শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেয় যে, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা রাখা হবে না। কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং বিদেশফেরত দক্ষ কর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।
এ সিদ্ধান্তের বিপরীতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তে পলিটেকনিক সেক্টর ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে যাবে।
কারিগরি খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে এসএসসি উত্তীর্ণরা পলিটেকনিকে ভর্তির আগ্রহ হারাবে। ভর্তিতে অনীহা দেখাবে মেধাবীরাও। তারা মনে করেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে রাজনীতি করার জন্য একশ্রেণির যুবক এখানে এসে ভর্তি হয়ে অপরাজনীতি করবে। ক্যাম্পাসে আবারও হত্যার রাজনীতি শুরু হবে।
ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সসীমা উঠিয়ে দেওয়া ছাড়াও মন্ত্রণালয় ছেলেদের ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা জিপিএ ৩ দশমিক ৫ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ৫, মেয়েদের ক্ষেত্রে জিপিএ ৩ থেকে কমিয়ে ২.২৫ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি ফি ১ হাজার ৮২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার ৯০ টাকা করা হয়। কারিগরি সেক্টরের উদ্যোক্তারা বলেন, ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা কমানোর সিদ্ধান্তও ঠিক হয়নি। এর ফলে পলিটেকনিকে আর মেধাবীরা ভর্তি হবে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স। সংগঠনটি মনে করে, কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্বহীন করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট ৩.৫ এবং পূর্বে ভর্তির যে বিধান ছিল তা অক্ষুণ্ন রাখার দাবি জানায় তারা।
গতকাল সংগঠনটির সভাপতি এ কে এম এ হামিদের সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল সভায় এ দাবি জানানো হয়। সভায় আন্দোলনের হুমকি দিয়ে বলা হয়, এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য প্রয়োজনে ছাত্র, শিক্ষক এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পেশাজীবীরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ‘অনেক পলিটেকনিক কলেজে অধ্যক্ষ আছেন যাদের বয়স ৪০ বা ৪৫। সেখানে তার চেয়ে বেশি বয়সের একজন শিক্ষার্থী যদি ভর্তি হয় তাহলে সেটা কতটুকু ভালো হবে?’
তিনি বলেন, ‘যে মিটিংয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় সেখানে আমিও ছিলাম। অনেকে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। কী কী সমস্যা তৈরি হবে তা-ও তুলে ধরা হয়েছিল।’
বরিশালের ইনফ্রা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান চৌধুরী বলেন, ‘কারিগরিতে ভর্তির হার বাড়ানোর জন্য কী করতে হবে এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কোনো জরিপ বা গবেষণা করা হয়নি। ফলে একেক সময় এক এক ধরনের পলিসি নির্ধারণ করা হয়। নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে পলিটেকনিক কলেজগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
টেকনিক্যাল এডুকেশন কনসোর্টিয়াম, বাংলাদেশ (টেকবিডি) এর সভাপতি প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সদ্য পাস করা একজন এসএসসি শিক্ষার্থীর সঙ্গে যখন অধিক বয়সের এক জন যুবক বা তারও বেশি বয়সের কেউ থাকবে তখন সেখানে নানা ক্ষেত্রে অসমতা তৈরি হবে। তারা নবীনদের ওপর নানারকম অত্যাচার করবে। শিক্ষার পরিবেশ কলুষিত করবে। দলের যারা গুরুত্বপূর্ণ পদ পায়নি তারা এখানে ভর্তি হয়ে অপরাজনীতি করবে। হল দখল করবে। এমন পরিবেশের কারণে প্রকৃত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে আসবে না।’