সিএমএইচে নিতে খালেদা জিয়াকে প্রস্তাব দেবো : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

azaduzzaman-kamal
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিতে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, সরকার চায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হোক।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসনের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর ভাই শামীম ইস্কান্দরের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি আমাদের কাছে এসেছে। সেখানে তাঁরা নিজ খরচে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে করাতে চান বলে উল্লেখ করেছেন। সরকার চায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসাসেবা দিতে। তাঁর অসুস্থতার কথা শুনে আমাদের সিভিল সার্জন, কারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই চিকিৎসকদের কাছে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অসম্মতি জানিয়েছেন।’

মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে দেশের বিখ্যাত এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া সেখানে যেতে সম্মত হননি। সরকার আবারও বিএনপির চেয়ারপারসনের কাছে সিএমএইচে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেবে।

‘আমার মতে, সিএমএইচে তাঁর চিকিৎসা নেওয়া উচিত। সেখানে না নিয়ে অন্য কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া উচিত না। কারণ, দেশের মধ্যে সিএমএইচকেই সবাই চিকিৎসাসেবার জন্য শীর্ষস্থানীয় মনে করে। এখানে সব ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে,’ যোগ করেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিতে অসুবিধা কোথায় জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসাসেবা দিতে। ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ে অনেকগুণ সমৃদ্ধ সিএমএইচ।’

এর আগে খালেদা জিয়ার ভাইয়ের চিঠি নিয়ে সচিবালয়ে যান বিএনপির উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার। তিনি সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘কারাবন্দিদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার অসংখ্য নজির রয়েছে। খালেদা জিয়ার বেলায় তা দেওয়া হচ্ছে না কেন?’

বিষয়টি উল্লেখ করে মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নজির তো অনেক রয়েছে। এটা তো আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু এ নজিরও তো রয়েছে যে আমাদের নেত্রী মতিয়া চৌধুরীর একবার অস্ত্রোপচার হয়েছিল। সে সময় তো এই নজির মানা হয়নি। আমরা সেদিকে যেতে চাই না। আমরা চাই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে হোক। সরকারি হাসপাতালে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাঁর চিকিৎসা করাতে আমরা চেষ্টা করে যাব। তবে তাঁর চিকিৎসা যেখানেই হোক, তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা সব সময় চিকিৎসা দেওয়া ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় সামনে থাকার সুযোগ পাবেন।’

ঈদের আগে মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা হলাম রক্ষক। আমরা আদালতের নির্দেশ পালন করি মাত্র।’

কারাগারে খালেদা জিয়ার জন্য বিশেষ কী ব্যবস্থা থাকবে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং একটি বড় দলের প্রধান হিসেবে তাঁর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা সব সময়ই থাকে। ঈদেও থাকবে।’

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালত। এ মামলার অপর আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বাকি পাঁচজনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা জরিমানাও করা হয়।

রায়ের পর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়।

গত জুন কারান্তরীণ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানান, তাঁদের ধারণা সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন।

শেয়ার করুন