নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ৩ নভেম্বর শুক্রবার রাঙামাটির রাজবন বিহারে দু’দিন ব্যাপী ৪৪তম কঠিন চীবর দানোৎসব শেষ হয়েছে। বিহারের নতুন মাঠে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী পূণ্যার্থীদের উদ্দেশ্যে ধর্ম দেশনা দেন রাজ বিহারের আবাসিক ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। পঞ্চশীল প্রার্থনা দেন রাঙামাটি রাজ বন বিহারের সিনিয়র ভিক্ষু জ্ঞান প্রিয় মহাস্থবির।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, রাজ বন বিহার পরিচালনা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি গৌতম দেওয়ান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে দেশ ও বিশ্বের মঙ্গল কামনা করে মানপত্র পাঠ করেন জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল রিদওয়ান ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সাবেক উপমন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ান, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েন, রাজ কুমার ত্রিভূবন আর্যদেব রায়, রাজ কুমারী আয়ত্রী রায়সহ তিন পার্বত্য জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও ভারত ও জাপান থেকে প্রায় লক্ষাধিক বৌদ্ধ পূণ্যার্থী সমবেত হন।
প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় মহাপূর্নবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সুতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়ে থাকে বলে একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়। এ পদ্ধতিতে দান করলে কায়িক-বাচনিক এবং মানসিক পরিশ্রম অধিকতর ফলদায়ক হয় বলে বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। তাই প্রবর্তিত ঐতিহাসিক নিয়ম অনুসারে এখানে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ চরকায় তূলা থেকে সূতা বের করে বেইনের (কোমর তাঁত) মাধ্যমে সেই সুতা দিয়ে কাপড় বুনন ও রং করে চীবর হিসেবে দান করে থাকেন। এ জন্য এ দানকে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ১৯৭৭ সাল থেকে রাঙামাটির রাজ বন বিহার এ অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়ে আসছে।