‘অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে’ বললেন শেখ হাসিনা ও আহমদ শফী


কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে আজ ঢাকায় যে সমাবেশ হয়ে গেল – তাতে প্রধান বক্তাদের ভাষণে অন্যতম দিক ছিল ‘সামাজিক মাধ্যমে নানা রকম অপপ্রচারের’ কড়া সমালোচনা।

হেফাজতে ইসলামের নেতা আহমদ শফীর লিখিত বক্তব্যে এবং প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হবার আহ্বান বিশেষ গুরুত্ব পায়।

আহমদ শফীর সভাপতিত্বে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ ‘শোকরানা মাহফিলে’ কওমি মাদ্রাসাগুলোর হাজার হাজার শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যোগ দেন। কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড গওহরডাঙ্গার চেয়ারম্যান ও গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমীন শেখ হাসিনাকে “কওমী জননী” উপাধী দেন।

এ সংবর্ধনার আয়োজন করে কওমী মাদ্রাসাগুলোর একটি সংগঠন আলহাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতুল কাওমিয়া বাংলাদেশ।

আমার বক্তব্য নিয়ে অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচার করার অবকাশ নেই: আহমদ শফী

আলহাইয়াতুল ওলিয়াতিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অন্যতম সদস্য বেফাকুল মারারিসিল আরবিয়ার সহকারী মহাসচিব মুফতি নুরুল আমীন আল্লামা শফীর লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।

লিখিত বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে “আন্তরিক শুকরিয়া এবং মোবারকবাদ” জানানো হয়। এতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি যাতে না করা হয় সে ব্যাপারে নজর রাখার কথা বলা হয়।

বক্তব্যে আহমদ শফী বলেন, “আমাকে ও হেফাজতে ইসলাম কে নিয়ে সোশাল মিডিয়া উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যাচার চালাচ্ছে।”

“কোন ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সোশাল মিডিয়া বা ব্যক্তিবিশেষের কথায় বিভ্রান্ত না হবার জন্য” তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

“আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই আমার কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই। রাজনৈতিক কোন প্ল্যাটফর্ম বা দলের সাথে আমার এবং হেফাজতে ইসলামের নীতিগত কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।”

এসময় উপস্থিত যারা ছিলেন তারা সমস্বরের তার এই বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করেন।

“মনে রাখবেন মুসলমানদের ঈমান আকিদা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষাই হেফাজতে ইসলামের মূল লক্ষ্য। হেফাজতে ইসলামের নীতি ও আদর্শের ওপর আমরা অটল এবং অবিচল আছি।”

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, “আমার কর্মকৌশল এবং সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নেই। আমার বক্তব্য এবং বিবৃতিকে কেন্দ্র করে অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচার করার অবকাশ নেই।”

ওলামাদের নামে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় লিখিত বক্তব্যে।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যেও সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচারের বিষয়টির ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, সোশাল মিডিয়ায় নানা ধরণের অপপ্রচার চালানো হয়। এই অপপ্রচারে কেউ বিশ্বাস করবেন না্।

“অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য আমরা সাইবার ক্রাইম আইন তৈরি করেছি। কেউ যদি এ ধরণের মিথ্যা অপপ্রচার করে তাহলে এ আইন দ্বারা তাদের বিচার করা হবে, গ্রেফতার করা হবে।”

“এবং আমাদের ধর্ম ইসলাম ধর্ম এবং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কেউ কোন কথা বললে আইন দ্বারাই তার বিচার হবে।” এসময় সমাবেশ থেকে বিপুল হর্ষধ্বনি করা হয়।

শেখ হাসিনা তখন বলেন, আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেবো না। আইনের দ্বারাই তাদের বিচার করে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেব যাতে তারা কখনো অপপ্রচার চালাতে না পারে। দেশের শান্তি বিঘ্নিত হোক তা আমরা চাই না ।”

শেখ হাসিনা তার ভাষণের একেবারে শেষ দিকে আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গও তোলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন “… আপনাদের দোয়া চাই, সামনে নির্বাচন আছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যদি ইচ্ছা করেন নিশ্চয়ই আবার বাংলাদেশের জনগণের খেদমত করবার সুযোগ আমাকে দেবেন, আর যদি আল্লাহ না চান – দেবেন না, আমার কোন আফসোস থাকবে না।কারণ আমি এ সব কিছু আল্লাহর ওপরই ছেড়ে দিয়েছি।”

এর আগে তার ভাষণের শুরুর দিকে শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারাই ৭৭ সালে কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি বন্ধ করে দিয়েছিল।”

“আমরা যে শিক্ষানীতিমালা ঘোষণা করেছি, সেই নীতিমালায় আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি” – বলেন প্রধানমন্ত্রী।

“যখন বলা হল দাওরায়ে হাদিস মাস্টার্স ডিগ্রীর সমমর্যাদা পায় আমরা কিন্তু সেটা করে দিলাম পার্লামেন্টে আইন পাশ করে। কারণ আইন পাশ না করলে এটার বাধ্যবাধকতা থাকতো না।,” বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরো বলেন, “আজকে আমরা করে দিলাম, আবার অন্য কেউ ক্ষমতায় আসলে ওই ৭৭ সালের মত বন্ধ করে দিতে পারে। সেটা যাতে বন্ধ করতে না পারে সে জন্য আমরা এটা করেছি।”

এসময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, নৌ ও পরিবহন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

সৌজন্যে ঃ বিবিসি বাংলা অনলাইন

শেয়ার করুন