ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। এর মধ্যে কলকাতায় ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বলে জানাচ্ছে দেশটির শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলো।
পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা এক শিরোনামে উল্লেখ করেছে, দুমড়ে-মুচড়ে ভাসল কলকাতা।
সবাদমাধ্যমটি জানায়, প্রায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা তুমুল ঝড়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ- লন্ডভন্ড হয়ে গেল গোটা কলকাতা। অতিবৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক এলাকা। এই ঝড়ের তীব্রতা স্থায়ী ছিলো প্রায় ৪ ঘন্টারও বেশি।
শহরটিতে এখন পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ দিন ঝড়ের সময়ে রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকায় দেয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক নারী ও তার ছেলের। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে দুই ব্যক্তি।
কলকাতা মেডিকেল কলেজের নতুন ছাত্রাবাসের গেট ভেঙে ও জানালা ভেঙে পড়েছে। এসএসকেএম হাসপাতালের বিভিন্ন ভবনের কাচ ভেঙে গেছে। সেই সব ওয়ার্ডের রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়।
সল্টলেকের অধিকাংশ ওয়ার্ডে গাছ ভেঙে পড়েছে। দত্তাবাদসহ একাধিক জায়গায় কাঁচা ঘর ভেঙে পড়েছে। তবে বিপজ্জনক বাড়ি, নিচু এলাকা থেকে আগেই লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছিল প্রশাসন।
হাওড়ার বহু জায়গায় বাড়ি ভেঙেছে, গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ঝড়ের দাপটে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হিমশিম খেয়েছে দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী ও পুলিশ। বালিসহ বহু এলাকায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। জলোচ্ছ্বাস হাওড়া ফেরিঘাটের সবচেয়ে উঁচু জেটিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শহর জুড়ে উপড়ে পড়েছে তিনশ’র মতো গাছ। বহু জায়গায় বিদ্যুৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্ধকার নেমে আসে বহু এলাকায়। পুরোনো অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, মে মাসে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের নিরিখে এ দিন তৈরি হয়েছে নতুন রেকর্ড। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৪৪.২ মিলিমিটার।
এ দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় পৌরসভা প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘আম্পান এতটা ভয়াবহ হবে ভাবিনি। গোটা শহর লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। তিনশোরও বেশি গাছ, কিছু বিদ্যুৎস্তম্ভ ও গোটা সাতেক বাড়িও ভেঙেছে।’
এদিকে গত রাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, আম্পানে পুরো পশ্চিমবঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্তত ১০-১২ জন মারা গেছে বলে তিনি জানতে পারেন।
তিনি বলেন, কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেল, লাখও ছাড়াতে পারে। কত যে বাড়ি, নদী বাঁধ ভেঙে গিয়েছে, ক্ষেত থেকে সব সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি করোনার চেয়েও রাজ্যের বেশি ক্ষতি করে গেছে বলে মমতা দাবি করেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়াতে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা চান।