আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে দেশের বিভিন্নস্থানে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটছে। আবার অনেক স্থানে মাদক ব্যবসায়ীদের নিজেদের মধ্যে ঘটছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা। গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত দেশের ৯ জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন ১১ জন। নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে র্যাব-পুলিশ।
এ নিয়ে গত ৪ মে থেকে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৭৮ জন। এদিকে, পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে অভিযানকালে পুলিশ সাত হাজার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। এঘটনায় সাড়ে পাঁচ হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অন্যদিকে র্যাবের মিডিয়া উইং জানিয়েছে, তাদের মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন ২০ জন। এসময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা : পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাবুল (৪০) ও আলমাস (৩৬) নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশের চার সদস্য আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাবুল ১৬ মামলার আসামি বলে পুলিশ দাবি করেছে। তিনি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার আশাবাড়ি গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে। অন্যদিকে আলমাস আটটি মামলার আসামি বলে পুলিশ জানিয়েছে। তিনি একই উপজেলার দক্ষিণ তেতাভূমি গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে। ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কেজি গাঁজা ও একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার রাতভর জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে ১৫ মাদক চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় দুই হাজার ১৭২ পিস ইয়াবা ও ৫২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।
কচুয়া (চাঁদপুর) : উপজেলার অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী বাবলু (৪২) ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। তিনি বলরা গ্রামের সুলতান ভান্ডারীর ছেলে। কচুয়া থানার ওসি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ও ওসি (তদন্ত) শাহাজাহান কালাম জানান, শুক্রবার রাত তিনটার দিকে গ্রেফতার বাবুলকে পালগিরি ইটভাটার কাছে তার সহযোগীরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা পরপর সাতটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র এক পর্যায়ে বাবলু গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় বাবলুকে কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সন্ত্রাসীদের হামলায় কচুয়া থানার এসআই মোবারক হোসাইন ও এএসআই আক্তার হোসেন অহত হয়েছেন। পুলিশ বাবলুর ঘর থেকে ১২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। বাবলু এর আগে মাদকসহ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় পাঁচটি মাদকের মামলা রয়েছে। বাবলুর মা ফাতেমা বেগমও মাদক ব্যবসা করেন। তিনিও বেশ কয়েকবার মাদকসহ গ্রেফতার হয়ে জেল খাটেন।
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) : পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শাহজাহান (৩১) নিহত হয়েছেন। তিনি উত্তর বনগাঁও তেলুয়ারী গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে। পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার তেলুয়ারী এলএসডি গোডাউন মোড় এলাকায় এ ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে। অভিযানে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি বদরুল আলম খান, এসআই খন্দকার আল মামুন ও এএসআই মোজাহারুল আহত হন। শাহজানের বিরুদ্ধে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মাদকসহ আটটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। অভিযান চলাকালে পুলিশ দুইশ’ গ্রাম হেরোইন ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক বিক্রেতা রেন্টু মিয়া (৪০) নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে উপজেলার ভিমপুর ইটেরভাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রেন্টু উত্তরগোপালপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। র্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্প কমান্ডার শামীম হোসেন জানান, ঘটনাস্থল থেকে ফেনসিডিল, একনলা বন্দুক ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) : গতকাল ভোরে ভারত সীমান্তবর্তী দক্ষিণ বাঁশজানী গ্রামে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পায়ে গুলিবিদ্ধ হন মাদক ব্যবসায়ী ইব্রাহীম আলী (৩৪)। তাকে প্রথমে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরে চিকিৎসকরা তাকে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে পাঠালে সেখানে সকাল ৯ টায় তার মৃত্যু হয়। তিনি দক্ষিণ বাঁশজানী গ্রামের মৃত ইনসাফ আলীর ছেলে। এ ঘটনায় এএসআই নাদের ও আইয়ুব নামে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। থানা পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। ইব্রাহীমের নামে ভূরুঙ্গামারী থানায় চারটি মাদকের মামলাসহ কুড়িগ্রাম জেলার অন্যান্য থানায়ও মামলা রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও: পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন কুট্টি (৪৫) নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোররাতে সদর উপজেলার ১৯ নম্বর বেগুনবাড়ি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মোবারক হোসেন কুট্টি সদর উপজেলার ছিট চিলারং গ্রামের মৃত শফির উদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় মাদকের প্রায় ১৫টি মামলা রয়েছে। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আহত তিন পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বরগুনা (দক্ষিণ) : মাদক ব্যবসায়ীদের দুই গ্রুপের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছগির খান (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোররাতে বরগুনা সদর উপজেলার চার নম্বর কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের জাকিরতবক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, পাঁচ রাউন্ড গুলি এবং একশ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। ছগির খান সদর উপজেলার এক নম্বর বদরখালী ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে আটটি মাদক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বরগুনা থানার ওসি এস এম মাসুদুজ্জামান জানান, ধারণা করা হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী মনির গ্রুপের সঙ্গে এই বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে।
দিনাজপুর অফিস : র্যাব-১৩ এর দিনাজপুর ক্যাম্প কমান্ডার তালুকদার নাজমুছ সাকিব জানান, বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ-কবিরাজহাট সড়কের দক্ষিণ পাশে বাসুদেবপুর এলাকায় শুক্রবার রাতে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন মাদক ব্যবসায়ী সাবদারুল (৪০)। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, দুই পোটলা গাঁজা ও ৯৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৪০টি মামলা রয়েছে বলে জানায় র্যাব। নিহত সাবদারুল বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের নন্দাইগাঁও গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে।
অন্যদিকে, শুক্রবার রাতে দিনাজপুর সদর উপজেলার রামসাগর এলাকায় দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে আব্দুস সালাম (৩৬) নামে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলার মহরমপুর গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে।
পাবনা : পাবনা সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আব্দুর রহমান (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের কবিরপুর গ্রামের মৃত আছের উদ্দিন শেখের ছেলে। মাদক ব্যবসায়ীদের ককটেল হামলায় আহত তিন পুলিশ সদস্যকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি শাটার গান, তিনটি থ্রি নট থ্রি রাইফেলের গুলি, চারটি কার্তুজ এবং দুইশ’ পিস ইয়াবা ও পাঁচশ’ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এদিকে, পাবনার ফরিদপুরে চার মাদক বিক্রেতা গ্রেফতার হয়েছেন। তারা হলেন— দবির উদ্দিন, জহুরুল ইসলাম, ওসমান গণি ও রঞ্জু।
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ): পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে ছয় মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে উপজেলার চনপাড়া ও ভায়েলা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন— উপজেলার চনপাড়া এলাকার মৃত মধু মিয়ার ছেলে হিরা, সোলায়মান মিয়ার ছেলে রাকিব, নুরুজ্জামানের ছেলে আমির মিয়া, ভায়েলা এলাকার জাহাঙ্গীরের ছেলে সাইদুল ইসলাম, রাকিবুল ও সোনারগাঁও উপজেলার বারুদি এলাকার আব্দুল আলীমের ছেলে আমির।
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ): গোপালদী ফাঁড়ি পুলিশ এক কেজি গাঁজাসহ মাদক বিক্রেতা জয়নাল আবেদিন ওরফে দয়ালকে (৬৫) গ্রেফতার করেছে। অপরদিকে থানা পুলিশ শিউলি আক্তার নামে এক মাদক বিক্রেতাকে ৪০ ক্যান বিয়ারসহ গ্রেফতার করেছে। এর আগে আড়াইহাজার থানা পুলিশ রনি (৩০) নামে পুলিশের এক সোর্সকে তিনশ’ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেফতার করে।