রফিকুল ইসলাম, লামা,বান্দরবান।। লামায় ২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় শিক্ষক-শ্রেণীকক্ষ-আসবাবপত্রের সংকট এবং আসন সীমিত অজুহাতে পিএসসি পাস ২ হাজার ৭৫৬ জনের মধ্যে ৭১৮ জন শিক্ষার্থীর ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের ভর্তি করাতে না পেরে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের সহায়তা কামনা করেছেন।
লামা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এই বছর উপজেলার ১০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ী প্রতিষ্ঠান হতে পিএসসি পরীক্ষায় ২ হাজার ৮৪৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ২ হাজার ৭৫৬ জন ছেলে-মেয়ে কৃতকার্য হয়। এদের মধ্যে পিএসসি ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় কৃতকার্য ৭১৮ জন ছেলে মেয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে আসন শূন্য না থাকায় ভর্তি হতে পারছেনা বলে জানান অভিভাবকরা।
৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হতে আসা সুইচিওয়াং মার্মা, সাকিল হোসেন ও আকাশ সহ অনেকে জানায়, আমরা পিএসসি পরীক্ষায় পাস করলেও ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারছিনা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যতীন্দ্র মোহন মন্ডল বলেন, পিএসসিতে উত্তির্ণ ছেলে-মেয়েদের ভর্তি না করানোর সুযোগ নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, লামা উপজেলায় ২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির কার্যক্রম চলছে। এ বছর সমগ্র উপজেলায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯টি শিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৬৫৫ সেট ও ৫টি মাদ্রাসায় ৫৯৮ সেট বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। পিএসসি থেকে উত্তির্ণ শতভাগ শিক্ষার্থীদের বিতরণের জন্য বই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ জানায়, আমাদের শিক্ষক, শ্রেণীকক্ষ, আসবাবপত্র না থাকায় ধারন ক্ষমতার বাহিরে শিক্ষার্থী ভর্তি করার সুযোগ নেই।
সরজমিনে লামা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষায় ৩০০ জন অংশ নেয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীথি তঞ্চগ্যা বলেন, আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর হতে ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি পেয়েছি।
এত স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করলে বাকী শিক্ষার্থী কোথায় যাবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষক ও আসবাবপত্র সংকট রয়েছে। উপজেলার আরো কয়েকটি বিদ্যালয়ে ক্যাচমেন্ট এলাকার সকল শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোগান্তির শিকার অভিভাবকরা বলেন, পিএসসি পাস করার পরেও আমাদের ছেলে-মেয়েরা কেন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারছেনা। এছাড়া পিএসসিতে কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষার যৌক্তিকতা কি? উপজেলার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করলেও কিছু প্রতিষ্ঠান সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ৫০ থেকে ৬০ জন ছেলে-মেয়ের অধিক ভর্তি করবেনা বলে জানিয়েছে। তাহলে বাকী শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবে?
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা শতভাগ বই বিতরণ করেছি। কিছু কিছু বিদ্যালয় কম শিক্ষার্থী ভর্তি করানো কারণ কি তা জানা হবে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সায়েদ ইকবাল বলেন, শিক্ষা থেকে বাদ পড়ার সুযোগ নেই। সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দ্রুত বিষয়টি সমাধানে বসা হবে।