যুক্তরাজ্যের লাখ লাখ মানুষের জন্য প্রযোজ্য চতুর্থ স্তরের বা সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিধিনিষেধ আরোপের জন্য দায়ী করা হচ্ছে করোনাভাইরাসের নতুন একটি বৈশিষ্ট্য বা ভ্যারিয়ান্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়াকে।
এছাড়া ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসে ক্রিসমাসে মানুষের মেলামেশায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও আসছে ঠিক একই কারণে। ব্রিটিশ সরকারের সংক্রমণ বিষয়ক উপদেষ্টারাও মোটামুটি নিশ্চিত যে এটা করোনাভাইরাসের অন্য ভ্যারিয়ান্টের তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ভাইরাসটির নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রাথমিক একটি বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে এবং এতে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন এসেছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটির মাধ্যমেই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। N501Y নামে চিহ্নিত একটি পরিবর্তনে স্পাইকের ওই জায়গায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর এসেছে, যা “রিসেপ্টর-বাইন্ডিং ডোমেইন” নামে পরিচিত। এর মাধ্যমেই ভাইরাসের স্পাইক মানুষের ত্বকের সঙ্গে প্রথম সংযোগ ঘটায়। যেকোন ধরণের পরিবর্তন, যা এই ভাইরাসটিকে শরীরে সহজে প্রবেশ করতে সহায়তা করে, তা ভাইরাসটির জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।
অন্য পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে ভাইরাসের H69/V70 অংশটি বাদ পড়া। এই প্রক্রিয়ায় স্পাইকের একটি ছোট অংশ বাদ পড়ে। তবে এটি এর আগেও অনেকবার হয়েছে। বিশেষ করে মিংক নামে প্রাণীদের দেহে সংক্রমণের ক্ষেত্রে। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের অধ্যাপক রাভি গুপ্তার গবেষণায় তিনি বলেছেন যে ল্যাবে পরীক্ষার ফলাফল বলছে, এই পরিবর্তন সংক্রমণের হার দুই গুণ বাড়িয়ে দেয়। এই দলের আরেকটি গবেষণা বলছে, এই পরিবর্তনের কারণে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার পর যারা সেরে ওঠেন তাদের রক্তে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তার ভাইরাসটিকে আক্রমণ করার ক্ষমতা কমে যায়।
মূলত তিনটি কারণে করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়ান্টটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে:
১. এটি ভাইরাসের অন্য সংস্করণগুলোকে প্রতিস্থাপিত করছে
২. এটির বিভাজন বা রূপান্তর ভাইরাসের কিছু অংশে পরিবর্তন আনে, যা গুরুত্বপূর্ণ
৩. এসব বিভাজনের মধ্যে বেশ কিছু ল্যাবে পরীক্ষার পর দেখা গেছে যে এগুলো মানুষের দেহের কোষকে সংক্রমিত করার ভাইরাসের যে সক্ষমতা তা বাড়ায় এবং ভাইরাসটিকে সহজে ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা দেয়।
জনমনে এখন একটাই প্রশ্ন। নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাসের ক্ষেত্রে কি ভ্যাকসিন কাজ করবে? এ প্রশ্নের উত্তরে আপাতত অন্তত হ্যাঁ বলাই যায়। এখন পর্যন্ত যে তিনটি ভ্যাকসিন এসেছে, তাদের সবগুলোই বর্তমানে থাকা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আর এ কারণেই এই প্রশ্নটি সামনে এসেছে।
ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ভাইরাসের বিভিন্ন অংশকে আক্রমণ করতে উদ্দীপ্ত করে। আর তাই এর কিছু অংশ যদি পরিবর্তিত হয়েও থাকে, তারপরও ভ্যাকসিনটির ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কাজ করার কথা। কিন্তু যদি আরও বেশি পরিবর্তন বা বিভাজন ঘটতে দেয়া হয়, তাহলে তখন দুঃশ্চিন্তা করতেই হবে। ভাইরাসটির নতুন বৈশিষ্ট্য এটা জানান দিচ্ছে যে, এটি যতই মানুষকে আক্রান্ত করছে, ততই খাপ খাইয়ে নিচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর অধ্যাপক ডেভিড রবার্টসন শুক্রবার এক উপস্থাপনায় উপসংহার টানেন এই বলে: “এই ভাইরাসটি সম্ভবত নিজেকে এমনভাবে পরিবর্তন করবে, যাতে সে ভ্যাকসিন এড়াতে পারে।” এটা আমাদেরকে অনেকটা ফ্লু’র বিরুদ্ধে যুদ্ধের জায়গাটিতে নিয়ে যাবে। অর্থাৎ নিয়মিতভাবে ভ্যাকসিনের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সৌভাগ্যবশত বর্তমানে যেসব ভ্যাকসিন রয়েছে, সেগুলোতে সহজেই পরিবর্তন আনা সম্ভব।