বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, সর্বদলীয় জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে ‘গণবিস্ফোরণে’ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো হবে। হয় সরকারকে একটা শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় আসতে বাধ্য করতে হবে। আর তা না হলে যে ধরনের কর্মসূচি অতীতে দিয়ে এ রকম স্বৈরাচারী সরকারকে অপসারণ করা হয়েছে সেই ধরনের উপযুক্ত কর্মসূচি দিতে হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার পরিষদের আয়োজনে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মওদুদ বলেন, যদি আমরা বাঁচতে চাই, যদি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই, যদি দেশে সভ্যতা ফিরিয়ে আনতে চাই, তাহলে আমাদের কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য’ সৃষ্টি করতে হবে। সর্বদলীয় জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে গণবিস্ফোরণের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, আমরা আগেই বলেছি এই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। খুলনা এবং গাজীপুরের নির্বাচনের মাধ্যমে এই কমিশনের মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেছে। আমরা বারবার বলছি আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে। নির্বাচনের ৯০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং এই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, এই কমিশন সরকারের একটি তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এটি নির্লজ্জ নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ বানোয়াট মিথ্যা মামলার ওপর ভিত্তি করে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজকে ৫ মাস হয়ে গেছে তিনি জেলে। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রেখেছে। তারপরও আমরা তাকে মুক্ত করতে পারছি না। দেশের উচ্চতম আদালতের আদেশকে অকার্যকর করতে নিম্ন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাহী বিভাগের কাজ করছে। দেশের মানুষকে বোঝাতে হবে উচ্চতম আদালতের জামিন আদেশ কিভাবে ম্যাজিস্ট্রেট বিলম্ব করে। খালেদা জিয়ার ব্যপারে এরকম হলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা, তাহলে চিন্তা করেন। কোথায় যাবে সাধারণ মানুষ যদি আদালতে সুবিচার না পায়। আমরা চাই আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে। কিন্তু রাজপথ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
১০০টা নিয়োগের মধ্যে ৫৬টি যদি কোটায় যায় তবে থাকে কী?
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দল জড়িত নেই- এমন দাবি করে মওদুদ বলেন, এটা একটা স্বতঃস্ফূর্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ১০০টা সরকারি চাকরির নিয়োগের মধ্যে ৫৬টি যদি কোটায় চলে যায় তাহলে থাকে কী? বাকি যে ৪৪ শতাংশ নিয়োগ পায় তার মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়। প্রধানমন্ত্রী ১১ এপ্রিল সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে। আমরা শুনে তার প্রশংসা করেছিলাম। কিন্তু ২৭ জুন তিনি আবার একই সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন কোটা পদ্ধতি থাকবে। আমরা কিভাবে তার কথা বিশ্বাস করবো? প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাই যে কথা বলেছেন তা রক্ষা করেন।এমনিতেই জনগণের অনেক বিশ্বাস আপনার ওপর থেকে চলে গেছে। এখন আর দেশ-বিদেশের কেউ আপনার কথা বিশ্বাস করেনা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমীন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নিপুন রায় চৌধুরী, জাসাসের শাহরিন ইসলাম শায়লা, কৃষক দলের শাহজাহান সম্রাট, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, আ স ম মোস্তফা কামাল প্রমুখ।