নিরাপদ অনলাইন সম্ভব করতে শিশুদের জন্য বাংলায় ‘ডিজিওয়ার্ল্ড’

সম্প্রতি টেলিনর, গ্রামীণফোন ও ইউনিসেফ বাংলা ভাষার লার্নিং রিসোর্স প্ল্যাটফর্ম ‘ডিজিওয়ার্ল্ড’ বাংলা চালু করেছে। এ প্ল্যাটফর্মটি ৫ থেকে ১৬ বছরের শিশুদের নিজের ভাষায় সঠিকভাবে অনলাইন মাধ্যম বুঝতে এবং নিরাপদে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারে সাহায্য করবে।

টেলিনর গ্রুপ, গ্রামীণফোন ও ইন্টারন্যাশনাল এক্সপার্ট প্যারেন্টজোন শিশু, পরিবার এবং স্কুলগুলোর জন্য গ্লোবাল অনলাইন কারিকুলাম তৈরি করেছে এবং ইউনিসেফের সাথে পার্টনারশিপে এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। ইন্টার‍্যাক্টিভ গেম এবং নিজের মতো করে জ্ঞান লাভের জন্য ডিজিটাল লাইব্রেরি ব্যবহারের মাধ্যমে উপভোগ্য উপায়ে শিশুদের শেখার অভিজ্ঞতা গ্রহণে সহায়তা করবে ডিজিওয়ার্ল্ড বাংলা। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে শিক্ষকরা ওয়ার্কশিট ডাউনলোড করতে পারবেন। এই ওয়ার্কশিটগুলো দিয়ে তারা অভিভাবকদের জন্য উপকারী সেশন ও গাইডলাইন পরিকল্পনা করতে পারবেন, যা অনলাইন বিশ্বে শিশুদের পদচারণায় সহায়তা করবে। ডিজিওয়ার্ল্ড বাংলা প্ল্যাটফর্মে থাকা রিসোর্সগুলো শিশুরা ব্যবহার করতে পারবে। কারিকুলামটি শেষ করার পর শিশুরা সার্টিফিকেটও পাবে যেখানে তাদের অর্জন ও ডিজিটাল রেজিলিয়্যান্সের বিষয়গুলো উল্লেখ করা থাকবে। কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আমাদের শিশুদের পদচারণা ও বিকাশকে ডিজিটাল স্ক্রিনের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলেছে। ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে আমাদের কৌতুহলী স্বভাবের শিশুরা অনেক নতুন বিষয়ের মুখোমুখি হচ্ছে, যা তাদের অনলাইনে ঝুঁকির আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। এক্ষেত্রে, ডিজিওয়ার্ল্ডের লক্ষ্য শিশুদের সুরক্ষায় কাজ করা এবং শিশুরা যাতে নিজেদের বিকাশে নিরাপদভাবে ইন্টারনেটের অফুরন্ত সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারে, সেক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা।

এই সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক উদ্যোগটি চালু করার বিষয়ে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, ‘আমাদের তরুণদের অবশ্যই সঠিকভাবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে এবং তাদের প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। এ দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমেই তারা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে। তবে, ডিজিটাল বিশ্বে তাদের নিরাপদ থাকাটাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘নিউ নরমাল’ আমাদের মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া আমাদের চলমান উদ্যোগ চাইল্ড অনলাইন সেফটি’র সাথে ডিজিওয়ার্ল্ড বাংলা প্ল্যাটফর্মটি শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়টিকে জোরদার করবে। ফলে, শিশু, অভিভাবক, শিক্ষকরা অনলাইনে নিরাপদ ও দায়িত্বশীল থাকতে সঠিক টুল ও প্রাসঙ্গিক নলেজ ব্যবহার করতে পারবেন।’ 
 
চাইল্ড অনলাইন প্রটেকশন নিয়ে আইইউটি গাইডলাইন অনুসারে এ কারিকুলামটি তৈরি করা হয়েছে। এই কারিকুলামের কিছু অংশ ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ছাড়াও অফলাইনে শিশু ও স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করতে পারবেন। কেমন করে আইটিইউ গাইডলাইন অন চাইল্ড প্রটেকশন প্র্যাকটিসের মধ্যে নিয়ে আসা যায় তার উদাহরণ হিসেবে আইটিইউ গাইডলাইনে ডিজিওয়ার্ল্ড বাংলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 
 
এ নিয়ে টেলিনর এশিয়ার হেড অব এক্সটার্নাল রিলেশনস হোকুন ব্রুয়াসেত শউল বলেন, ‘চলতি বছর আমাদের অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার বহুলাংশে বেড়েছে এবং এটি শিশুদের সাইবার বুলিংসহ অন্যান্য অনলাইন সহিংসতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ১০ বছর টেলিনর এশিয়া অঞ্চলের শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। ডিজিটাল রেজিলিয়্যান্স তৈরির মাধ্যমে সকল শিশুর জন্য সমান সুযোগ তৈরির জন্য ডিজিওয়ার্ল্ড বাংলা প্ল্যাটফর্মটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কেননা ডিজিটাল রেজিলিয়্যান্টের বিষয়টি অন্যান্য যেকোন সময়ের চেয়ে এখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গ্লোবাল পার্টনার ইউনিসেফের সাথে মিলে বাংলাদেশে চাইল্ড অনলাইন সেফটি নিয়ে কাজ করছে গ্রামীণফোন। তাদের সাথে এ মাইলফলকটি উদযাপন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’

২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে চাইল্ড অনলাইন সেফটি নিয়ে কাজ করছে গ্রামীণফোন ও টেলিনর। ২০১৮ সাল থেকে ইউনিসেফের সহযোগিতায় গ্রামীণফোন উন্নয়নের নানা সম্ভাবনা বিকাশে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশে ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার ও এ সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে গ্রামীণফোন, টেলিনর ও ইউনিসেফ যৌথভাবে ১০ লাখ এর অধিক শিশু ও ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি অভিভাবক, শিক্ষকদের সচেতন করেছে। চাইল্ড অনলাইন সেফটি নিয়ে কাউন্সেলিংয়ের জন্য তারা চাইল্ড হেলপ লাইন হটলাইন (১০৯৮) চালু করেছে। এ সম্মিলিত প্রয়াসটি ২ কোটির বেশি মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।

শেয়ার করুন