বান্দরবান রাজার মাঠে ‘জবরদখলের’ উন্নয়ন: বোমাং রাজার ‘না’

বান্দরবান শহরের রাজার মাঠে বিনা অনুমতিতে স্থায়ী মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করে জেলা পরিষদ। ছবিটি তোলা হয়েছে ২৮ এপ্রিল ২০২৪

বান্দরবান শহরের প্রাণকেন্দ্রে বোমাং রাজার মালিকানাধীন একমাত্র খোলা মাঠটিতে ‘জবরদখলের’ উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন রাজা। এ ব্যাপারে আইনী সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি চিঠিও দিয়েছেন তিনি। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পুলিশ সুপার এবং সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) ২৯ এপ্রিল স্বাক্ষরিত চিঠিটির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল দুপুরে শহরের রাজার মাঠের উত্তর-পূর্ব কোণায় পুরাতন অস্থায়ী মঞ্চের সামনে একদল শ্রমিক মাটি খুঁড়ছেন। মাঠের সীমানা থেকে প্রায় ২৫-৩০ ফুট ভেতরের দিকে প্রায় ৮-১০ ফুট ব্যাসের গর্তের গভীরতাও ৫/৬ ফুটের কম নয়। জানতে চাইলে শ্রমিকরা বলেন, এটি ঠিকাদার শয়ন দাশ-এর কাজ। এখানে পাকা পিলার দিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হবে।

যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদার শয়ন দাশ প্রথমে জানান, এখানে পাকা ভিত্তি (ফাউন্ডেশন) দিয়ে মঞ্চ করা হবে। পরে আবার বলেন, আগের যে মঞ্চ আছে ওটাকে একটু বড় করা হচ্ছে। মঞ্চ তৈরিতে জমির মালিকের (রাজার) অনুমতি আছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা জেলা পরিষদের প্রকল্প। বান্দরবানের সাংসদ বীর বাহাদুর উশৈসিং এটির ডিজাইন পছন্দ করে দিয়েছেন। মালিকের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

মঞ্চের ফাউন্ডেশনের জন্য খোঁড়া গর্ত।

২৯ এপ্রিল বোমাং রাজার অফিসের প্রধান সহকারি অংজাই খেয়াং এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মাঠটিতে কেউ কোনো নির্মাণ কাজের জন্য রাজার অনুমতি নেয়নি। এ বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা নেই। এখানে কেউ কোনো নির্মাণ কাজ করে করে থাকলে সেটা অবৈধ। সেদিনই নির্মাণ কাজ বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে চিঠি দেন বোমাং রাজা উ চ প্রু।

মঞ্চ নির্মাণকে ‘জবরদখল’ উল্লেখ করে বোমাং রাজার নামীয় খতিয়ানভুক্ত জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে জেলা প্রশাসকের সহায়তা চান বোমাং রাজা।

মঞ্চ নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে বোমাং রাজার চিঠি

জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়াউর রহমান ৩০ এপ্রিল সাংবাদিকদের জানান, মাঠে আগের একটা মঞ্চ আছে। সেটাকে সামান্য সংস্কার করা হচ্ছে। এতে ৩০ লাখ টাকার টেন্ডার করা হয়েছে। মাঠের মালিকের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাতে অনুমতি নিতে হবে, এমনটা আমার জানা ছিলো না।

মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা করেন, এমন বেশ কয়েকজন স্থানীয় তরুণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মাঠটিতে পিলার দিয়ে এত বড় মঞ্চ তৈরি করা হলে মাঠের সৌন্দর্য এবং ব্যবহার-উপযোগিতা নষ্ট হয়ে যাবে। মাঠটি এলাকার একমাত্র উন্মুক্ত স্থান। এখানে কোনো পাকা স্থাপনা বা জবরদখল একেবারেই কাম্য নয়।

বোমাং রাজ পরিবারের সদস্য এবং বান্দরবান পৌরসভার ৫ নাম্বার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর থুইসিংপ্রু লুবু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মঞ্চ তৈরির ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্ট দেন। সেই পোস্টে এলাকার অনেক বাসিন্দা মঞ্চ নির্মাণের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেবার দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বান্দরবান সফরকালে রাজার মাঠে আয়োজিত জনসভায় ব্যবহারের জন্য স্টিলের পাইপ ও টিনের ছাউনি দিয়ে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। জনসভা শেষ হবার পর মঞ্চটি আর অপসারণ করা হয়নি। মাঠে সারা বছর সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার আয়োজকরা বেশিরভাগ সময়ই নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী আলাদা অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করেন। আগের মঞ্চটি মাঠের এক কোণায় তৈরি হওয়ায় সে সময় আর কোনো আপত্তি আসেনি।

ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখল, গাড়ি পার্কিংসহ নানা উৎপাতে জেলা শহরের একমাত্র উন্মুক্ত মাঠটির পরিবেশ এমনিতেই হুমকির মুখে। এর মধ্যে পাকা মঞ্চ তৈরির উদ্যোগ মাঠটির পরিবেশকে আরো ক্ষতির মুখে ঠেলে দেবে বলে মনে করেন এলাকার বাসিন্দারা।

শেয়ার করুন