চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের জেরে হংকংয়ের পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর অবরুদ্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা, ইট-পাথর ছুড়ছে। আর পুলিশদের কোলোয়ান নামের রাস্তা থেকে হঠাতে শতাধিক বিক্ষোভকারীও তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। হংকংয়ের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ও চীনের তিয়ানআনমেন স্কয়ার থেকে নেওয়া শিক্ষা বিষয়ে সম্প্রতি একদল পর্যবেক্ষক আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
গত সোমবার সকালে আন্দোলনকারীরা অবরুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। ওই সময় কয়েকশ গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারী পেট্রলবোমা ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে পুলিশের অভিযানের জন্য অপেক্ষা করছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।
রাতে সংঘর্ষের সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এর আগে গত রবিবার বিকেলে আন্দোলনকারীদের নিক্ষিপ্ত তীরে এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। রাতের সংঘর্ষে ৩৮ জন আহত হয়েছেন বলে নগর হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পুলিশের জলকামান থেকে ছিটানো গরম পানি গায়ে পড়ার পর কয়েকজন আন্দোলনকারীর শরীর পুড়ে যেতে দেখেছেন রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক। রাসায়নিক ব্যবহারজনিত কারণে এমনটি ঘটেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান এড়াতে আন্দোলনকারীরা গ্যাস-মুখোশ পরে ও সামনে ছাতা ধরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে পুলিশ বহু আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে সরকারি গণমাধ্যম আরটিএইচকে জানিয়েছে।
প্রায় ছয় মাস ধরে চলা হংকংয়ের অস্থিরতায় প্রথমবারের মতো তাজা গুলি ব্যবহার করা হতে পারে বলে সতর্ক করেছে পুলিশ। ‘দাঙ্গাকারীরা’ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার অব্যাহত রাখলে এমনটি করা হবে বলে জানিয়েছে তারা। সিএনএনকে পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমরা কাউকে পেছনে ফেলে যেতে চাই না। আশা করছি পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়া আমাদের বন্ধুদের রক্ষা করতে পারব। আমি আটকে পড়াদের বলতে চাই, তারা একা নয়। তারা যেন আশাহত না হয়, তাই বলছি আমরা।’ এদিকে হংকং প্রশাসক ক্যারি লাম তীরবিদ্ধ পুলিশ অফিসারকে দেখতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের পুলিশকে মান্য করতে আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বলেন, ‘পলিটেকনিকের ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীদের আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভেতর থেকে ছোড়া তীরেই আহত হন ওই পুলিশ সদস্য।
তবে পুলিশের মুখপাত্র লুইস লাউ এক ফেইসবুক পোস্টে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তারা যদি পুলিশের দিকে পেট্রলবোমা, তীরের মতো বিপজ্জনক অস্ত্র ছুড়ে মারা অব্যাহত রাখে তাহলে গুলিবর্ষণ ছাড়া পুলিশের জন্য আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।’
হংকংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পলিটেকনিকেই প্রথম আন্দোলন শুরু হয়নি। গত সপ্তাহে চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও আন্দোলন হয়েছিল। সেখানে চার দিন ধরে আন্দোলন চলে এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই আন্দোলন গত শুক্রবার শেষ হয়। কয়েক মাস ধরে চলা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের ফলে হংকংয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে।