বেঁচে থাকতে কাঁচের ঘরেই ১৩ বছর!

জুয়ানা মুয়াজ। স্পেনের বাসিন্দা। স্বামী-সন্তান সবই আছে। তারপরও তাদের সংস্পর্শে যেতে পারেন না তিনি। বন্দী হয়ে আছেন এক কাঁচের ঘরে। যে ঘর জীবাণুমুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অার তার এ বেঁচে থাকার লড়াইটা শুরু হয়েছিল এক যুগ আগে। এখনও চলছে সে লড়াই। একে একে তেরটি বসন্ত কাটিয়ে দিয়েছেন মুক্ত পৃথিবীর কাঁচের বন্দীশালায়। জীবাণুমুক্ত থাকতেই তাকে এরকম দিন গুজরান করতে হয়।

জানা গেছে, কাঁচের ঘরে থাকার মূল কারণ ভয়ংকর রোগের হাত থেকে বেঁচে থাকা। অনেকদিন আগে জুয়ানার স্বামী জমি থেকে কয়েকটি আলু তুলে এনে তার হাতে দেন। অন্য আর দশটা স্বাভাবিক দিনের মতো জুয়ানা আলুগুলো পরিষ্কার করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করলেন তার ঠোঁট ও চোখের পাতা ক্রমশ ফুলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে তার সমগ্র শরীর ফুলে যায়। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার জানালেন মাল্টিপল কেমিক্যাল সেন্সিভিটি, ফিব্রোম্যালজিয়া ক্রনিক ফ্যাটিগ এবং ইলেক্ট্রোসেন্সিভিটির মতো ভয়ংকর রোগ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই সবকটি রোগ তার শরীরে এসেছে ওই আলুর সংস্পর্শে। কারণ ওই আলুতে বছর দুয়েক আগে নিষিদ্ধ কীটনাশক ছিটানো হয়েছিল।

এরপর থেকেই জুয়ানার কষ্টের জীবনের শুরু। তার শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করে। সারা শরীরে হতে থাকে ভয়াবহ যন্ত্রণা এবং অ্যালার্জি। এছাড়া তার শরীরে রাসায়নিকের তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। যেকোনো রাসায়নিক, সেটা হোক সাবান কিংবা টুথপেস্টের সংস্পর্শ, তার শরীরে অসহ্য চুলকানি শুরু হতো।

আর এভাবেই একটু একটু করে বাইরের পৃথিবী তার কাছে বিষাক্ত হয়ে উঠতে থাকে। বেঁচে থাকার তাগিদেই তাকে আশ্রয় নিতে হয় বিশেষভাবে তৈরি পঁচিশ মিটার দৈর্ঘ্যের ছোট কাচের ঘরে।

গত ১৩ বছর জুয়ানা এই ঘরেই আছেন। বছরে একবার তিনি এই ঘর থেকে বের হন। হাসপাতালে যান শারীরিক পরীক্ষার জন্য। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে কাচের ঘরে ফিরে আসতে হয়। কারণ কাচের ঘরে তিনি যতটা ভালো থাকেন ততটাই খারাপ থাকেন বাইরে।

স্বামী সন্তান কাউকে তিনি স্পর্শ করতে পারেন না। কারণ কাউকে যদি তার ঘরে ঢুকতে হয় তবে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিয়ে সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্ত পানিতে গোসল করে রাসায়নিকমুক্ত কাপড় পরিধান করে নিতে হয়। ফলে একরকম সব কিছু থেকেও না থাকার মতো বিচ্ছিন্ন জীবন কাটাতে হয় তাকে।

সারাদিন স্বচ্ছ কাচের ঘর থেকে জুয়ানা বাইরের অপূর্ব সুন্দর পৃথিবী দেখেন। দেখেন তার পরিবারের সদস্যদের হাসি আর আনন্দ। তবে তিনি কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারেন না। জুয়ানার বিশ্বাস কোনো একদিন তার শরীরের সব রোগ ভালো হয়ে যাবে এবং তিনি আবারো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো সবার সঙ্গে মিশতে পারবেন, বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবেন তার প্রিয় স্বামী ও সন্তানদের।

শেয়ার করুন