বান্দরবানের রাজবিলা ইউনিয়নের বাজারপাড়ায় মঙ্গলবার ভোরে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৩ জন।
এরা সবাই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ‘এম এন লারমা’ বা ‘সংস্কার’ গ্রুপের সদস্য। নিহতরা হলেন- দলটির বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যা (৫৫), কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি প্রগতি চাকমা ওরফে প্রদীপ (৬৫), বিমল কান্তি চাকমা ওরফে বিধু বাবু (৬০), কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ডেভিড মারমা (৫৫), জয় ত্রিপুরা (৪০) ও জিতেন ত্রিপুরা (৪২)। এর মধ্যে রতন তঞ্চঙ্গ্যা ছাড়া বাকি সবার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলায়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে বাঘমারা বাজার পাড়ায় রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে খাবারের আয়োজনে উপস্থিত হন দলের অন্য সদস্যরা। রান্না চলাকালে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। এ সময় তারা প্রায় ১০-১৫ মিনিট ধরে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ৬ জন।
আহত হন রাজবিলা ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য শৈএনু মারমার মেয়ে হ্লাওয়াংসিং মারমা (২৫), জেএসএস (সংস্কার) দলের সদস্য খাগড়াছড়ির রামগড়ের বাসিন্দা বিদ্যুৎ চাকমা (৪০) ও দীঘিনালার বাসিন্দা নিহার চাকমা (৩৪)।
এর মধ্যে বিদ্যুৎ চাকমা ও নিহার চাকমাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
আহত বিদ্যুৎ চাকমা জানান, তারা গত মে মাসে খাগড়াছড়ি থেকে বান্দরবানের বাঘমারায় এসে একটি অফিস ভাড়া নেন। সেখানেই তারা থাকতেন। তাদের খাওয়াদাওয়া চলতো বাজারপাড়ায় জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে। মঙ্গলবার সকালে রান্না চলাকালে জেএসএস-সন্তু লারমা গ্রুপের সদস্যরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে।
এ সময় তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সশস্ত্র দলটি রাজেন্দ্রপাড়ায় অবস্থান করছিলো বলে জানা গেছে। সশস্ত্র সদস্যদের অনুপস্থিতির সুযোগে জেএসএস-সন্তু লারমা গ্রুপের ক্যাডাররা তাদের ওপর হামলা চালায়।
পুলিশ সুপার জেরিন আক্তার জানান, সন্ত্রাসীরা ব্রাশফায়ার করে ৬ জনকে হত্যা করেছে। ৩ জনকে আহত অবস্থায় আমরা বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। আমরা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছি।
প্রসঙ্গত, আঞ্চলিক রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির দখল নিতে সন্তু লারমা সমর্থিত জনসংহতি সমিতির মূল দল জেএসএস (সন্তু লারমা), জেএসএস (সংস্কার) ও মগ লিবারেশন পার্টি (এনএলপি)’র ত্রিমুখী বিরোধে বান্দরবানের রাজবিলা, বাঘমারা, হাংসামা, নোয়াপতং, কুহালংসহ আশপাশের এলাকা থেকে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জেলা সদরে বসবাস করছেন। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীও রয়েছেন।