উ চ হ্লা ভান্তে আর নেই

প্রয়াত উ পঞঞা জোত মহাথেরো (উ চ হ্লা ভান্তে)

বাংলাদেশের অন্যতম বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু উ পঞ্ঞা জোত মহাথেরো (উ চ হ্লা ভান্তে) আর নেই। ১৩ এপ্রিল সোমবার সকালে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়েছে। এর আগে ১০ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে চিকিৎসা চালানো হচ্ছিলো। ওই দিন সকালেই তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়।

মৃত্যুকালে তাঁর বয়েস হয়েছিলো ৬৪ বছর।

উ চ হ্লা ভান্তের ভগ্নিপতি ডা. অং চা লু জানান, গুরু ভান্তে দেহত্যাগ করেছেন। সবার সিদ্ধান্তক্রমে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার তারিখ জানানো হবে।

শুক্রবার বিকাল থেকেই তাঁর মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। ‘হিউম্যানিটারিয়ান অর্গানাজেশন চিটাগাং হিলট্র্যাকটস বাংলাদেশ’ নামক একটি ফেইসবুক পেইজ উ চ হ্লা ভান্তের হাসপাতালের বেডে শোয়া একটি ছবি শেয়ার করে। সেখানে লেখা হয়, ‘খুব দুঃখের সাথে জানানো যাচ্ছে যে, আমাদের মাঝে আর নেই পরম পূজ্য শ্রদ্ধেয় উচলা ভান্তে আজ মহাপ্রয়ান হয়েছে। … এটি গুজব নয়, ঘটনা সত্য। ভান্তের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।’

১০ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে একটি ফেইসবুক পেইজের পোস্ট

এই খবরের প্রতিবাদ জানান অনেকেই। উ চ হ্লা ভান্তের পরিবারের সদস্যরা এবং তাঁর ম্যানেজার শিবু মৃত্যুসংবাদটি সত্য নয় বলে নিশ্চিত করেন। তাঁরা জানান, ভান্তের অবস্থা সংকটাপন্ন। সোমবার পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে তাঁর সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে। পরে ১৩ এপ্রিল সোমবার সকালে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুসংবাদটি নিশ্চিত করা হয়।

প্রসঙ্গত, উ চ হ্লা ভান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করে সিনিয়র সহকারি জজ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর পর ১৯৯০ সাল থেকে তিনি চাকরি ছেড়ে ধর্মসাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন দি ওয়ার্ল্ড বুদ্ধ শাসন সেবক সংঘ, বুদ্ধ ধাতু জাদি এবং রাম জাদি নামক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া বান্দরবান কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গণে বি হ্যাপী লার্নিং সেন্টার নামে একটি অনাথালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি বান্দরবান বোমাং সার্কেলের রাজা ক্য জ সাঁই এর পৌত্র। তাঁর পিতার নাম হ্লা থোয়াই প্রু এবং মায়ের নাম অং ম্রি চিং। বৌদ্ধ ধর্মসাধনায় যোগ দেবার আগ পর্যন্ত তাঁর পারিবারিক নাম ছিলো উ চ হ্লা।

ছোট বেলায় তিনি একাধারে গায়ক, বাদক এবং গীতিকার ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমাদের বর্ষবরণের অন্যতম জনপ্রিয় গান ‘সাংগ্রাইমা…’ তাঁর লেখা ও সুর করা। তিনি ধর্মবিষয়ক ৮টি পুস্তক রচনা করেন। এছাড়া তিনি ধর্মীয় ও সমাজসেবামূলক কাজে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশ-বিদেশে বেশ কয়েকটি সম্মাননায়ও ভূষিত হন।

শেয়ার করুন