিয়ে দাও।
আমি চাঁদ নিভে যাবার অপেক্ষায়।’
(অনন্তভ্রম)

‘দূরগামী ওম জাগিয়ে তোলো। প্রশ্ন করোনা, কেন
এইসব ভুলভাল মুগ্ধতার কলি ফুল হয়ে দুলে ওঠে
আজকে তুমি উস্কে দাও আঙ্গুলের সঙ্গোপন শিল্প
আমাদের বিগত বসন্তের লাল মেখে দাও চোখে।
আজকে তোমার বিছানায় ঝাঁকেঝাঁকে পাখি
দুয়ারে দুর্দান্ত প্রেম নিয়ে, সাড়া দেবে?
আমি যদি ডাকি।’
(হঠাৎ শীতের রাতে)

রুমকী ওকে ছাদে যেতে বলেছিলো
সে উল্টোপথে হেঁটে
নোয়ানো তরুশাখায় দোল খেয়ে
নেমে গেছে পুকুরঘাটে।
খেয়ালী হাতে ছুঁয়ে দেখেছে মৃদুমন্দ মাছ;
খুঁজেছে বেহিসেবী জলের সৌরভ।
পাঠশালা ফাঁকি দেয়া চোখ ফিরেও দেখেনি কভু
মেয়েটির টোলপড়া গালের বিভা।
(রুমকী ওকে আকাশ দেখাতে চেয়েছিলো)

‘যে নামে ডাকিনি আজও
কবিতার না-ফোটা কলির ভেতর
লুকিয়ে রেখেছি যেটুকু অভিমান
বোশেখের প্রথম বৃষ্টির পরে
জুমের পাহাড়ে লিখে দিয়ে যাবো
প্রিয় সে নামের বানান।’
(প্রিয় সে নামের বানান)

কথাটা তো বলতেই দিলেনা।
তুমি সাথে থাকলে আমার বড্ড সুবিধে হয় জানো?
যদিও রিকশায় বসার নিয়মকানুন কিচ্ছু তুমি শেখোনি এখনো।
তুমি পাশে বসলেই মাথার ওপর টাঙানো এক বিশাল আকাশ
আকাশের গায়ে রোদ, রোদের ডানায় মেঘ, মেঘের ভেতর আমি।
তোমার পাশে থাকায় কী যে আমার উপচেপড়া সুখ!
রোজ মাঝপথে নেমে যাও কেন?
একদিন সাথে গেলেই পারতে। একদিন হতে পারতে
আমার চুলের কাঁটা, হাতের চুড়ি, বালিশকভার, আয়না-চিরুনি।
(হুডখোলা রিক্সায় অভিমানী বিকেল)

লেখক পরিচিতি: ফরিদুল আলম সুমন। জন্ম ১৬ এপ্রিল। পাহাড়ি শহর বান্দরবানে বেড়ে ওঠা। যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোসফট করপোরেশন থেকে সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর বিশেষায়িত ডিগ্রী ‘এমসিএসই’ সম্পন্ন করেছেন ২০০৬ সালে। ছাত্রজীবনে সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি, যা পরবর্তীতে পেশা এবং নেশায় পরিণত হয়। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় কাজ করার পর টেলিভিশন সাংবাদিকতায় আছেন প্রায় ১৪ বছর ধরে। বর্তমানে একটি নিউজ পোর্টালের সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। কাজ করছেন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে।

শেয়ার করুন