মোঃ রফিক উল্লাহ ।। কৃষক, দিনমজুর এবং নিম্ন আয়ের মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে যা নিয়ে সবসময় বেশি আলোচনা-সমালোচনা হয় তা হল চাউলের মূল্য। চাউলের মূল্য কেজি প্রতি দশ টাকা হতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে পঞ্চাশ-ষাট টাকা হয়েছে। সেটি অত্যন্ত বেশি যা অনেকেরই ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এ নিয়ে লেখালেখি, আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। আমাদের প্রধান উৎপাদিত দ্রব্যই হল ধান, তা হতে চাউল। নিজের দেশের উৎপাদিত ফসলের মূল্য বৃদ্ধিতে আমরা ক্ষণে ক্ষণে হুঁশ ও বেহুঁশ হয়ে পড়ি। এখন এ সকল মানুষের দৈনিক আয় এবং ব্যয়ের হিসেব করা যেতে পারে। দেশে উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার এবং বিদেশের পণ্যের ব্যবহার তা আমরা কিভাবে মূল্যায়ন করব।
আমাদের দেশে নিম্ন, দিনমজুর, নিম্নমধ্যম, মধ্যম, বিত্তশালী ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর বসবাস। তাদের আয় এবং ব্যয়ের হিসেব করলে কী দাঁড়ায়। চাউল ব্যতীত নিত্যপ্রয়োজনীয় আর কোন কোন দ্রব্য আমাদের ব্যবহার করা হয় প্রতিদিন। কৃষক, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের দৈনিক আয় চারশত, পাঁচশত এবং ছয়শত টাকা। এই টাকা দিয়ে তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাদের কষ্টার্জিত টাকা সংসারের কাজে খরচ করে, কোন খাতে কত খরচ করে তা বিশ্লেষন করা হল। তার পূর্বে চাউলের মত দৈনিক ব্যবহার হয় এমন সব পণ্যের হিসেব করা যায়। মোবাইল, ইন্টারনেটের ব্যবহার, ফেইস বুক, ইউটিউব, সাবান, তুথপেস্ট, চা-নাস্তা, পান, বিড়ি, সিগারেট, তৈল, সেইভ, সবজি, কসমেটিকস জাতীয় দ্রব্য, চিপস্, টিভি, ডিস টিভি, ফ্রিজ, আইসক্রিম, চকলেট, লবণ, ঔষধ, পাউডার দুধ, চিনি ও লিপস্টিকসহ আরো অনেক পণ্য। দৈনিক ছাড়াও মাসিক, আনুষ্ঠানিক অর্থাৎ (ঈদ, পুজা, বড়দিন, পহেলা বৈশাখ, গায়ে হলুদ, বৈশাখী পূর্ণিমা, ভালোবাসা দিবস, বিয়ে অনুষ্ঠান) বাৎসরিক ও ঋতুভেদে খরচের পরিমাণ। এ সকল অনুষ্ঠানে ধনী গরিব সকলেই যার যতটুকু সাধ্য আছে সবাই নতুন জামা ও অন্যান্য ব্যবহার্য পণ্য ক্রয় করেন।
এবার হিসেব করা যায় একটি পরিবারে লোকসংখ্যা কতজন থাকতে পারে। কৃষক, দিনমজুরের পরিবারে স্বভাবতই লোক সংখ্যা বেশি। বেশি হিসেব না করে গড়ে কতজন থাকতে পারে তার হিসেব করা যায়। সাধারণতঃ ছেলেমেয়ে দুইজন, স্বামী-স্ত্রী দুইজন, পিতা-মাতা দুই জন। অনেক পরিবারে পিতা মাতা থাকে না। যে পরিবারে পিতা-মাতা নেই সে পরিবারে ছেলেমেয়ে হোক বা অন্যান্য আত্মীয় হোক এক দুইজন থাকে। তবে প্রতি পরিবারে কমে পাঁচজন, বেশিতে ছয়জন অবশ্যই আছে। শহরাঞ্চলে বাসা ভাড়াতো আছেই, ইদানিং গ্রামেও বাসা ভাড়া করে অনেকে বসবাস করেন।
চাউলের মূল্য নিয়ে যেহেতু বেশি অলোচনা হয় এখন হিসেব করে দেখা যাক একটি কৃষক ও দিন মজুর পরিবারে দৈনিক কত কেজি চাউলের প্রয়োজন, তাতে কত টাকা খরচ। দিনমজুর কায়িক পরিশ্রম করে বিধায় খিদে বেশি, ভাত একটু বেশি খায়। যতই পরিশ্রম করে না কেন একজন ব্যক্তি পাঁচশত গ্রামের বেশি চাউলের ভাত খেতে পারে না। পাঁচজন ব্যক্তি দৈনিক আড়াই কেজি চাউলের ভাত খায়। বর্তমান বাজার দরে পঞ্চাশ টাকা করে হলে একশত পঁঁচিশ টাকা। তবে সবাই দুই তিন বেলা নাস্তা করে বিধায় এত চাউল কোন পরিবারে প্রয়োজন হয় না।
এখন দেখা যাক একজন কৃষক ও দিনমজুরের দৈনিক অন্যান্য খরচ কত। বিদেশ হতে আমদানীকৃত পণ্য ব্যবহারে আনন্দ পাওয়া যায়। বিদেশি পণ্যের ব্যবহারে খরচ, মোবাইল গৃহকর্তার একটি, গৃহীনির একটি। ছেলে মেয়ে বড় থাকলে আরো একাধিক। একটি মোবাইলে সবচেয়ে কম খরচ ২০ টাকা, তাহলে দুই মোবাইলে চল্লিশ টাকা, ফেইস বুক, ইউটিউব পরিচালনায় আরো বিশ টাকা সর্ব মোট ৫০টাকা। চা খরচ, দৈনিক কমে চার কাপ চা পান করা হয়, ২০ টাকা, নাস্তা কমে দুই বার ৩০ টাকা, পান কমে পাঁচ (খিলি) টি ২৫ টাকা, বিড়ি সিগারেট কমে ১৫ টাকা।
একজন কৃষক, দিন মজুর তার দৈনিক আয়ের চার ভাগের তিন ভাগ বিদেশী পণ্য ব্যবহারে খরচ করেন। শুধু একটি মাত্র দেশী পণ্য চাউল ক্রয়ে খরচ করেন মাত্র চার ভাগের এক ভাগ। এতে আমাদের এত কষ্ট, একটি লিপস্টিকের মূল্য দশ কেজি চাউলের সমান, মোবাইল, ফেইসবুক, ডিস টিভিসহ আরো অনেক বিদেশী পণ্য অনেক মূল্য দিয়ে ক্রয় করে আনন্দ করেন তার প্রতিবাদ কেউ করে না। শুধু চাউলের মূল্য পাঁচ টাকা বৃদ্ধিতে আমাদের কষ্ট। বিদেশী এই ক্ষতিকারক পণ্য বর্জন করে দেশী পণ্য আরো অধিক মূল্য দিয়ে ক্রয় করে দেশের শ্রমজীবী, কৃষক ও দিন মজুরকে সহায়তা করা আমাদের প্রয়োজন। বিদেশী পণ্যের এত মূল্য সে অনুপাতে আমাদের দেশের চাউলের প্রতি কেজি মূল্য কত হওয়া প্রয়োজন সেটি বিচারের ভার আপনাদের উপর। দেশী পণ্য অধিক মূল্যে ব্যবহার করি, বিদেশী পণ্য বর্জন করি। দেশকে স্বনির্ভর করি।