শতায়ুবাসীর দ্বীপ!

ইয়োন্না প্রোইউ। তার বর্তমান বয়স ১০৫ বছর। কিন্তু এই বয়সেও নিখুঁত হাতে বুনে চলেছেন কাঠের লুম! গত ৯০ বছর ধরে লুম চালিয়ে অসাধারণ এক কৌশল রপ্ত করেছেন ইয়োন্না। শুধু ইয়োন্না নন, তার মতো শতবর্ষী নাগরিকের সংখ্যাই এখানে বেশি। বলছিলাম গ্রিক দ্বীপ ইকারিয়ার কথা। এই দ্বীপের এক তৃতীয়াংশ বাসিন্দার বয়স ৯০ এর বেশি।
গ্রিসের ইকারিয়ার মতোই ইতালির সারদিনিয়া, কোস্টারিকার নিকোইয়া, জাপানের ওকিনওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের লোমা লিন্ডায় মানুষের গড় আয়ু বেশি। তবে ইকারিয়ার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার বেশিরভাগ মানুষই কর্মপ্রিয়। নব্বই-পঁচানব্বই বছর বয়সেও তারা কোন না কোন কাজের সাথে যুক্ত আছেন। এই প্রবীণদের নিয়ে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় বিশেষ নৌকা বাইচের, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের ন্যুনতম বয়স ৭০ বছর। নৌকা বাইচে অংশগ্রহণকারী প্রবীণদের বক্তব্য, আমরা এই ধরনের নৌকা বাইচের মাধ্যমে এই বার্তা দিতে চাই যে শারীরিকভাবে আমরা এখনো সক্ষম।
এক যুগ আগে স্বামীকে হারিয়েছেন ইয়োন্না। কিন্তু তাতে মোটেও ভেঙে পড়েননি তিনি। স্বামীর অবর্তমানে কাজটিকেই ভালো বেসেছেন।  মজার বিষয় হলো, তার তৈরি পণ্যগুলো দোকানে সোভা পেলেও তাতে থাকে না কোন দাম। কারো পছন্দ হলে নিজের ইচ্ছা মতো দাম দিতে পারেন। ইয়োন্না বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর অনেকেই আমাকে অন্য কিছু একটা করতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি কারো কথায় কর্ণপাত করিনি। আমার যেটা ভালো লাগে সেটি-ই করছি। তার উপদেশ, যে কাজ করতে আনন্দ লাগে, ভালবাসা দিয়ে সেই কাজ করে যাওয়া উচিত।
এথেন্স থেকে ৯ ঘণ্টা আজিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে যেতে হবে ইকারিয়া দ্বীপে। ইকারিয়ার বর্তমান জনসংখ্যা ৩০০ জন। এই জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই প্রবীণ। আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানে দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর খাবার এবং কর্ম চঞ্চল জীবনযাপনকে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মনে করা হয়।
ইকারিয়ার বাসিন্দারা গোষ্ঠীর মতো বসবাস করে যেখানে একে অন্যের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। এখানকার বাসিন্দারা দীর্ঘায়ুর আসল রহস্য হিসেবে নিজেদের ইচ্ছাশক্তি এবং জীবনাচারকেই উল্লেখ করেছেন। তাদের উপদেশ, তোমার প্রকৃতপক্ষে যতোটুকু দরকার ততটুকুই চাওয়া উচিত। তুমি যদি পরশ্রীকাতর হয়ে জীবন কাটাও তাহলে তা তোমাকে শুধু মানসিক চাপই পেতে হবে, সুন্দর জীবন নয়।-বিবিসি
শেয়ার করুন