দেশে করোনার বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে দায়িত্ব পালনকারী প্রায় ১০০ জন চিকিৎসক, ৫৭ জন নার্স ও ৫৮ জন পুলিশ প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান সমন্বয়ক ডা. নিরূপম দাশ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘করোনায় সংক্রমিত চিকিৎসকের সংখ্যা ১০০ জনে পৌঁছেছে। এই সংখ্যা যদি এভাবেই বাড়তে থাকে তবে রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য কোনো ডাক্তার থাকবে না।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ঢাকায়। এখানে ৫০ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে ১২ জন, ময়মনসিংহে সাতজন, গাজীপুরের কালিগঞ্জে ছয়জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। বাকিরা অন্যান্য জেলার।’’
করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী কোয়ারেন্টিনে আছেন বলেও তিনি জানান। এদিকে, বাংলাদেশ বেসিক গ্র্যাজুয়েট নার্সেস সোসাইটি জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৫৭ জন নার্স করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। একই তথ্য দিয়ে সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস বলছে, দেশের ৩৪ হাসপাতালে ৫৭ জন নার্স করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কোয়ারেন্টিনে আছেন প্রায় ২৭০ জন। সংগঠনটির মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন ৩১ জন। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কর্মরত আছেন ২৬ জন। তাছাড়া আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা আরো ২৫০ থেকে ৩০০ নার্স কোয়ারেন্টিনে আছেন।
অন্যদিকে, করোনার বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে দায়িত্ব পালনকারী অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তর এবং ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, দেশে ইতিমধ্যে ৫৮ পুলিশ সদস্যের করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৭ জন ডিএমপিতে, ১১ জন গোপালগঞ্জে, ৬ জন নারায়ণগঞ্জে, ৫ জন গাজীপুর মহানগর পুলিশে, ২ জন কিশোরগঞ্জে এবং ১ জন করে ময়মনসিংহ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ, পুলিশ টিঅ্যান্ডআইএম, এপিবিএন ময়মনসিংহ, নৌ পুলিশ ইউনিট ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের সদস্য।
সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছেন এমন ৬৩৩ পুলিশ সদস্যকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত, লকডাউন কার্যকর, রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানো, শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা করা, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়াসহ নানা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পুলিশ সদরদপ্তরের গণমাধ্যম সমন্বয়ক সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশের যেসব সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের পুলিশের স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্র গুলোতে আইইডিসিআর এর নিয়ম অনুসরণ করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ডা. মঈন ছিলেন সিলেটের প্রথম করোনা রোগী। গত ৫ এপ্রিল তার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সহকর্মীদের পরামর্শে নিজ বাসায় কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসা নিতে থাকেন। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে দুদিন পর ৭ এপ্রিল শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হন। সেখানেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরিবারের ইচ্ছায় চিকিৎসার জন্য পরের দিন ৮ এপ্রিল তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়া হয়।