আসুন যুবাদের প্রশংসা করি

তোমাদের এই যুবদলটা বুঝি অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে আছে?’

একসঙ্গে ফেরার সময় দুশানবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালদ্বীপ কোচ এহসান আবদুল গনির প্রশ্ন। উত্তর দেওয়ার আগেই মাঝরাতের সেই আড্ডায় যোগ হলেন শ্রীলঙ্কা দলের কোচ সুমিত ওয়ালপোলা। অন্ধকার ভেদ করে ভোরের দিকে যতই এগিয়ে যেতে লাগল দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল-বিষয়ক আড্ডাটি, ততই ভারী হতে থাকল বাংলাদেশ যুবদল সম্পর্কে প্রশংসার পাল্লাটাও। বাছাইপর্বের কঠিন বাধা পার হয়ে চূড়ান্ত পর্বের টিকিট অর্জন করতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অন্ধকারাচ্ছন্ন ফুটবলে এই প্রশংসা আদায় করাটা ছিল বড্ড বেশি দরকারি।

বাংলাদেশের গ্রুপ ‘বি’ থেকে চাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বের টিকিট অর্জন করেছে স্বাগতিক তাজিকিস্তান। অথচ এই তাজিকিস্তানের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র দিয়েই বাছাইপর্ব মিশন শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। এরপরে দ্বিতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে ১-০ ও শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জালে এক হালি গোলে শেষ হয় বাংলাদেশের অভিযান। মাঝে গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী উজবেকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করে আত্মঘাতী গোলে হার। চার ম্যাচে বাংলাদেশের যুবাদের যা একমাত্র পরাজয়।

দুই জয়, এক ড্র ও এক হারে সাত পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের পাঁচ দলের মধ্যে তৃতীয়। আর পুরো এশিয়ার মধ্যে ৪১ দলের মধ্যে ২৩তম। হ্যাঁ, আহামরি কিছু নয়। কিন্তু ভেবে দেখুন, চার ম্যাচে বাংলাদেশের জালে বল প্রবেশ করেছে মাত্র একবার। তা-ও আবার র‍্যাঙ্কিংয়ে ১২০ ধাপ এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষ উজবেকিস্তানের খেলোয়াড়দের দাদাগিরিতে নয়, গোলটি হয়েছে আত্মঘাতী। এই ম্যাচে গত যুব এশিয়া কাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা উজবেকদের বিপক্ষে এক দুর্দান্ত বাংলাদেশকেই দেখা গিয়েছে। ম্যাচের ময়নাতদন্ত করলে যা পাওয়া যায়, তা দেশের যেকোনো ফুটবলপ্রেমীকে আশা দেখাবে নিশ্চিত।

প্রায় নিয়মিত যুব বিশ্বকাপে খেলা দেশের বিপক্ষে রক্ষণ সামলানোর সময় কতটা ওয়ার্কলোড নিতে পারে যুবারা, মাঠে বসে না দেখলে তা বিশ্বাস করা যায় না। দাতে দাঁত চেপে হাসিমুখ নিয়েও যে রক্ষণ সামলানো যায়, তা দেখিয়েছেন বাদশা-আতিকুজ্জামান-মনিররা।

ডি-বক্সের সামনে মিডল করিডরে প্রতিপক্ষকে কোনো জায়গা না দেওয়া, সাপোর্টিং পাসগুলো বন্ধ করা এবং ধাঁধায় পড়েও নিজেরা জমাট থাকা। রক্ষণ চরিত্রের প্রধান তিনটি বিষয়ে পুরো বাংলাদেশ দশে দশ। ম্যাচ শেষে উজবেকিস্তান কোচ নিজেই বলেছেন, ‘এমন লড়াকু বাংলাদেশ আমার ভাবনাতেই ছিল না। ড্রটা ছিল বাংলাদেশের প্রাপ্য।’

শুধু উজবেকিস্তান নয়, প্রতিটি ম্যাচেই যুবাদের দেখা গিয়েছে একসুতোয় গাঁথা। নিচ থেকে বিল্ডআপ খেলে একসঙ্গে ওপরে ওঠা, আবার বল হারালেই মৌমাছির চাকের মতো দ্রুত প্রেসিং করা। তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করা বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায়নি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই প্রতিপক্ষ মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা। যা দেখে সবচেয়ে খুশি হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ অ্যান্ড ওয়ার্ড। দুশানবে বসেই যুবদলের এই উপদেষ্টা বলে দিয়েছেন,‌ ‘সিনিয়র জাতীয় দলের জন্য আমি ছয়জন খেলোয়াড় পেয়ে গিয়েছি। তারা আমাকে খুবই আশা দেখাচ্ছে।’

থিম্পুর অনূর্ধ্ব-১৮ সাফের পরে তাজিকিস্তান এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ বাছাইপর্ব। দুটি পৃথক ঘরানার মঞ্চে দেখা গেল এক লড়াকু বাংলাদেশের, যা দেখে ভবিষ্যতের ভালো একটি ছবি এঁকে নেওয়াই যায়। অন্তত এই যুবাদের ওপরে ভরসা রেখে বলা যায়, যুবারা লড়াই করতে জানেন।

উৎসবে বাঁকা কথা বলতে নেই। তবু মালদ্বীপ কোচের প্রসঙ্গ দিয়েই লেখার শুরু। তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিয়েই শেষ হোক। তাজিকিস্তানে ভালো খেলার সুবাদে মালদ্বীপ কোচ গণির মনে হয়েছিল, এই দলটি অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আসল কথাটা হলো, খুব অল্পদিনের প্রস্তুতি নিয়েই বাছাইপর্বে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ফুটবল ফেডারেশন দলটির জন্য আয়োজন করতে পারেনি একটি প্রস্তুতি ম্যাচও। অথচ সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে যুবারা প্রমাণ করেছেন, সাহস থাকলেই লড়াই করা যায়। তাজিকিস্তানে যা দেখে প্রতিপক্ষ শিবির থেকে শুরু করে প্রশংসা করেছে সবাই।
তাহলে আপনি কেন নয়?

কৃতজ্ঞতা- দৈনিক প্রথম আলো

শেয়ার করুন