বাংলাদেশে ভুল চিকিৎসায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রতিকার পেতে যাবেন কোথায়?

বাংলাদেশে চিকিৎসকদের অবহেলায় চট্টগ্রামে আড়াই বছর বয়সী একটি শিশু মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে বেশ বিতর্ক চলছে গত কয়েকদিন ধরে।

গত এক সপ্তাহে এরকম অন্তত তিনটি ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশে ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগ নিয়ে প্রতিকার পাওয়া আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া আসলে কী?

গত বছরের অক্টোবর মাসে রক্তবমি হয়েছিলো ভোলার এক স্কুল শিক্ষকের। চিকিৎসার জন্য পরিবার তাকে ঢাকায় খুব নামকরা একটি হাসপাতালে নিয়ে আসে।

রক্ত বন্ধ করা হলেও চিকিৎসকেরা জানান তার লিভার সিরোসিস হয়েছে। আর তাই লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য মানসিক ও আর্থিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।

পরিবার তাকে দেশের বাইরে নিয়ে গেলে সেখানে পাওয়া গেলো ভিন্ন ধারণা, বলছিলেন তার ছেলে সৌমিত্র শুভ্র।

“ওখানে গিয়ে একজন সার্জনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছি কারণ বাংলাদেশে লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট হয়না। তিনি আমাকে বললেন আমার কাছে কেন এসেছেন? তিনি বললেন ওনার লিভার সিরোসিস আছে তবে যে ধরনের জটিলতা থাকলে লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করা লাগে তা ওনার নেই। এবং উনি আমাদের একজন মেডিসিনের ডাক্তারের কাছে আমাদের রেফার করেন।”

সৌমিত্র শুভ্র আরো বলছেন, “বাবা আর মোটে ৬ মাস বাঁচবেন বলে সময় দিয়েছিলেন বাংলাদেশের চিকিৎসক এবং অপারেশনের জন্য ৬০ লাখ টাকা লাগবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু ঐ মেডিসিনের ডাক্তার মাত্র ৫৮৫ টাকার ঔষধ লিখে দেন ছয়মাসের জন্য। বাবা এখন ভালো আছেন এবং তার যতটুকু সমস্যা সেটি শক্তভাবে মোকাবেলা করার চেষ্টা করছেন।”

তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম দেশে ফিরে তিনি অভিযোগ করার ব্যাপারে চিন্তা করেছিলেন কিনা। অথবা কিভাবে সেটি করতে হয় সে বিষয়ে কিছু জানেন কিনা।

তিনি বলছিলেন, “ডাক্তাররা আসলে তৎক্ষণাৎ রক্তক্ষরণটা বন্ধ করেছিলেন। আমরা তাতেই কৃতজ্ঞ ছিলাম। ডাক্তার বিরুদ্ধে গিয়ে বলতে যাওয়া সে বিষয়ে নিজেরাই এতটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারি না। আর আমাদের দেশে কাঠামোটা দুর্বল।”

বাংলাদেশে চিকিৎসকদের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার অভিযোগে প্রায়ই রোগীর আত্মীয়স্বজন ও ডাক্তারদের মুখোমুখি হতে দেখা যায়। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করার পদ্ধতি রোগীদের জানাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরা কি করছেন?

জিজ্ঞেস করেছিলাম চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের ডাঃ ইকবাল আরসালানের কাছে।

তিনি বলছেন, “বাংলাদেশে হাসপাতালে অবহেলার অভিযোগ হলেই লোকজন ডাক্তার বা চিকিৎসার সাথে জড়িত অন্যদের ওপর চড়াও হয়। কারণ মানুষ জানে না তারা বিচারের জন্য কোথায় যাবে। এটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলো নিজেরাই ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে জানাতে পারে।”

কিন্তু অবহেলা বা ভুল চিকিৎসা হয়েছে বলে মনে হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আসলে কোথায় যাবেন?

বাংলাদেশে এমন ঘটনার অভিযোগ করার একমাত্র যায়গা সংসদে আইন করে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল বা বিএমডিসি। কিন্তু সেই তথ্য সাধারণ মানুষজনের অনেকেরই অজানা।

ডাঃ আরসালান বলছেন, “বিএমডিসির উচিৎ হাসপাতালগুলোতেই এ তথ্য রোগীদের দেয়ার ব্যবস্থা করা। তবে অভিযোগ করার একমাত্র যায়গা হল এর বিএমডিসির ঢাকা কেন্দ্র। কিন্তু বাংলাদেশে বহু দরিদ্র মানুষে এতটাই কম আয় যে তারা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকা পর্যন্ত যাওয়ার চিন্তাও করেননা।

বিএমডিসির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলছেন, “বিএমডিসির কোন আঞ্চলিক অফিস নেই। আমাদের কাছে ভুক্তভোগি ব্যক্তি বা তার বৈধ প্রতিনিধিও যদি লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসে আমরা তা আমলে নিয়ে বিএমডিসির শৃঙ্খলা কমিটি তদন্ত করে ও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়।”

কিন্তু জেলা পর্যায়ের ঘটনাগুলো যাতে স্থানীয়ভাবেই তদন্ত করা যায় সেজন্যে ক করা হচ্ছে? সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা দেখবো কি পদ্ধতিতে যেকোনো যায়গা থেকে অভিযোগ করার ব্যবস্থা করা যায়”

তবে তিনি বলছেন চিকিৎসকদের ত্রুটি দেখার জন্য সম্প্রতি দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে কমিটি করা হয়েছে।

সৌজন্যে – বিবিসি বাংলা অনলাইন

শেয়ার করুন