প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া

স্বপ্নের ফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। বহু অপেক্ষার পর বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে উঠার স্বপ্ন পুরণ করেছে ক্রোয়েটরা। বিশ্বকাপের সেরা মঞ্চে জায়গা পেয়েছে। রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলে এই লজুনিকির মাঠেই ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া এবং ফ্রান্স মুখোমুখি হবে। বুধবার রাতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে ২-১ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে জায়গা পেল ডেবর সুকরের দল ক্রোয়েশিয়া।
নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে শেষ হয়। ৩০ মিনিটের অতিরিক্তি সময়ের দ্বিতীয় পর্বে মারিও মানজুকিকের বা পায়েল গোল ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে তুলে দেয়। বিদায় করে দেয় ইংল্যান্ড ফুটবল দলকে।
লজুনিকির মাঠে খুব সংখ্যক ক্রোয়েটরা ছিলেন। তারাই ছিলেন দলের সবচেয়ে বড় শক্তি। গোল হজম করেও তারা রাকিটিচ, মডরিকদের পাশে ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন ভালো কিছু হবেই। মর্ডিকরা তাদের সমর্থকদের হাতে ফাইনালে আসার আমন্ত্রণ পত্র দিয়েছে। আবার আসো ফাইনালে আমরা খেলব।
৬৬ বিশ্বকাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আর কখনো ফাইনালের ধারে কাছেও যেতে পারেনি ইংল্যান্ড। ৬৬র পর আবার ফাইনালে উঠার সুযোগ পেয়েছিল। অর্ধ শতাব্দী কেটে গেলেও বার বার এই ইংল্যান্ডকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল বিশ্বকাপ হতে। ইংলিশদের ভাবনা ছিল এবার বোধহয় ঈশ্বর তাদের দিকে ফিরে তাকিয়েছে।
নতুন প্রজন্মের ইংলিশরা দেখবে ওয়েন রুনি, বেকহামদের ব্যর্থতা ঢেকে দিতে জানবাজি রেখে লড়াই করছে হানডারসন, স্টারলিং, হ্যারি কেইনরা ফাইনালে মঞ্চে নিয়ে যাবেন।। ইংলিশ ফুটবলের আকাশে নতুন সুর্য্যের আলোর দেখা মিলবে। সব কিছু ধুলোয় মিলিয়ে গেছে। স্বপ্নের ফাইনালে উঠা হয়নি ইংলিশদের।
শুরুতেই গোল করেও ইংল্যান্ড সেটা রাখতে পারেনি। ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলের কাছে ইংল্যান্ডকে গোল হজম করতেই হয়েছে। তার্কিশ রেফারী কুনিয়েত কাকির ৯০ মিনিটের খেলা শেষ করলেন। ৩০ মিনিট খেলতে বললেন। ইংল্যান্ড যে এই ৩০ মিনিটেও ক্রোয়েশিয়ার কাছে হার মানতে বাধ্য হবো সেটা বোধহয় বুঝতে পারছিলেন ইংলিশ দর্শক। গ্যারি লিনেকার, টেরিবুচার, ববি চার্লটনদের ফুটবল আরো একবার মুখ থুবড়ে পড়ল। ক্রোয়েশিয়ান সাবেক তারকা ফুটবলার অধিনায়ক বর্তামান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ডেবর সুকারের স্বপ্ন পুরণ করে দিয়েছেন নতুন প্রজন্মের ফুটবলাররা।
খেলা শুরুতে গোল পেয়ে ইংলিশ দর্শকরা লুজুনিকির মাঠে যা করল তা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়েও বেশি কিছু হয়েছে। ইংলিশ দর্শকরা যেন উন্মাতাল হয়ে গিয়েছিল। গ্যালারি জুড়ে বিয়ার ঢেলে দিয়েছে। হাতে হাতে বিয়ারের গ্লাস। এক চুমুক দিয়েই আকাশে মারছে। খেলা ৬ মিনিটে কেইরান ট্রিপারের গোলে (১-০) এগিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের উত্তেজনা যেন গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল।
ইংলিশদের ঠেলাঠেলি আরেক জনের গায়ে গিয়ে পড়ছিল। আর বার বার তারা সরি সরি বলে যাচ্ছিল। লুজনিকির এই মাঠেই ফাইনাল। ইংলিশরা বলছিলেন উই আর ফেভারিট। উই আর এগেইন ওয়ার্ল্ডকাপ উইনার। ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকদের সঙ্গে বার বার ঝগড়া বাধিয়েছেন ইংলিশ সমর্থকরা। বেচারা ক্রোয়েটরা যেন ভেজা বিড়ালের মতো হয়ে গিয়েছিলেন। কোনো দিকে না তাকিয়ে চোখ রেখেছিলেন মাঠে। কিন্তু গোল হজমটা ক্রোয়েটরা মেনে নিতে পারছিলেন না।
ইংলিশ ডিফেন্ডার কেইল ওয়াকার, জন স্টোন, হ্যারি মিগুয়েররা জানতেন কিভাবে ক্রোয়েশিয়ার বল সাপ্লাইটা বন্ধ করে দিতে হয়। প্রথমার্ধ পর্যন্ত ইংলিশরা সফল হলেও ৬৮ মিনিটে কিন্তু ক্রোয়েশিয়ানরা ঠিকই ইংলিশদের জাল ফুটো করে দিয়েছেন। অবিশ্বাস্য গোল করেছেন ইতালিয়ান ফুটবলে খেলা ইভান পেরিসকি। ইংলিশ ডিফেন্ডার কেলি ওয়াকার মাথা লাগিয়ে ক্লিয়ার করার আগেই ইভান পেরিসিক মাথার উপর দিয়ে পা বাড়িয়ে গোল করেন ১-১। খেলা গড়াল অতিরিক্তি সময়ে। ৩০ মিনিটে লড়াই যেন শেষ হলো কয়েক মিনিটে। ১০৮ মিনিটে মারিও মানজুকিচের গোল ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে তুলে দিল ২-১।
এতো উত্তেজনা প্রথম সেমিফাইনালে দেখা যায়নি, সেন্ট পিটারবার্গের মাঠের প্রথম সেমিফাইনালে ফ্রান্স এবং বেলজিয়ামের লড়াইয়ে। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তার চেয়ে বেশি উত্তেজনা দেখেছেন ফুটবল দর্শক। টান টান উত্তেজনায় ক্রোয়েশিয়া দুর্দান্ত ফুটবল খেলল। ৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমিফাইনাল খেলা ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে উঠে ফুটবলে নতুন ইতিহাস গড়ল। ইংলিশ যেসব সমর্থক বিয়ার ছুঁড়েছেন তারা হেরে গিয়ে মুখ বন্ধ করে লুজনিকির মাঠ ছেগে গেছেন। স্টেডিয়ামের আর সব দর্শক দাঁড়িয়ে ক্রোয়েশিয়াকে সম্মান জানিয়েছে। ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক লুকা মডরিক ফাইনাল দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে দিলেন।
শেয়ার করুন