রফিকুল আলম মামুন, বান্দরবান।। রাজ্য উদ্ধারে বীরের সংগে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে এক রাজপুত্রের। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বান্দরবান ৩০০ নং আসনে র্নিবাচনী যুদ্ধে অংশ নেয়া এই বীর হলেন আওয়ামীলীগ থেকে পাঁচ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। অপরজন হলেন বিএনপির সাবেক সাংসদ ও রাজপুত্র সাচিং প্রু জেরী। এদিকে নির্বাচন যতোই ঘনিয়ে আসছে মাঠের লড়াই ততোই জমে উঠেছে। দুই প্রার্থীই চষে বেড়াচ্ছেন পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বিভিন্ন দুর্গম জনপদ।
তবে নির্বাচনী এ লড়াইয়ে জনসংযোগের দিক থেকে বেশ এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের বীর বাহাদুর। টানা ক্ষমতায় থেকে ব্যাপক উন্নয়ন, সহনশীল রাজনীতিক এবং দীর্ঘদিনের জনসম্পৃক্ততাসহ নানা কারণে এই এগিয়ে থাকা বীর বাহাদুরের। সরকারে থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার সুযোগকে বেশ ভালোই কাজে লাগাতে পারছেন বীর বাহাদুর।
আওয়ামীলীগ সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে তিনি জনসংযোগ শেষ করেছেন অতিদূর্গম থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ির বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা। এসব এলাকায় তিনি জাতিধর্ম নির্বিশেষ দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। অসমাপ্ত উন্নয়ন শেষ করতে চাইছেন টানা ষষ্ঠবারের মতো জয়। ভোট চাইছেন জনে জনে।
ভোট চেয়ে বীর বাহাদুর বলেছেন, এবারও জনগন ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে পাহাড়ের সকল অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা হবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমি কারো সাথে আপস করি না। পাহাড়ে কাজের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি আমার। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানোই আমার লক্ষ্য।
এতোকিছু সত্বেও দলের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবর রহমান ও সভাপতি প্রসন্ন কান্তি তঞ্চংগ্যাসহ কিছু নেতা আসন্ন নির্বাচনে বীর বাহাদুর বিরোধী প্রচারনার আশংকা করছেন খোদ আওয়ামীলীগেরই অনেক জেষ্ঠ্য নেতা। এ বিষয়টি কপালে ভাঁজ ফেলেছে আওয়ামী দূর্গে। দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত এই দুই নেতার বীর বাহাদুর বিরোধী তৎপরতার কারণে এবারের নির্বাচনে নৌকার ভোট বাক্সের হিসেবে গড়মিলের আশংকা রয়েছে। শেষ সময়ে এসে দলীয় প্রচারের কাজে এই দুই নেতা সমপৃক্ত হতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়নি জেলা আওয়ামীলীগ।
অপরদিকে আওয়ামীলীগের বন্ধু খ্যাত পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতিও (জেএসএস) এবার বীর বাহাদুরের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জেএসএস নেতাকর্মীদের অহেতুক হয়রানী হামলা-মামলার প্রতিশোধ নিতে এবার প্রকাশ্যেই নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থানের ঘোষনা দিয়েছে দলটির অনেক নেতা। সম্প্রতি শান্তি চুক্তির বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এমনই ইংগিত দিয়েছেন জেএসএস নেতারা।
সব মিলিয়ে এবারের আওয়ামীলীগে ভোটের হিসেবে বেশ গড়মিল হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
অপর দিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা, সরকারের নানা দমন পীড়ন, আর্থিক অনটনসহ নানা কারণে জনগন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন বিএনপি প্রার্থী সাবেক সাংসদ ও তৎতকালীন স্থানীয় সরকার পরিষদ চেয়ারম্যান সাচিং প্রু। নির্বাচন নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পাহাড়ের এই নেতাও।
জেলা বিএনপিতে রয়েছে দীর্ঘদিনের দলীয় কোন্দল। সাবেক সাংসদ রাজপুত্র বধু ও জেলা বিএনপির সভাপতি মাম্যাচিং এর সাথে দীর্ঘদিনের দলীয় টানাপোড়েন সাচিং প্রু। এই টানাপোড়েনের কারণেই বারবার বলী হচ্ছে বিএনপি। রাজপরিবারের এই দুই সদস্যের দম্ভ আত্মঅহংকারের বলি জেলার সাধারণ নেতাকর্মীরাও।
প্রতিবারের মতো এবারো নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন পেতে জেরী- মাম্যাচিং আলাদাভাবে তৎপরতা চালিয়েছেন। অনেক রশি টানাটানির পর শেষ পর্যন্ত জেরীও পান ধানের শীষের টিকেট। কিন্তু তাতে এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ আরো চরমে উঠে। নানা কারণ দেখিয়ে জেরী মাম্যাচিং একে অপরকে দোষারোপ করছেন।
এদিকে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সম্প্রতি মা ম্যা চিং সাংবাদিক সম্মেলন করে দলীয় প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নিজের অনুসারীদেরও জেরীর পক্ষে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। এ খবরে কিছুটা স্বস্তিতে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরা।
সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন সাচিংপ্র জেরীও। তিনি এলাকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার কথা বলেছেন। বলেছেন নির্বাচনে জয়ী হলে পার্বত্য এলাকার পিছিয়ে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের কথা এবং সম্পদের সুষ্ঠু বন্টনের কথাও।
স্থানীয় সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, পাহাড়ের রাজনৈতিক সংগঠন জেএসএস হাতছাড়া হওয়া, বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবর রহমান ও সভাপতি প্রসন্ন কান্তির বিরোধিতার সাথে বিএনপির জেরী ও মাম্যাচিং এক হয়ে নির্বাচনে লড়ার ফলে এবার আওয়ামীলীগের প্রার্থী বীর বাহাদুরকে কঠিন পরীক্ষায় অবর্তীণ হতে হবে।
অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী সাচিং প্রু এই আওয়ামীলীগের এসব দূর্বলতার সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বান্দরবানের র্দীঘদিনের ক্ষমতার পালাবদলও হতে পারে বলে ধারনা স্থানীয়দের।
এবার বান্দরবান আসনের সাতটি উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৬ হাজার ৫শত ৫৩ জন।