জগদ্বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং বুধবার (১৪ মার্চ) ৭৬ বছর বয়সে পরলোকগমন করেছেন। গুণী এই বিজ্ঞানী পৃথিবীতে রেখে গেছেন তাঁর সৃষ্টিকর্ম এবং সেরা কিছু বিখ্যাত উক্তি। সংবাদ সংস্থা এএফপি অবলম্বনে নিচে তাঁর আলোচিত কিছু উক্তি তুলে ধরা হলো—
১৯৮৮ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’-এ মহাবিশ্বের অস্তিত্বের বিষয়ে স্টিফেন হকিং বলেন, ‘উত্তর খুঁজলে দেখা যাবে, এই অস্তিত্ব মানব অস্তিত্বেরই চূড়ান্ত বিজয়। তখনই একমাত্র ঈশ্বরের মনকে জানব আমরা।’
নিজের অসুস্থতা নিয়ে বহুবার কথা বলেছেন তিনি। এসব কথায় উঠে এসেছে তাঁর জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। ২০০৪ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে স্টিফেন বলেন, ‘২১ বছর বয়সেই আমার প্রত্যাশা কমে শূন্যে পৌঁছায়। এরপর থেকে সবকিছু বোনাসে রূপ নিয়েছে।’
জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে হকিংয়ের মন্তব্য, ‘আমার লক্ষ্য অতি সাধারণ। মহাবিশ্বের একটি পরিপূর্ণ বোঝাপড়াই আমার লক্ষ্য। এর বিদ্যমান প্রকরণ ও এর কারণ এবং এর অস্তিত্বই এখানে মুখ্য প্রশ্ন।’ ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত জন বসলোর লেখা স্টিফেন হকিং’স ইউনিভার্স বইয়ে তাঁর এ মন্তব্য পাওয়া যায়।
আর ২০১০ সালে প্রকাশিত তাঁর বই ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’ বইয়ে হকিং ঈশ্বর সম্পর্কে বলছেন, ‘মহাবিশ্বকে সচল রাখার জন্য কোনো নিয়ন্ত্রক ভূমিকা নিতে ঈশ্বরকে ডাকার প্রয়োজনীয়তা নেই।’
নিজের তারকা খ্যাতি নিয়ে ইসরায়েলের এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার খ্যাতির বিপত্তিটি হচ্ছে, পরিচয় গোপন রেখে বিশ্বের কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। পরচুলা কিংবা কালো চশমা পরাটা আমার জন্য যথেষ্ট নয়। হুইলচেয়ারই সব ফাঁস করে দেয়।’
ডিসকভারি চ্যানেলের ‘দ্য ইউনিভার্স উইথ স্টিফেন হকিং’ অনুষ্ঠানে মানুষের অসম্পূর্ণতার প্রসঙ্গে হকিং বলেন, ‘অসম্পূর্ণতা ছাড়া তোমার, আমার কারও অস্তিত্বই থাকত না।’
ভিন্ন গ্রহের প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, একটি বিপর্যয় হবে। সম্ভবত বহিরাগতরা হবে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রসর। এই গ্রহেই একই প্রজাতির হলেও অগ্রসর গোষ্ঠীর সঙ্গে পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীর সাক্ষাতের ইতিহাসটা খুব একটা সুখকর হয়নি। আমি মনে করি, সতর্ক হওয়া উচিত আমাদের।’ ২০০৪ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে ‘ন্যাকেড সায়েন্স: এলিয়েন কনট্যাক্ট’ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
হালের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়েও সতর্ক করেছেন তিনি। ২০১৪ সালে বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টিফেন বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আদিম রূপ ইতিমধ্যেই আমাদের হাতে আছে, যা খুব প্রয়োজনীয় বলে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তবে আমি মনে করি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ মানবজাতির অস্তিত্বের জন্যই হুমকির কারণ হবে।’
সর্বশেষ স্মরণ করা যেতে পারে মৃত্যু বিষয়ে তাঁর উক্তিটিকে। ২০১১ সালে গার্ডিয়ানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মৃত্যু নিয়ে আমি ভীত নই। কিন্তু মরার জন্য তাড়াও নেই আমার। তার আগে করার মতো অনেক কিছু আছে আমার।’